শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ডাক্তার ছাড়াই মাসে ৩০ সিজার ৫০ অপারেশন হয় যেই হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০২২, ৩:২৯ পিএম

ভুল চিকিৎসায় গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানা এলাকায় এক প্রসূতি নারীর মৃত্যুর ঘটনায় 'জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার' নামের এক বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বন্যা আক্তারসহ মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

র‍্যাব বলছে, গ্রেপ্তার বন্যা আক্তার ওই হাসপাতালের অন্যতম অংশীদার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার কোন নার্সিং ডিগ্রী নেই। এই হাসপাতালে নিয়মিত কোন ডাক্তার না থাকলেও গড়ে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০টি সিজারিয়ান অপারেশনসহ প্রায় ৫০টির অধিক বিভিন্ন অপারেশন সম্পন্ন করা হতো। মেয়াদোত্তীর্ণ কাগজে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছিল হাসপাতালটি। ওটির জন্য রোগী ভেদে বিভিন্ন প্যাকেজে ১০-১৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হতো। হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারটির লাইসেন্সের মেয়াদ ৩০ জুন ২০২১ তারিখে শেষ হয়েছে।


গাজীপুরের কালীগঞ্জ এলাকায় এক প্রসূতি নারীর মৃত্যুর চাঞ্চল্যকর ঘটনায় 'জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারে' সিজারিয়ানের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দেন এক মা।

এ সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে রক্ত দেয়ার প্রয়োজন পড়ে শিরিন বেগম (৩২) নামে ওই মায়ের। তার রক্তের গ্রুপ এবি পজেটিভ

এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে ওই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- হাসপাতালের পরিচালক বন্যা আক্তার (৩১), মো. আশিকুর রহমান (২৫), সংগিতা তেরেজা কস্তা (৩৩), মেরী গমেজ (৪০), সীমা আক্তার (৩৪) ও শামীমা আক্তার (৩২)।


এ সময় ভিকটিমের চিকিৎসা সংক্রান্ত ও হাসপাতাল পরিচালনার মেয়াদ উত্তীর্ণ নথিপত্র উদ্ধার করা হয়।


বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।


সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব জানায়, গত ২১ আগস্ট সকালে গাজীপুরের কালীগঞ্জের বাসীন্দা ভিকটিম শিরিন বেগমের (৩২) প্রসব বেদনা উঠলে পূর্ব পরিচিত 'জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের' ব্যবস্থাপনা পরিচালক বন্যা আক্তারের মাধ্যমে ওই হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য ভর্তি হয়।


খন্দকার মঈন বলেন, পরবর্তীতে ওটি বয় আশিকের তত্ত্বাবধানে রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা ও আল্টাসনোগ্রাম করে সিজারের জন্য রোগীকে ওটিতে নেয়া হয়। ডাক্তার মাসুদ গাইনোকলজিস্ট না হয়েও সে রোগীর সিজার করেন।


র‍্যাব আরও জানায়, ওটি শেষে ব্লিডিং হওয়ায় মাসুদের পরামর্শে আশিক এবং বন্যা রোগীর পরিবারকে এবি পজেটিভ রক্ত সংগ্রহের কথা বলেন। এর প্রেক্ষিতে প্রথমে ভিকটিমের ভাই ও ননদের ছেলের এবি পজেটিভ গ্রুপের রক্ত হওয়ায় তাদের কাছে রক্ত সংগ্রহ করার ব্যবস্থা হয়।

 

র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, প্রথমে ভিকটিমের ভাইয়ের শরীর থেকে এক ব্যাগ রক্ত নিয়ে রোগীর শরীরে পুশ করা হয়। আরো এক ব্যাগ রক্ত নিতে ননদের ছেলেকে বেডে শোয়ানো হয়। এরই মধ্যেই হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সরা ভিকটিমের শরীরে বি পজেটিভ গ্রুপের রক্ত পুশ করে।


কমান্ডার খন্দকার মঈন বলেন, ভিকটিমের এবি পজেটিভ গ্রুপের রক্তের পরিবর্তে বি পজেটিভ রক্ত পুশ করায় রোগীর খিচুনি উঠলে বিষেষজ্ঞ ডাক্তারের অনুপস্থিতে আশিকের তত্ত্বাবধানে রোগীর চিকিৎসা চলতে থাকে। একপর্যায়ে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যার দিকে রোগীকে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেয়। ভিকটিমের পরিবার রোগীকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলে অবস্থার আরো অবনতি হলে উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।


গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, 'জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ নিয়মিত কোন ডাক্তার ছিলো না। অথচ সেখানে গড়ে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০টি সিজারিয়ান অপারেশনসহ প্রায় ৫০টির অধিক বিভিন্ন অপারেশন সম্পন্ন করা হতো। মেয়াদোত্তীর্ণ কাগজে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছিল হাসপাতালটি। ওটির জন্য রোগী ভেদে বিভিন্ন প্যাকেজে ১০-১৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হতো।

 

র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, নিয়মিত কোন ডাক্তার ছিলো না। অথচ সেখানে গড়ে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০টি সিজারিয়ান অপারেশনসহ প্রায় ৫০টির অধিক বিভিন্ন অপারেশন সম্পন্ন করা হতো। মেয়াদোত্তীর্ণ কাগজে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছিল হাসপাতালটি। ওটির জন্য রোগী ভেদে বিভিন্ন প্যাকেজে ১০-১৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হতো।

 

গ্রেপ্তার বন্যা আক্তার ওই হাসপাতালের অন্যতম অংশীদার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার কোন নার্সিং ডিগ্রী নেই। তবে সে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ৭ বছর নার্সিং ও আড়াই বছর ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছিলেন। বর্তমানে হাসপাতালটির মালিক তিনজন বলে জানা যায়।


খন্দকার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার আশিক এসএসসি পাস করে ২০১৬ সালে ম্যাটস থেকে ৩ বছরের ডিএমএফ কোর্স পাস করে। হাসপাতালে ২০ হাজার টাকা মাসিক বেতনে ওটি বয় ও ডক্টরের সহকারী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন তিনি। ঘটনার দিন আশিক ডা. মাসুদের সহকারী হিসেবে ওটিতে উপস্থিত ছিলেন। তবে সেখানের নার্স ও ভিকটিম পরিবার তাকে ডাক্তার হিসেবে জানত। রোগী তদারকি, ডাক্তারদের সঙ্গে সমন্বয় রাখা, বিভিন্ন ধরণের টেস্ট করা ও ডাক্তারদের পক্ষে কাগজপত্রে ভুয়া স্বাক্ষর করতেন তিনি।


তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার সংগিতা তেরেজা কস্তা এসএসসি পাশ ও ওই হাসপাতালে সিনিয়র নার্স হিসেবে কর্মরত। মেরী গমেজ এসএসসি পাশ ও জুনিয়র নার্স, সীমা আক্তার এসএসসি পাশ ও নার্স, শামীমা আক্তার এসএসসি পাশ ও হাসপাতালেরএকজন রিসিপশনার হিসেবে কর্মরত।

 

হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারটির ট্রেড লাইসেন্স এর মেয়াদ ৩০ জুন ২০২২ তারিখে শেষ হলেও তারা আর নবায়ন করেনি বলেও জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা৷

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন