বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

প্রাচীন দলটি কি জনআস্থা হারিয়েছে?

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে বলেছেন, সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে যা যা করা দরকার তা করার জন্য ভারতকে অনুরোধ করেছেন। তার এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সরকারি দল ও মহলের যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় টিকে থাকার বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া সরকারের অন্যান্য মন্ত্রী ও নেতাদের বক্তব্যে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নানা কথা উঠে এসেছে। এ ধরনের কথা তখনই আসে, যখন ক্ষমতা হারানোর ভয় কাজ করে। আমাদের দেশে যারাই ক্ষমতায় থাকেন, ক্ষমতার মেয়াদের শেষের দিকে মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের মুখ থেকে নানা অসংলগ্ন কথা-বার্তা বের হওয়ার নজির রয়েছে। এ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। বর্তমান সরকারের কট্টর সমর্থক এক সাংবাদিক আলাপ প্রসঙ্গে এক পর্যায়ে বললেন, আওয়ামী লীগ হয়তো ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তবে বিএনপিও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। তিনি এ কথাও বললেন, দুই-তিন সপ্তাহ পর আরও পরিষ্কার করে বলতে পারব, আওয়ামী লীগ থাকতে পারবে কি পারবে না। তার এ কথা শুনে বিস্মিত হলাম এবং কোনো জবাব দিলাম না। শুধু মনে হলো, এই কট্টর ও অন্ধভক্ত সাংবাদিকই যদি এ কথা বলেন, তাহলে তো কিছু গড়বড় মনে হচ্ছে।

দুই.
অস্বীকার করার উপায় নেই আওয়ামী লীগ দেশের একটি প্রাচীন, অভিজ্ঞ ও জনসমর্থিত দল। স্বাধীনতা সংগ্রামে দলটি নেতৃত্ব দিয়েছে। স্বাধীনতার পরপর বিপুল জনসমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনা করেছে। আবার ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর দীর্ঘ ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল দলটি। এই সময়ে দলটি ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে যেমন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, তেমনি বিরোধীদল হয়েও সংসদে গিয়েছে। জনসমর্থনের কোনো ঘাটতি ছিল না। ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে দলটি ক্ষমতায় আসে। ২০০৮ সালে ভূমিধস জয় নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে যেন দলটি জনগণের ওপর থেকে আস্থা হারাতে থাকে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, ’৯১ সাল থেকে ক্ষমতায় যাওয়ার নির্বাচনের যে সংস্কৃতি চলছিল, তাতে একদল ক্ষমতায় থাকলে পরবর্তী নির্বাচনে বিরোধীদল ক্ষমতায় এসেছে। ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এ ধারাবাহিকতা ছিল। ওয়ান ইলেভেন সরকারের মাঝের সময়টি বাদ দিলে সেই ধারাবাহিকতা অনুযায়ী, বিএনপি’র পর আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার কথা। হয়েছেও তাই। পালাক্রমে দুই দলের ক্ষমতায় আসার এই ধারাবাহিকতা বজায় ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কারণে। এ সরকারের অধীনে মানুষ ইচ্ছা মতো যাকে খুশি তাকে ভোট দিতে পেরেছে। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতাসীন হওয়া আওয়ামী লীগ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দেয়ার পর থেকে ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক আছে। কারণ, আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করলেও পরবর্তী দুইটি নির্বাচন এ সরকারের অধীনে হতে পারে বলে রায় দিয়েছিল। রায়ের এই অংশটুকু আওয়ামী লীগ আমলে না নিয়ে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে সংবিধান পরিবর্তন করে পুরো পদ্ধতিটি বাতিল করে দেয়। ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন করার পদ্ধতি বেছে নেয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের দেশে রাজনৈতিক যে সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক, তাতে কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। কারো অধীনে কেউ নির্বাচন করতে কোনোভাবেই আগ্রহী নয়। এমন রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির মধ্যেই সংবিধানের দোহাই দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের নির্বাচন নিজের অধীনে করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর মূল কারণ হচ্ছে, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ক্ষমতা হারানোর ভয় থাকে। নিজের অধীনে নির্বাচন করলে প্রশাসন যন্ত্র দিয়ে ফলাফল নিজের পক্ষে নিয়ে আসা যায়। এরশাদ সরকারের আমলে দেশের জনগণ তা দেখেছে। অর্থাৎ আমাদের দেশে ক্ষমতায় থেকে যত নির্বাচন হয়েছে, সেসব নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল কখনো হারেনি। আওয়ামী লীগকে যাতে এই ক্ষমতা হারাতে না হয়, এজন্য সে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের পেছনে যে, ‘জনআস্থা’ হারানোর বিষয়টি প্রবলভাবে কাজ করেছে, তা একজন সাধারণ মানুষও বোঝে। কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে নিশ্চিতভাবেই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা হারাতে হতো। ক্ষমতা যাতে হারাতে না হয়, এজন্য দলটি ‘জনআস্থা’ বা ভোটারদের ভোটে বলীয়ান হওয়ার বিষয়টি আমলে নেয়নি। রাষ্ট্রযন্ত্রের শক্তির ওপর নির্ভর করেছে। বিরেধীদলের তীব্র আন্দোলনের মধ্যেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন করে ফেলে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের মতো একটি জনসমর্থিত দল জনগণের ওপর আস্থা রাখতে পারেনি। জনগণকে অনেকটা ‘অবিশ্বাস’ করেছে। ফলে ভোটারবিহীন নির্বাচন করে ব্যাপক সমালোচনা ও বিতর্কের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতায় থাকার জন্য এসবের তোয়াক্কা না করে, জনগণের ভোটের প্রয়োজন নেই, এমন মনোভাব ধারণ করে রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর আস্থা রাখে। এ ক্ষেত্রে জনগণের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছু করার ছিল না। সরকার তো বটেই বিরোধীদলগুলোও জনগণকে নিশ্চিন্তে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে পারেনি। জনগণ তো আর লাঠি-সোঁটা নিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের সাথে যুদ্ধ করবে না। এটা তাদের কাজও না। ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর ‘জনআস্থা’র প্রতি নির্ভর না করে আওয়ামী লীগ পাঁচ বছর কাটিয়ে দেয় এবং ২০১৮ সালেও নিজের অধীনে নির্বাচন করে যাকে ‘রাতের ভোট’ বলে অভিহিত করা হয়। এ নির্বাচনেও দলটি ‘জনআস্থা’ অর্জনের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়নি। এখন তার তৃতীয় মেয়াদ শেষের দিকে। এখনও দলটি ‘জনআস্থা’র তোয়াক্কা না করে নির্বাচন করতে অনড়। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, আওয়ামী লীগের মতো একটি দল, যে কিনা জনগণের মধ্য থেকে গড়ে উঠেছে, সেই দলটিই ক্ষমতায় থাকার জন্য জনগণের ভোটের প্রয়োজনীয়তা থেকে দূরে সরে গেছে! ক্ষমতায় থাকার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহারের পাশাপাশি বিদেশি সহযোগিতা কামনা করছে! এর নমুনা তো দেশের জনগণ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দেখেছে। সেই নির্বাচনে যখন বিরোধীদল বিএনপিসহ অপরাপর এমনকি আওয়ামী লীগের জোটে থাকা জাতীয় পার্টিও অংশগ্রহণ করতে চায়নি, নির্বাচন একপ্রকার অনিশ্চিত, তখনই ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুজাতা সিং বাংলাদেশে এসে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনের কূটকৌশল বাতলে এবং আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে যায়। সে সময় আমরা দেখেছি, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য অনড় অবস্থান নিয়েছিলেন। তার গুলশানের বাসভবনে হাতে পিস্তল নিয়ে বসে ছিলেন এ কারণে, যদি কেউ তাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য রাজী করাতে বা চাপ দিতে আসে তাহলে তিনি মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করবেন। সমস্ত বিরোধীদল যখন নির্বাচন বর্জনে প্রক্রিয়ায় রয়েছে, তখনই সুজাতা সিং এসে ভোজভাজির মতো কেমন করে কীভাবে যেন এরশাদকে রাজী করিয়ে ফেলেন। জানা যায়, এরশাদ অসুস্থ এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালেই তাকে নির্বাচন করতে রাজী করানো হয়। যদিও পরবর্তীতে এরশাদ বলেছিলেন, তাকে জোর করে রাজী করানো হয়েছে, এমনকি তিনি নমিনেশন পেপারেও সই করেননি। এরশাদকে নির্বাচনে আনা, বিরোধী দলে বসানো এবং ভোটারবিহীন নির্বাচন করার পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতার মাধ্যমে, যাতে আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় থেকে যায়। এর বিনিময়ও ভারতকে আওয়ামী লীগ দিয়েছে। ভারতের সাথে সম্পর্কের ভূয়সী প্রশংসার পাশাপাশি সে যা চেয়েছে তাই দিয়েছে। বিনিময়ে ভারতের কাছ থেকে ন্যায্য দাবির কিছুই আদায় করতে পারতে পারেনি। এমনকি ভারতের বিজেপি সরকারের নেতাসহ অন্যান্যরা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নিয়ে অত্যন্ত গর্হিত ও অবমাননাকর কথা বললেও, তার প্রতিবাদ করা দূরে থাক, একটি টুঁ শব্দ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ করেনি।

তিন.
বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দেয়া আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নতুন কিছু নয়। যারা বিরোধীদলে থাকে, তারা সরকারের বিরুদ্ধে বিদেশিদের কাছে নানা অভিযোগ তুলে ধরে। এক সময় বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগ যেমন বিদেশিদের কাছে অভিযোগ করেছে। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাবস্থায় বিএনপিও অভিযোগ করছে। এই থেকে কেউই বের হয়ে আসতে পারেনি। বরং তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। আবার ক্ষমতাসীন দলও যে বিদেশিদের কাছে বিরোধীদল সম্পর্কে অভিযোগ করে না, তা নয়। যেমন আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে বিএনপি’র কর্মকাণ্ড বিদেশিদের কাছে তুলে ধরেছে। এখন আওয়ামী লীগ যতই বলুক, বিএনপি ‘নালিশ পার্টি’ তা সচেতন মহলে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। কারণ, তারাও একই কাজ করেছে। আর এখনতো ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া হয়ে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বয়ং। অনেকে বলছেন, এ সহযোগিতা তিনি সরকারের পক্ষ থেকেই চেয়েছেন, সরকার স্বীকার না করলেও একজন সাধারণ মানুষও জানে, আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার বড় শক্তি হিসেবে ভারত বরাবরই কাজ করে আসছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র যাতে সরকারকে সহযোগিতা করে এবং তাকে যাতে ভারত ম্যানেজ করে দেয়, এমন খবরও চাউর হয়েছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য বিদেশিদের কাছে সরকারের মরিয়া হয়ে সহযোগিতা চাওয়ার অর্থই হচ্ছে, দেশের জনগণের ওপর তার বিন্দুমাত্র আস্থা না থাকা। জনগণ তার শক্তি নয়। বিদেশিদের সহযোগিতা এবং খবরদারি সে জনগণের ওপর চাপিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। একে একটি স্বাধীন দেশের অদৃশ্য পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়া বলা যায়। অথচ এই আওয়ামী লীগই দেশের স্বাধীনতার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে নেতৃত্ব দিয়েছে। তার নেতৃত্বে আস্থা রেখে দেশ স্বাধীনে সর্বস্তরের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সেই আওয়ামী লীগই যখন জনগণের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ক্ষমতায় থাকার জন্য বিদেশিদের সহযোগিতা চায়, তখন এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কিছু হতে পারে না। অস্বীকার করার উপায় নেই, আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশকে ক্ষমতাধর ও ধনী দেশগুলোর কাছে সহযোগিতা চাইতে হয়। ঋণ থেকে শুরু করে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা লাগে। আমরা এমন কোনো দেশ হয়ে যাইনি যে, বিশ্ব অর্থনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পেরেছি, যার জন্য উন্নত দেশগুলো আমাদের গোনায় ধরবে। কিংবা পরাশক্তির দেশ হয়ে যাইনি, বিশ্ব রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আমরা কাগজে-কলমে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার পর্যায়ে রয়েছি। ফলে উন্নত ও ক্ষমতাধর দেশগুলোর সাথে অর্থনৈতিক বা সমরশক্তির দিক থেকে পাল্লা দিয়ে চলতে পারব, এমন অবস্থানে নেই। উন্নত বিশ্বের নিয়ন্ত্রণাধীন বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ বা তাদের কাছ থেকে আমাদের ঋণ নেয়া ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সহযোগিতা লাগবেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, ঋণ বা সহযোগিতা নিতে হলে মহাজনের শর্ত মানতে হয়। তা নাহলে, ঋণ ও সহযোগিতা পাওয়া যায় না। না পেলে আমাদের এগিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। এই যে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হওয়া এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় থাকতে ভারত সহযোগিতা করেছে, তা তো এমনি এমনি করেনি। মুখে না বললেও ভারত যা চেয়েছে, বিনা প্রশ্নে তা দিয়ে দেয়া থেকেই তা বোঝা যায়। যদি দু’ দেশের মর্যাদা সমান হতো, তাহলে ভারতের কাছ থেকেও আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো আদায় হতো। এক তিস্তা চুক্তিই সরকার আদায় করতে পারেনি। অথচ ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা, বন্দর ব্যবহার, ব্যবসা-বাণিজ্যের অবাধ সুযোগসহ যা কিছু প্রয়োজন, সবই দেয়া হয়েছে। অনেকে মনে করেন, সরকার তা দিয়েছে, ক্ষমতায় থাকার প্রচ্ছন্ন শর্ত হিসেবে। এখন আবার ক্ষমতায় থাকার জন্য তারই কাছে ধর্ণা দিয়েছে। অন্যান্য দেশের কাছেও ধর্ণা দিচ্ছে। সরকারের এ আচরণ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, মুখে মুখে জনগণের কথা বললেও, জনগণের ভোটের ওপর তার আস্থা ও বিশ্বাস বলতে কিছু নেই।

চার.
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন যদি সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে না রাখার জন্য যা যা করার দরকার তার অনুরোধ না করে এই অনুরোধটুকু করতেন যে, তিস্তা চুক্তিটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে, এটি বাস্তবায়ন করে দিন, অভিন্ন নদ-নদীর পানির সমবণ্টন করে দিন, সীমান্তে আমাদের জনগণকে বিএসএফ নির্বিচারে গুলি করে মারছে, মারণাস্ত্র ব্যবহার বন্ধ করুন, মাদক চোরাচালান বন্ধে কঠোর হোন, বাণিজ্য ঘাটতি পূরণ করার উদ্যোগ নিন, আমাদের দেশের চ্যানেল সম্প্রচারের ব্যবস্থা করুন, তাহলে সরকারের ইমেজ দেশের মানুষের কাছে অনেক বৃদ্ধি পেত, জনআস্থাও বাড়ত। এসব সমস্যার সমাধানে তৎপর না হয়ে কীভাবে ক্ষমতায় থাকা যায়, এ নিয়ে অধিক তৎপরতা দেখিয়েছেন তিনি। এতে যে, দেশের মানুষের মতামতকে উপেক্ষা এবং তাদের ভোটের প্রয়োজন নেই, এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ক্ষমতায় থাকার জন্য বিদেশিদের সহযোগিতা চেয়ে দেশের মান-সম্মান ও মর্যাদা ধুলোয় লুটিয়ে দেয়ার এমন নজির বিশ্বে আর কোনো দেশে আছে কিনা জানা নেই। একটি প্রাচীন ও জনসম্পৃক্ত দলের এভাবে ‘জনআস্থা’কে উপেক্ষা করার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।

darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন