বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রতারণায় নতুন নতুন ফাঁদ

আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

দেশে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে প্রতারণা। নানা ধরনের প্রতারণার ফাঁদ পেতে চারদিকে ওঁৎ পেতে রয়েছে নানা প্রতারক চক্র। ভয়ঙ্কর সব প্রতারণার অভিযোগ থাকলেও নেই প্রতিকার।এমন কোনো খাত নেই যেখানে প্রতারকরা তাদের জাল বিস্তার করেনি। মোবাইল ব্যাংকিং থেকে শুরু করে অনলাইনে পণ্য বিক্রি, চাকরির প্রলোভন এমনকি কথিত তন্ত্রমন্ত্র সাধনার নামে সিদ্ধিলাভ সর্বত্রই প্রতারণা। ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণার মাত্রা দিন দিন বাড়ছে।
মামলার পর গ্রেফতার হলেও দ্রুত জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠছে এ চক্রের সদস্যরা। শুধু রাজধানীতে পাঁচ শতাধিক প্রতারক চক্র সক্রিয় রয়েছে। ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত শুধু র‌্যাব-পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে ১০ হাজারের বেশি প্রতারক। প্রতারক চক্র অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে কারো নম্বর ক্লোনিং করতে পারে। ফলে সহজেই সাধারন মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন।
অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতারণা কমাতে আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি বাড়াতে হবে সামাজিক সচেতনতাও।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, যেসব মানুষ অনলাইন প্রতারণার শিকার হন, তাদের ৭০ ভাগই মামলা করতে চান না। ফলে ভয়ংকর সব প্রতারণার অভিযোগ থাকলেও নেই প্রতিকার। আবার মামলার পর গ্রেপ্তার হলেও দ্রুত জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠছে চক্রের সদস্যরা।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার ইনকিলাবকে বলেন, প্রতারকরা সহজ প্রস্তাবে লোকজনকে লোভের ফাঁদে ফেলে প্রতারিত করছে। সাধারন মানুষ লোভ সামলাতে পারলে প্রতারণা কমে যাবে।
তিনি আরো বলেন, দিনে দিনে প্রতারণার ধরন পালটায়। কেউ প্রতারণার শিকার হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। পাশাপাশি লোভ পরিহার করে আরও সচেতন হওয়ার কথাও বলেন তিনি।
ডিবির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, প্রতারকদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। তবে সাধারণ মানুষকে এসব বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। প্রতারক চক্রের কবল থেকে মুক্ত থাকতে সচেতনতার বিকল্প নেই।
সিআইডি ও ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণত সহজ-সরল মানুষ এবং শিক্ষিত বেকার যুবকই তাদের টার্গেট। সুযোগ বুঝেই নানা ছলচাতুরী ও প্রলোভনে তারা প্রতারণা করছে। এসব প্রতারণার মধ্যে কম খরচে বিদেশ পাঠানো, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে চাকরি, বিকাশ কিংবা মোবাইল ফোনে বড় পুরস্কার জেতার অফার, জাদুর বাক্সে টাকাকে ডলারে রূপান্তর, কম দামে ভালো জিনিস বিক্রির নামে পুরোনো কাপড় গছিয়ে দেয়া, অনলাইনে বিনিয়োগ করে দ্রুত অধিক মুনাফা অর্জন ও ভাগ্য পরিবর্তন ইত্যাদি বিচিত্র ও অভিনব কৌশলে প্রতারণা করে এরা।
কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের কাছ থেকে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে রবিউল ইসলাম নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। গত বৃহস্পতিবার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ডিবি জানায়, সম্প্রতি শাওনের মোবাইলে প্রতারক রবিউল নিজেকে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া পরিচয় দিয়ে জানায়, নুহাশপল্লীর উন্নয়ন বাবদ অস্ট্রেলিয়া থেকে বড় অংকের একটি ফান্ড এসেছে। এ ফান্ড বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। তখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক উপ-সচিবের মোবাইল নম্বর দিয়ে শাওনকে যোগাযোগ করতে বলেন ওই প্রতারক। শাওন ওই মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে অন্য প্রান্ত থেকে রবিউল নিজেকে উপ-সচিব পরিচয় দিয়ে ফান্ড ট্রান্সফারের জন্য সরকারি ফি বাবদ ৩১ হাজার ৮৫০ টাকা বিকাশে পাঠাতে বলেন। শাওনও বিশ্বাস করে টাকা পাঠান। এরপর থেকে নম্বরটি বন্ধ।
জহির উদ্দিন নামে একজন ব্যবসায়ী জানান, গত ২২ আগস্ট ডিএসওর নম্বর থেকে তার কাছে ফোন করে বলে যে, বিকাশ হেড অফিস থেকে তাকে কল করা হবে সে যেন তাদের চাওয়া তথ্য দিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর এক ব্যক্তি তাকে ফোন দিয়ে বলেন, তিনি বিকাশের হেড অফিস থেকে বলছেন। ওই ব্যক্তি ভিকটিমের বিকাশ এজেন্ট একাউন্টটি আপডেটের কথা বলে কৌশলে ভিকটিমের কাছ থেকে ওটিপি কোড সংগ্রহ করে। পরে ভিকটিমের বিকাশ এজেন্ট নম্বর থেকে ১ লাখ ৭০০ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রটি।
পরে ওই ব্যবসায়ী সিআইডির কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করলে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায়। গত বুধবার জামলাপুর জেলা থেকে প্রতারক মিল্টন ও রিপনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুর থেকে মো. ইউছুফ মিয়া ও ফরিদপুর জেলার মালিগ্রাম থেকে মাহবুব কাজীকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৯টি মোবাইল ফোন ও ৫৭টি বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সিমকার্ড জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার মো. রেজাউল মাসুদু বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মূলহোতা মাহবুব কাজী একজন পেশাদার বিকাশ প্রতারক। বিকাশে প্রতারণা করার উদ্দেশে তিনি একদিন শাহরিয়ার নাফিজ ওরফে মিল্টনকে ফোন করলে কথায় কথায় তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে মাহবুব কাজীর চাহিদা মোতাবেক মিল্টন তার ডিস্ট্রিবিউটর হাউজের আওতাধীন বিকাশ এজেন্ট নম্বরগুলো মাহবুব কাজীকে সরবরাহ করেন। বিনিময়ে তিনি মাহবুবের কাছ থেকে কমিশন পেতেন। এরপর মিল্টনের মাধ্যমে বিকাশের আরেক চাকরিচ্যুত ডিএসও মো. রিপন মিয়াও এই কাজে জড়িয়ে পরে। মাহবুব কাজীর দেয়া বক্তব্য ও তার কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিনি এ কাজে খুবই পারদর্শী। অভিযোগ করা ভিকটিম ছাড়া আরও অনেক বিকাশ এজেন্ট ও বিকাশ পার্সোনাল নম্বর থেকে এই প্রতারক চক্র গত ৩ মাসে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ কাজের জন্য তারা পেইড ভার্সন ক্লোনিং অ্যাপস ব্যবহার করে বিকাশের ডিএসওদের নম্বর ক্লোন করে বিভিন্ন এজেন্টদেরকে ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করতেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন