মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

কী হবে পুতিনের পরবর্তী পদক্ষেপ?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

ইউরোপে শীতকালীন জ্বালানি সঙ্কট সংক্রান্ত উদ্বেগ আরো বাড়ছে এবং একক মুদ্রার দর পতন ঘটছে, যা অঞ্চলটিতে সামাজিক অস্থিতিশীলতা ডেকে আনতে পারে। গত সপ্তাহে রাশিয়ার সিকিউরিটি কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে একটি দীর্ঘ পোস্টে ইউরোপীয় নাগরিকদের তাদের সরকারের ‘নির্বুদ্ধিতার’ (অর্থাৎ নিষেধাজ্ঞা) প্রতিবাদ করতে এবং এর জন্য তাদের শাস্তি দিতে (অর্থাৎ, তাদের ভোট না দেয়ার) আহ্বান জানিয়েছেন।

মেদভেদেভ মন্তব্য করেন যে, ইউরোপীয়রা রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চায় কিন্তু মূর্খ রাজনীতির দ্বারা বিপথগামী হয়, অন্যদিকে রাশিয়াও ইউরোপের জনগণের সাথে সহযোগিতার সম্পর্কে থাকতে চায়। মেদভেদেভ লেখেন, ‘চুপ করে থাকবেন না...রাশিয়া এটি শুনবে।’ তিনি আসন্ন শীতে রাশিয়ায় উষ্ণতার কথা উল্লেখ করেন, যা ইউরোপে জন্য একটি সস্তা ও সহজলভ্য সেবা ছিল। কারণ রাশিয়ার সরবরাহের অভাবে ইউরোপ তীব্র জ্বালানি সঙ্কটে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এভাবে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে দিয়ে সামাজিক অস্থিতিশীলতা তৈরির মাধ্যমে সরকার পতন ঘটানোই হবে পুতিনের পরবর্তী পদক্ষেপ।

মেদভেদেভের পোস্টটি ইতালিতে ভাইরাল হয়েছে। এমনকি দেশটির দুটি জাতীয় সংবাদপত্র লা রিপাব্লিকা এবং কোরিয়ারে ডেলা সেরার প্রথম পাতায় তা ছাপা হয়েছে। উভয় পত্রিকাই আগামী মাসের ভোটের আগে নির্বাচনী প্রচারণায় হস্তক্ষেপ করার জন্য মেদভেদেভকে অভিযুক্ত করেছে। তবে, ইতালির কট্টরপন্থী লিগ পার্টির প্রধান মাত্তেও সালভিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইতালির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মারিও ড্রাঘির কটূক্তিমূলক অবস্থান থেকে দূরে সরে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলিকে ইউরোপের জীবনযাত্রার ব্যয়-সঙ্কটের সাথে যুক্ত করেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন যে, ইতালীয় পরিবারগুলিকে রক্ষা করার জন্য একটি কূটনৈতিক সমাধান প্রয়োজন।

তবে, পুতিনকে সম্পূর্ণভাবে গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করতে হবে না। রাশিয়ান গ্যাস ছাড়া শীতের চিন্তাই ইউরোপীয়দের সর্বনাশ করার জন্য যথেষ্ট। প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞাকে পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক আত্মহত্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। নর্ড স্ট্রিম ২ পাইপলাইন পুনরায় চালু করা থেকে নিষেধাজ্ঞা পর্যন্ত সমস্ত বিষয়ে ক্রেমলিনের স্পষ্ট মন্তব্য ইন্টারনেট ছেয়ে ফেলেছে। গবেষক জোসেফ বোডনার বলেন, ‘লক্ষ্য হল ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞাগুলোকে ক্ষুণ্ন করা এবং ইউক্রেনের প্রতি জনসমর্থনকে দমিয়ে দেয়া এবং এটি জীবনযাত্রার মানকে নিচে নামিয়েছে, তা উপস্থাপন করা। এই শীতে সামাজিক অস্থিরতা একটি বাস্তব সম্ভাবনা, যার জন্য ইউরোপীয় সরকারগুলির আড়াল করে রাখার পরিবর্তে প্রস্তুত হওয়া উচিত।

সত্যিকার অর্থে, রাশিয়া নয়, বরং ইউরোপের পরিসংখ্যানগুলোই নিজেদের জন্য কথা বলছে। জার্মানি অনুমান করছে যে, এই শীতে গড়ে পরিবারগুলির বিল ৫শ’ থেকে ১ হাজার ইউরোর পর্যন্ত বাড়তে পারে এবং এটি কৃচ্ছতার প্রবণতা বাড়াতে পারে। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলির জন্য এটি খাদ্য বা জ্বালানি কেনার মধ্যে একটি অসম্ভব সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল নিম্ন আয়ের পরিবারের আইএমএফ ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিলে চেক প্রজাতন্ত্র, সেøাভাকিয়া এবং হাঙ্গেরি মন্দার মুখোমুখি হবে। বুলগেরিয়ার মতো দেশগুলি, যারা রুবলের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করতে অস্বীকার করার পর এপ্রিলে গ্যাজপ্রম দ্বারা অস্বীকৃত হয়েছে, বলেছে যে, রাশিয়ার সাথে তাদের আলোচনা পুনরায় শুরু করতে হবে।

উদ্বেগের বিষয় হল, পরবর্তী রাশিয়ান গ্যাস রাজনৈতিক প্রভাবের সাথে আসবে এবং এটি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক পদক্ষেপকে যুদ্ধ-পূর্বাবস্থায় নিয়ে পাবে। ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক যখন মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার দিকে মনোনিবেশ করছে, ইউরোপীয় নেতারা অবশ্যই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কথা ভাবতে শুরু করেছেন। কারণ ইউরোপীয় দেশগুলির এখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরিবর্তে নিজেদের গৃহস্থালীর বিলের যন্ত্রণা কমাতে স্বল্পমেয়াদী চাপ ভাগাভাগি এবং জ্বালানি স্বাধীনতা অর্জনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী তহবিল নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন।

চেক প্রজাতন্ত্র ইতিমধ্যে বলেছে যে, তারা সমস্যাটিকে আলোচনার টেবিলে রাখবে। বাকিদেরও আর সময় নষ্ট করা উচিত নয়। ইউরোপে প্রবল শীত আসন্ন প্রায়। ইউরোপ যদি তার আর্থিক চাপের সম্মুখীন নাগরিকদের জন্য একটি ব্যাপক সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে মহাদেশটির সামাজিক কাঠামোর উপর এর প্রভাব বিশাল পরিলক্ষিত হবে। এবং এটি সরাসরি রাশিয়ার জন্য ইতিবাচক হবে। সূত্র: ব্লুমবার্গ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Md Belal Uddin ২৭ আগস্ট, ২০২২, ৮:২৫ এএম says : 0
এই সময় যদি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকতেন তাহলে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে
Total Reply(0)
Ifran UR Rahaman Parvez ২৭ আগস্ট, ২০২২, ৮:২৫ এএম says : 0
ইউক্রেনের উচিৎ রাশিয়ার হাতে সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়া এবং সারা বিশ্বকে একটু শান্তিতে থাকতে দেওয়া।
Total Reply(0)
Md Arif Hossen ২৭ আগস্ট, ২০২২, ৮:২৬ এএম says : 0
মস্কো দাবি করে রেলওয়ে অবকাঠামো সামরিক হামলার "বৈধ লক্ষ্য" কারণ এসব ট্রেনে করে ইউক্রেনে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে।
Total Reply(0)
Md. Joynal Abedin ২৭ আগস্ট, ২০২২, ৮:২৬ এএম says : 0
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর দরিদ্র দেশ গুলো কে এত মূল্য আর দিতে হয় নেই
Total Reply(0)
Jasmine Sultana ২৭ আগস্ট, ২০২২, ৮:২৬ এএম says : 0
পশ্চিমাদের হিপোক্রেসি ধ্বংস করে মাটির সাথে মিশিয়ে দাও রাশিয়া
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন