বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ক্যারিয়ার

সঠিক উপায়ে ইমেইল মার্কেটিং করলে সফলতা আসবেই

| প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. নাজমুল হক পলাশ, একজন ইমেইল মার্কেটার। ২০১০ সাল থেকে তিনি এই পেশায় আছেন। বর্তমানে ইমেইল সার্ভার ম্যানেজমেন্ট এবং ক্লাউড কম্পিউটিং আর্কিটেক্ট হিসেবে আমেরিকার একটি কোম্পানিতে কাজ করছেন। ২০১৩ সালে ইমেইল মার্কেটিং জায়ান্ট এওয়েবার থেকে পান বিশেষ পারফরমেন্স অ্যাওয়ার্ড। নিজে কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নতুনদেরও তিনি প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। ইমেইল মার্কেটিংয়ের নানা দিক নিয়ে দৈনিক ইনকিলাবের সাথে কথা হয় এই মার্কেটারের। তার সাথে কথোপকথনে ছিলেন নুরুল ইসলাম।

ইনকিলাব : ইমেইল মার্কেটিং কী?
নাজমুল হক : ইমেইল মার্কেটিং হলো এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে সরাসরি টার্গেটেড ক্রেতার ইমেইলে কোনো পণ্য বা সেবার বিবরণসহ অন্যান্য তথ্যাবলি প্রেরণ করা হয়। ক্রেতা ওই পণ্য বা সেবা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণাগুলো ইমেইলের মাধ্যমে পেয়ে সেটি ক্রয়ে আগ্রহী হন। অনেকের ধারণা, ইমেইল মার্কেটিং শুধুমাত্র মানুষের কাছে মেসেজ পৌঁছানো, কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এটি কোনো প্রতিষ্ঠানের পূর্বতন এবং সম্ভাব্য ক্রেতাদের কোনো পণ্য বা সেবা সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা। উদাহরণস্বরূপ, আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটা ওয়েবসাইট আছে যাতে প্রতিদিন কয়েক হাজার ভিজিটর আসে। তারা সাধারণত আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তথ্য বা সেবা গ্রহণ করে এবং ব্যবহার শেষে চলে যায়। আপনি পরবর্তীতে আপনার ওয়েবসাইটে নতুন কোনো তথ্য যোগ করলে তা ওই ভিজিটররা জানতে পারেন না। এমন কি ওই ভিজিটরগুলো পরবর্তীতে আপনার ওয়েবসাইটে না-ও আসতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে আপনি যদি তাদের ইমেইল নিউজলেটারের মাধ্যমে তাদের কাছে আপনার নতুন পণ্য বা সেবা সম্পর্কিত তথ্য পাঠান, তাহলে তারা তা জানতে পারবেন, যা পরবর্তীতে বিক্রয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ জন্য ক্রেতাকে ইমেইল এড্রেস সাবমিটের অফার করতে হয়, যা অধিকাংশ ওয়েবসাইট করে থাকে। এ ছাড়া ট্রানজেকশনাল ইমেইল যেমন সাইনআপ কনফার্ম, ইনভয়েস, পাসওয়ার্ড রিকভারি ইত্যাদি কোন ওয়েবসাইটকে কার্যকর রাখতে ব্যবহার করা হয়, যা ইমেইল মার্কেটিংয়ের অংশ। বর্তমানে কোনো ওয়েবসাইটে ইমেইল ফাংশন না থাকলে ওই ওয়েবসাইটকে অকেজো ওয়েবসাইট বলে ধরা হয়। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ইমেইল মার্কেটিং করার জন্য প্রায় ১.৫১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়, যা বর্তমানে ২.৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। আরেকটি মজার তথ্য হচ্ছে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে যত বিক্রি হয়, তার ২৪ শতাংশই ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে। সুতরাং তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ব্যবসা ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ইমেইল মাকেটিংয়ের কতটা অপরিহার্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ইনকিলাব : আপনি কখন এবং কীভাবে এই কাজের সাথে যুক্ত হলেন?
নাজমুল হক : ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটারের প্রতি ছিল বিশেষ ঝোঁক। ইচ্ছাই ছিল কম্পিউটার নিয়ে ক্যারিয়ার গড়ব। ২০০৬ সালে ইন্টারনেট এবং ২০০৮ অনলাইন মার্কেটপ্লেসের সাথে পরিচিত হই। এরপর মার্কেটপ্লেসের কাজের চাহিদা অনুযায়ী কাজ শেখা শুরু করলাম। অবশেষে ২০১০ সালের আগস্ট থেকে অনলাইন মার্কেট প্লেস ওডেস্কে (বর্তমান আপওয়ার্ক) আমেরিকান একজন ক্লায়েন্টের মাধ্যমে অনলাইনের ক্যারিয়ার শুরু করি এবং ২০১২ সালে খুলনা থেকে ঢাকা চলে আসি পড়াশোনার উদ্দেশ্যে। এরপর ঢাকাতে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে ভিডিও টিউটোরিয়াল ডাউনলোড করে, ব্লগ এবং ফোরাম থেকে বিভিন্ন লেখা পড়ে পড়ে ইমেইল মার্কেটিং আরো ভালো করে শেখা শুরু করি। তখন খুব বড় সমস্যাগুলোর মধ্যে ছিল- ইন্টারনেট স্পিড, এক্সপার্ট মার্কেটার পরামর্শ বা প্রশিক্ষণের অভাব, অনুশীলনের জন্য কোনো ইমেইল সার্ভার কেনার ব্যবস্থা না থাকা ইত্যাদি। শুরুটা খুব মসৃণ ছিল না, কিন্তু আস্তে আস্তে যত নতুন নতুন জিনিসের সাথে পরিচিত হতাম, ততটাই নতুন করে শেখার উৎসাহ পেতাম। সময়ের সাথে সাথে নতুন জিনিসের আবির্ভাব হচ্ছে আর সেই সাথে সাথে বাড়ছে শেখার পরিধিও। এখনও প্রতিনিয়ত কাজ করছি আর শিখছি।

ইনকিলাব : এই সেক্টরে কাজ করার জন্য কী ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন?
নাজমুল হক : ইমেইল মার্কেটিংকে দুটো ভাগে ভাগ করা হয়। প্রাথমিকভাবে ইমেইল নিউজলেটার তৈরি করে কোন ত্রিপাক্ষিক ইমেইল মার্কেটিং ওয়েবসাইট, যেমন: মেইলচিম্প, এওয়েবার, গেটরেসপন্স, আইকন্টাকট, কনসট্যান্ট কন্টাকট ইত্যাদি থেকে মার্কেটিং করা যেতে পারে বা এই দক্ষতাই কাজে লাগিয়ে অনলাইন মার্কেট প্লেসে ক্লায়েন্টদের কাজ করে ইমেইল মার্কেটিংয়ে ক্যারিয়ার গড়া যেতে পারে। এই জন্য মার্কআপ ল্যাংগুয়েজ এইচটিএমএল এবং সিএসএস শিখতে হবে। কোনো প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ জানার প্রয়োজন হয় না। তবে অ্যাডভান্স লেভেলের মার্কেটিং করতে চাইলে অবশ্যই সার্ভার, ডোমেইন, হোস্টিং, আইপি, পোর্ট, ডিএনএস ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। এই ক্ষেত্রটিতে কাজের পরিধি বাড়াতে হবে এবং বাড়বে আয়ও।

ইনকিলাব : কারা এই সেক্টরে ভালো করতে পারে?
নাজমুল হক : এই সেক্টরে ভালো করার জন্য কাজ জানার পাশাপাশি প্রথম শর্ত হলো ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা। আপনি যদি অনেক ভালো ইমেইল মার্কেটিং জানেন, কিন্তু ইংরেজি ভালো জানেন না, তাহলে আপনি মার্কেট প্লেসে ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন না। এ ছাড়াও যে বিষয়গুলো দরকার, সেগুলোর হচ্ছেÑ ধৈর্য, কাজ শেখার প্রবল ইচ্ছা, কর্মঠ হওয়া, সময় মেনে কাজ করা, দায়িত্বশীলতা, টার্গেট নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়ন ইত্যাদি। সময়ের সাথে সাথে ইমেইল মার্কেটিংয়ের পদ্ধতি পরিবর্তন হচ্ছে। ইমেইলগুলোও আপডেট হচ্ছে। তাই প্রতিনিয়ত এসব বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর পরিপূর্ণ সফলতা পেতে হলে ইমেইল মার্কেটিংয়ের সাথে সম্পৃক্ত সব কিছু ধীরে ধীরে শিখে নিতে হবে।

ইনকিলাব : নির্ভরযোগ্যতার বিচারে ক্যারিয়ার হিসেবে ইমেইল মার্কেটিং কেমন বলে মনে করেন?  
নাজমুল হক : এখন দেশি ও বিদেশি বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং চেইনে ইমেইল মার্কেটিং বিদ্যমান। কারণ ইমেইল মার্কেটিং অন্যান্য মার্কেটিং মেথড থেকে বেশি ফলপ্রসূ এবং খরচও কম। আর ইমেইল মার্কেটিংয়ের ফলাফল খুব দ্রুত জানা যায়। অনলাইন মার্কেট প্লেসগুলোতে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের ইমেইল মার্কেটিংয়ের জব আসে। এ ছাড়া বর্তমানে হাজার হাজার অ্যাফিলিয়েট ফার্ম আছে, যারা তাদের প্রাইমারি মার্কেটিং মেথড হিসেবে ইমেইল মার্কেটিংকে বেছে নিয়েছে। এদিকে উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও এখন ইমেইল মার্কেটিংয়ের ব্যবহারের প্রচুর বেড়েছে। সামনের দিনগুলোতে এর চাহিদা আরো বাড়বে। সুতরাং অনলাইন মার্কেট প্লেস হোক বা দেশে, যে কোনো জায়গায়ই ইমেইল মার্কেটিংয়ে নির্ভরযোগ্য ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। আর সঠিক উপায়ে সেটা করতে পারলে সফলতা আসবেই।

ইনকিলাব : এখানে খ-কালীন কাজের সুযোগ কতটুকু?
নাজমুল হক : এই সেক্টরে যেহেতু অল্প প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে, সেহেতু যে কেউ ইমেইল মার্কেটিংয়ের প্রাথমিক ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করতে পারবে। চাকরি বা পড়াশোনার পাশাপাশি দ্বিতীয় আয়ের উৎস হিসেবে এই পেশা বেছে নিতে পারেন। আমি নিজেও পড়াশোনার পাশাপাশি ইমেইল মার্কেটিংয়ে ক্যারিয়ার গড়েছি। প্রতিদিন ৩-৪ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতাম ২ জন ক্লায়েন্টের কাজ করে। এ রকম দেশের কিংবা আন্তর্জাতিক ২/৩ জন ক্লাইন্টের কাজ করা যেতে পারে। তবে পড়াশোনা বা চাকরি অবশ্যই ঠিক রেখে দিনের অলস সময়ে অথবা সময় বের করে এই কাজগুলো করতে হবে। পরে অভিজ্ঞ হয়ে গেলে এটাকে পূর্ণ ক্যারিয়ার হিসেবে নেয়া চিন্তা করা যাবে।

ইনকিলাব : এই পেশায় মাসিক আয় কেমন হতে পারে?
নাজমুল হক : অনলাইন মার্কেটপ্লেসে নিউজলেটার তৈরি করে বা থার্ড পার্টি ইমেইল সার্ভারের কাজ করে প্রতি ঘণ্টা সর্বনিম্ন ৫ ডলার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫ ডলার আয় করা যায়। এছাড়া নির্ধারিত মূল্যে নিউজলেটার তৈরি করে ৩০ থেকে ৪০ ডলার পর্যন্ত আয় করা যায়। তাতে মাসে সর্বনিম্ন ৩০০ থেকে ৪০০ ডলার আয় করা সম্ভব। কিছু গ্রাফিক্স মার্কেটপ্লেস, যেমন: গ্রাফিক্সরিভারে চাইলে মানসম্মত ইমেইল টেম্পলেট ডিজাইন করে আপলোড করে রাখলে সেখান থেকেও আয় নিশ্চিত করা সম্ভব। আর অ্যাডভান্স লেভেলের কাজ শিখতে পারলে মাসে কয়েক হাজার ডলার আয় করা সম্ভব।

ইনকিলাব : যারা এই সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী, তাদের আপনি কী পরামর্শ দেবেন?
নাজমুল হক : অনলাইন মার্কেটপ্লেসে হোক আর দেশি মার্কেটে হোক, যারা এই সেক্টরে আগ্রহী তাদের জন্য প্রথম পরামর্শ হবে ভালো করে কাজটা শিখুন। সঠিক উপায়ে সেটা করুন। আপনার সফলতা আসবেই, ইনশা আল্লাহ। অনেক কোম্পানি আছে যারা খুব প্রলোভন দেখিয়ে ৭ দিনে ইমেইল মার্কেটার করে দেবে বলে বিজ্ঞাপন দেয়, তাদের কাছ থেকে দূরে থাকুন। ইমেইল মার্কেটিং কম সময়ে শেখা যায় তার মানে কিন্তু সেটা ৭ দিন নয়, এমনকি ১৪ দিনও নয়। অনলাইনে অনেক ফ্রি ভিডিও টিউটোরিয়াল আছে, সেগুলো দেখে কাজের শুরুটা করতে পারেন। বিশেষ প্রয়োজনে অভিজ্ঞদের সাহায্য নিন। না শিখে মার্কেট প্লেসে নেমে যাবেন না। কারণ, অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী। শেষ পরামর্শ হলো- আপনি ইমেইল মার্কেটিং করেন বা যে সেক্টরেই কাজ করেন বা করবেন, ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট প্লেসে কখনো নিজেকে এবং নিজের দেশকে ছোট করবেন না। মনে রাখবেন, আপনি একজন সেবাদানকারী এবং একই সাথে আপনি আপনার দেশেরও প্রতিনিধি। আপনি একজনকে সেবা দিচ্ছেন আর একজন অর্থের বিনিময়ে সেবা নিচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
রোজেনা ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১:০০ এএম says : 0
সাক্ষাৎকারটি থেকে ইমেইল মার্কেটিং সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা পেলাম। ইনকিলাব ও নাজমুল হককে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Total Reply(0)
RAAMIN ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৩:২১ পিএম says : 0
fine, hope it's have need for us.
Total Reply(0)
shahjahan ali ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৫৫ এএম says : 0
very good
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন