মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বগুড়ার দুই থানার ওসিকে বদলি,তদন্ত কমিটি গঠন

ধর্ষণের আলামত নষ্ট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

স্কুলছাত্রীর ধর্ষণের আলামত নষ্টসহ নানা অভিযোগে বগুড়ার দুই থানার ওসিকে বদলি করা হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত রোববার রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাদের বদলি করা হয়েছে। আদেশ অনুযায়ী কৃপা সিন্ধুবালাকে পাবনা ও সিরাজুল ইসলামকে জয়পুরহাটে বদলি করা হয়েছে। বদলি হওয়া দুই কর্মকর্তা হলেন- ধনুট থানার ওসি কৃপা সিন্ধুবালা ও গাবতলী মডেল থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুর রশিদ। তিনি জানান, এক আদেশে তাদের বদলি করা হয়েছে। দুই থানায় এখনো নতুন কাউকে পদায়ন করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, ধনুুটের ধর্ষণ মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগে মামলাটি তদন্তের জন্য জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগে ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধুবালার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ। একইসঙ্গে তাকে তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে আলামত নষ্টের অভিযোগে ধর্ষণ মামলার বাদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বগুড়া পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল রশিদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জালশুকা হাবিবর রহমান ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের শিক্ষক মুরাদুজ্জামান ওরফে মুকুল গত বছরের অক্টোবরে ধুনট পৌর এলাকার দক্ষিণ অফিসারপাড়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। সেখানে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। ওই বাসার একটি মেয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। মুরাদুজ্জামান এক দিন তাকে কৌশলে জড়িয়ে ধরে মুঠোফোনে ছবি তোলেন। এরপর ওই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে বেশ কয়েকবার ধর্ষণ করেন।
গত ১২ মে আবারো ধর্ষণের চেষ্টা করলে ওই ছাত্রী চিৎকারে করে। এ সময় স্বজনরা ছুটে এলে মুরাদুজ্জামান পালিয়ে যান। এরপর ওই ছাত্রীর কিছু অশালীন ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন মুরাদুজ্জামান। পরে ওই ছাত্রীর মা তার বিরুদ্ধে গত ১২ মে ধুনট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ মুরাদুজ্জামানকে গ্রেপ্তার ও অশালীন ভিডিও ধারণ করা মুঠোফোন জব্দ করেন। মুরাদুজ্জামান বর্তমানে বগুড়া কারাগারে আছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ধুনট থানার ওসি কৃপাসিন্ধু বালা নিজেই। ১৮ মে আসামি মুরাদুজ্জামানকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে তার হেফাজত থেকে আরও একটি মুঠোফোন জব্দ করেন। ওই মুঠোফোনে পাওয়া কয়েকটি অশালীন ভিডিও ক্লিপ সিডিতে কপি করে নেন ওসি। এসব সিডি ও মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু ওসি আসামি পক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে মামলার আলামত নষ্ট করার জন্য গত ১৯ মে জব্দ করা মুঠোফোন দুটি আদমদীঘি থানার একজন উপ-পরিদর্শকের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে ফোনে থাকা সব ভিডিও ক্লিপ ও তথ্য মুছে ফেলেন। এরপর শুধু ওই দুটি মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ধুনট থানার ওসি কৃপাসিন্ধু বালা বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। মামলাটির তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। মুঠোফোন দুটি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে। এরপরও তদন্ত যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেজন্য পুলিশ সুপারের নির্দেশে তদন্তভার ডিবির কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম থানায় যোগদানের পর থেকে জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে সখ্যতা, বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় সাধারণ মানুষকে হয়রানি করাসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে।
গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, চাকরি জীবনে বদল নিয়মিত বিষয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তা মেনে নিতে হবে। জনস্বার্থে আমাকে বদলি করা হয়েছে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, মামলার বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষা ও তদন্তে মুঠোফোনে ধর্ষণের ভিডিও ধারণের প্রমাণ পাওয়া গেলে আসামির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় আরও মামলা হবে। এছাড়া মুঠোফোন থেকে ভিডিও মুছে ফেলার তদন্ত করা হচ্ছে, প্রমাণ হলে বিভাগীয় আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন