শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রবাস জীবন

নিউইয়রকে সাহিত্য একাডেমির মাসিক সাহিত্য আসরে লেখক লেখিয়েদের মিলন মেলা

যুক্তরাষ্ট্র সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০২২, ১:৩৩ পিএম

গত ২৬ আগষ্ট, মাসের শেষ শুক্রবার জ্যাকসন হাইটসের একটি মিলনায়তনে 'সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক'র সাহিত্য আসরটি অনুষ্ঠিত হয়। বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সাহিত্য একাডেমির উপদেষ্টা প্রয়াত কবি শহীদ কাদরী সহ এ মাসে বাঙালি যে সকল উজ্জ্বল নক্ষত্রদের হারিয়েছেন, তাঁদের স্মরণে আসরটি উৎসর্গ করা হয়। একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন শুরুতেই তাঁদের সকলকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। গোটা আসরটি পরিচালনায়ও ছিলেন তিনি।

পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে আলোচনা, স্মৃতি সুধায় স্মরণ, আবৃত্তি, স্বরচিত পাঠে বারবার উঠে এসেছেন বঙ্গবন্ধু, শহীদ কাদরী, কাজী নজরুল ইসলাম সহ সকলে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে লেখক হাসান ফেরদৌস বলেন, তাঁর মতে কবি শহীদ কাদরীর কবিতার তিনটি মূল অনুষঙ্গ হলো - স্বদেশ, প্রেম এবং মনস্তাপ, যা স্থানান্তর যোগ্য। রবী ঠাকুরের কবিতা যেমন ঈশ্বরকে নিবেদিত একইভাবে প্রেমিকাকেও নিবেদিত। শহীদ কাদরীর কবিতাও একইভাবে যখন স্বদেশের কথা বলেন মনে হবে প্রেমিকার কথাও বলেন। তাঁর বিখ্যাত কবিতা 'তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা' কবিতার উদ্ধৃিতি টেনে বলেন, আমাদের তারুণ্যে এ কবিতাটি কেউ কেউ নকল করে প্রেমিকাকে পাঠিয়েছি। কারণ, কথাগুলো আমাদের সবার। যদিও এ কবিতায় কবি স্বদেশের কথা বলেছেন। শহীদ কাদরী দীর্ঘ তিরিশ বছরের বেশি সময় প্রবাস জীবন যাপন করেও সদা দেশকে মনের আঙিনায় ধারণ করেছেন। যাঁরা কবিকে ভালোবাসেন তাঁদের কাজ একটাই, কবির কবিতা পাঠ, এবং কবিতার মধ্যে কবিকে আবিষ্কার করা৷

কবি তমিজ উদদীন লোদী বলেন, বেদনা বিধুর এ আগষ্ট মাস। টি এস এলিয়ট এপ্রিল মাসকে নিষ্ঠুর মাস বলেছেন, বাঙালির জন্য এ মাস শোকের মাস। বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে বলেন, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন বাঙালি জাতি এ শোক বয়ে বেড়াবে। তিনি বলেন, কবি শহীদ কাদরীর কাছে যিনি যেতেন তিনিই উপলব্ধি করতেন, তিনি তাঁর কাছের মানুষ। তাঁর ভালোবাসার সে পরশ আজো আমাদের মধ্যে জাগরুক আছে। রবীন্দ্রনাথ যেভাবে আজো চর্চিত সেভাবে কবি শহীদ কাদরীও সকলের চর্চায় থাকবেন। কবিকে নিয়ে তাঁর একটি প্রবন্ধের কিয়দংশ পাঠ করেন তিনি।

কবি শহীদ কাদরীর সহধর্মিণী নীরা কাদরী বলেন, অল্প সময়ের জন্য শহীদ কাদরীর সঙ্গে যাদের দেখা হয়েছিল তারা যখন বলে, কবিকে কোনদিন ভুলবো না, সেখানে এ মানুষটার সঙ্গে আমার তেরোটি বছর কেটেছে। শহীদ অসুস্থ ছিল ঠিক কিন্তু সে অসুস্থতা বুঝতে দিত না। প্রচুর গল্প হতো, সারারাত আড্ডা হতো। মুহূর্তের জন্য এসব ভুলতে পারি না। তিনি বলেন, শহীদকে খুব কম লিখতে দেখেছি। শহীদ কাদরী বলতেন, 'লেখা মাথায় আসে ঠিক, কিন্তু একই কথা বারবার লিখতে চাই না। আমার কবিতা পড়ে যদি কোন পাঠক বলে, এরকম একটি কবিতা আগে পড়েছি, এতে আমার সময় নষ্ট, পাঠকেরও সময় নষ্ট। মনে আসলেই ওটা লিখতে হবে ওরকম কিছু নেই। ' নীরা কাদরী জানান, তাঁর কাছে কবি শহীদ কাদরীর হাতের লেখা একটি নোট বই আছে। কবির কিছু কিছু কথা নীরা কাদরী নিজেও লিখে রেখেছেন।

কবি কাজী আতীক বলেন, বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আমাদের কারো বিশেষ কিছু অজানা নেই। বিশেষ করে তাঁর নিজের লেখাগুলো প্রকাশ হওয়ার পর, তাঁর ছোটবেলা হতে ছাত্রজীবন, রাজনৈতিক জীবন, স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা সম্পর্কে আমরা সকলে ওয়াকিবহাল। শোকাবহ আগষ্ট নিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন তিনি।
হন্তারকদের প্রতি - কবিতাটি আবৃত্তিকার পারভীন সুলতানা পড়ে শোনান।

মানবতার কবি, বিদ্রোহের কবি, চেতনার কবি এবং গণমানুষের কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কবির বিদ্রোহী কবিতা সম্পর্কে লেখক এ.বি.এম সালেহ উদ্দিন বলেন, এ কবিতাটি বাংলা সাহিত্যে সর্বাধিক পঠিত অন্যতম একটি কবিতা। এ কবিতার মতো বিপ্লবী কবিতা বাংলা সাহিত্যে এখন পর্যন্ত তেমন লেখা হয় নি। বিদ্রোহী কবিতার প্রতিটি শব্দ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বিশ্লেষণ করা যায়। এ কবিতার মধ্য দিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয় সমস্ত বিশ্বকে জাগিয়ে তোলা যায়। বঞ্চিত মানুষ, শোষিত মানুষ, পরাধীন মানুষদের জাগিয়ে তোলার জন্য এ কবিতাটি এমনভাবে অনুরণিত, যা কোন অবস্থাতেই বাংলা সাহিত্য হতে মোছা যাবে না। ১৯২২ সালের জানুয়ারি মাসের ৬ তারিখে কবিতাটি বিজলী পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর মানুষের মধ্যে যে সাড়া পড়েছিল তা পৃথিবীর আর কোন কবিতার ক্ষেত্রে ঘটেছে বলে জানা নেই। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মানুষের জাগরণের জন্য, মুক্তির জন্য, কবিতায় এত বড় দুঃসাহসিকতার পরিচয় কবি নজরুলের মতো আজ পর্যন্ত সম্ভবত অন্য কোন কবি করেন নি। বিস্ময়কর মানুষ কবি নজরুল যতভাবে পেরেছেন সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্যের ভান্ডার। সকল অমূল্য সৃষ্টির মাধ্যমে কবি মানুষের মনে চিরস্থায়ী আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।
বিদ্রোহী - কবিতাটি আবৃত্তিকার এম.এ সাদিক পড়ে শোনান।

ঠিকানা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, এ মাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ আমরা অনেক বিখ্যাত মানুষদের হারিয়েছি। সাহিত্য একাডেমিকে ধন্যবাদ জানান তাঁদের স্মরণে আসরটি উৎসর্গ করার জন্য। বলা হয়, যে শহরে একজন কবি থাকেন সে শহর আলোকিত থাকে। কবিরা সাহসের আধার। কবি শহীদ কাদরী নেই এ শহরে কিন্তু তাঁর আলোটা রয়ে গেছে আমাদের মনে। তাঁর রেখে যাওয়া সাহস নিয়ে, আলো নিয়ে আমরা এখনো পথ চলি।

এ আসরে প্রয়াত গুণীজনদের স্মরণে আরো কথা বলেন, অধ্যাপিকা হুসনে আরা, কবি ফকির ইলিয়াস, রানু ফেরদৌস, ফাহিম রেজা নূর, মাঈন উদ্দীন আহমেদ, নিনি ওয়াহেদ, মুনিয়া মাহমুদ, আবু সায়ীদ রতন, ভায়লা সালিনা, সোহানা নাজনীন, আকবর হায়দার কিরণ, ইশতিয়াক রুপু, শিব্বীর আহমেদ, শামীম আরা আফিয়া, সবিতা দাস প্রমুখ।

আসরে শহীদ কাদরীর কবিতা পড়েন, আনোয়ারুল হক লাভলু, আবীর আলমগীর, গোপন সাহা, তাহরীনা প্রীতি, তাহমিনা খান, সুলতানা ফেরদৌসী, লায়লা ফারজানা, এলি বড়ুয়া, নাসিমা আক্তার প্রমুখ।

আসরে স্বরচিত পাঠ করেন, বেনজির শিকদার, সুরীত বড়ুয়া, সুমন শামসুদ্দিন, জাকিয়া ফাহিম, আহমেদ ছহুল, মিয়া জাকির, সৈয়দ মামুনুর রশীদ, ছালামত জং চৌধুরী, স্বপ্ন কুমার প্রমুখ।

আসরে উপস্থিত ছিলেন, রাহাত কাজী শিউলি, রিমি রুম্মান, মোঃ নাসির শিকদার, আকতার আহমেদ রাশা, মারীষ্টোলা আহমেদ শ্যামলী, তুলি ইলিয়াস, ফারুক রহমান, ডেইজি, মিয়া এম আছকির, ফজলে আলী কচি, সুতপা মন্ডল, রুপা খানম, রুবাইয়া শাবনাম, শিবলি সাদেক, পলি শাহীনা প্রমুখ।

উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ এবং আগামী আসরের আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন মোশাররফ হোসেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন