বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

দুর্নীতির মামলায় এবার নাজিব রাজাকের স্ত্রীর ১০ বছরের কারাদণ্ড

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১০:২৯ এএম

মালয়েশিয়ার কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের স্ত্রী রসমাহ মানসুরকেও দুর্নীতির দায়ে ১০ বছরের কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছে একটি আদালত। বৃহস্পতিবার কুয়ালালামপুরের আদালত সাবেক এই মালয়েশীয় ফার্স্ট লেডিকে দুর্নীতির তিন মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ড ঘোষণা করেছে।
এর আগে, গত ২৩ আগস্ট বহুল আলোচিত ওয়ান এমডিবি দুর্নীতির মামলার চূড়ান্ত আপিলে হেরে যাওয়ায় দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের ১২ বছরের কারাদণ্ডের সাজা বহাল রেখে রায় ঘোষণা করে সুুপ্রিম কোর্ট। তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকরে সেদিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাকে ২১ কোটি রিংগিত (৪৪৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা) জরিমানাও করা হয়।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, সরকারি কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ঘুষ চাওয়া এবং গ্রহণের দায়ে বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার একটি আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের স্ত্রী রসমাহ মানসুরকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনে নাজিবের অকল্পনীয় পরাজয়ের পর থেকে একাধিক দুর্নীতির মামলার তদন্তের কেন্দ্রে রয়েছে এই দম্পতি। বহুল আলোচিত ওয়ান এমডিবি কেলেঙ্কারিতে দেশটিতে ভোটারদের তীব্র ক্ষোভ নাজিবের নয় বছরের শাসনের অবসান ঘটায় সেই সময়।
বিলাসবহুল জীবনযাপন আর কোটি টাকা মূল্যের হার্মিস বার্কিন ব্যাগের প্রতি আসক্তির কারণে দেশটিতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন নাজিবের স্ত্রী রসমাহ। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন বিষয়ে প্রভাব খাটানো নিয়ে বারবার প্রশ্নের সম্মুখীনও হয়েছিলেন তিনি।
রায় ঘোষণার সময় কুয়ালালামপুর হাই কোর্টের বিচারক মোহাম্মদ জাইনি মাজলান বলেছেন, কারাদণ্ডের পাশাপাশি রসমাহকে ৯৭০ মিলিয়ন মালয়েশিয়ান রিংগিত (২১৬ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) জরিমানা করা হয়েছে। দুর্নীতির তিন মামলায় অভিযুক্ত রসমাহকে করা এই জরিমানা মালয়েশিয়ার ইতিহাসে রেকর্ড সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছেন তিনি।
মোহাম্মদ জাইনি বলেছেন, আদালতের বিচারকরা রসমাহ মানসুরের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছেন। তবে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকায় তিনি জামিনে মুক্ত থাকবেন।
রায় ঘোষণার পরপরই বিচারকের সামনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথা বলেন রসমাহ। এ সময় ঐতিহ্যবাহী মালয়েশিয়ান লম্বা ব্লাউজ আর স্কার্টের হলুদ রঙের বাজু কুরুং এবং তার সাথে মিলিয়ে মাথায় স্কার্ফ পরিহিত অবস্থায় দেখা যায় তাকে।
অশ্রুসিক্ত চোখে বিচারককে তিনি বলেন, ‘আমাকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, আজ যা ঘটেছে তাতে আমি খুব দুঃখ পেয়েছি। কেউই আমাকে অর্থ গ্রহণ করতে দেখেনি। কেউ আমাকে অর্থ গণনা করতেও দেখেনি... কিন্তু তারপরও যদি এটাই হয়, তাহলে আমি এটা ঈশ্বরের কাছে ছেড়ে দিচ্ছি।’
আদালতে মালয়েশিয়ার সাবেক এই ফার্স্ট লেডির আইনজীবীরা তার সর্বনিম্ন এক দিনের কারাদণ্ডের সাজা চেয়েছিলেন। কিন্তু সরকারি আইনজীবীরা দুর্নীতি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় রসমাহর ‘সর্বোচ্চ বা সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাছাকাছি’ সাজার আবেদন করেন।
৭০ বছর বয়সী রসমাহ ২০১৬ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে একটি কোম্পানিকে নাজিবের সরকারের কাছ থেকে ২৭৯ মিলিয়ন ডলারের সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্পের কাজ পেতে সহায়তার জন্য ঘুষ চাওয়া এবং গ্রহণের তিনটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, সেই কোম্পানির একজন কর্মকর্তার কাছ থেকে ১৮৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন রিঙ্গিত ঘুষ দাবি করেছিলেন রসমাহ। পরে ৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন রিঙ্গিত ঘুষ গ্রহণ করেন তিনি। এর বিনিময়ে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পেয়ে যায় ওই কোম্পানি।
তবে নিজের ব্যক্তিগত সহকারীর পাশাপাশি প্রকল্পের সাথে জড়িত বেশ কয়েকজন সরকারি এবং কোম্পানির কর্মকর্তা তাকে ফাঁদে ফেলেছেন বলে আদালতের কাছে যুক্তি দিয়েছেন রসমাহ। যদিও আদালত তার এই যুক্তি নাকচ করে দিয়েছে।
পৃথক মামলায় অর্থপাচার এবং কর ফাঁকির ১৭টি অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন রসমাহ মানসুর। তার আইনজীবী জগজিৎ সিং বলেছেন, রায়ে রসমাহ হতবাক হয়েছেন। রায়ের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই আইনজীবী বলেন, ‘আজ যে জরিমানা আরোপ করা হয়েছে তা নজিরবিহীন... তিনি (রসমাহ) ক্ষুব্ধ। সূত্র: রয়টার্স, দ্য স্টার মালয়েশিয়া।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন