রফতানিমুখী শিল্পকারখানায় বিশেষ ব্যবস্থায় চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। একই সঙ্গে পোশাকখাতে উৎসে কর ১ শতাংশ পর্যায়ে রাখারও দাবি জানাই বিজিএমইএ। গতকাল শনিবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে আয়োজিত ‘মেইড ইন বাংলাদেশ উইক’ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। এসময় তিনি জানান, আগামী ১২ নভেম্বর সপ্তাহব্যাপী ‘মেড ইন বাংলাদেশ উইক’ শুরু হবে। মোট নয়টি সেশনে অনুষ্ঠেয় এ আয়োজনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় সংসদে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে পোশাকখাতসহ রফতানি খাতের উৎসে করহার দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হয়। বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বিজিএমইএ প্রস্তাবিত রফতানি আয় থেকে কর্তন করা উৎসে কর দশমিক ৫ শতাংশ আগামী ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর রাখার দাবি জানিয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বর্তমান বোর্ড দায়িত্ব গ্রহণের পর গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত পোশাকশিল্পে টানা প্রবৃদ্ধি হয়েছি, যেটি উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ছিল। যে কারণে গত অর্থবছরে এ শিল্পখাত থেকে রফতানি হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে জুলাই ও আগস্টে প্রবৃদ্ধি ভালো ছিল। কিন্তু দু’মাসে আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি ক্রয়াদেশ ক্রমশ কমছে।
তিনি বলেন, আমাদের অন্যতম রফতানিবাজার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ও মন্দার কারণে আগামী মৌসুমের জন্য কার্যাদেশ প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে এসেছে। খুচরা বিক্রেতারা ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির বিশ্ববাজারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সংগ্রাম করছে। অনেক ব্র্যান্ডের খুচরা বিক্রয় হ্রাস পেয়েছে। এসব বিবেচনা করে আগামী মাসগুলোতে আমাদের রফতানি প্রবৃদ্ধি ঋনাত্মক হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ফাস্ট ফ্যাশনের এ যুগে আমাদের বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। ফাস্ট ফ্যাশন কনসেপ্টে সাপ্লাই চেইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে ঘড়ির কাটা ধরে উৎপাদন, পণ্যের ফাস্ট ডেলিভারি করতে হয়। অর্থাৎ উৎপাদন থেকে ডেলিভারি সব ধাপে সম্ভাব্য ন্যূনতম সময়ের মধ্যে কাজ করতে হয়। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে রফতানি তরান্বিত করার জন্য আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়াগুলো সহজ করা করা জরুরি। এগুলো করা হলে আমরা ফাস্ট ফ্যাশনের সুযোগগুলো গ্রহণ করতে সক্ষম হবো।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সঙ্কট চলছে। স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কটের প্রভাব আমাদের পোশাক শিল্পেও পড়ছে। এতে করে শিল্পে ব্যয় বাড়ছে দুভাবে। বিদ্যুতের অপ্রতুলতার কারণে কারখানাগুলোতে ডিজেল দিয়ে জেনারেটর চালানো হচ্ছে। অন্যভাবে অধিক সময় জেনারেটর চালানোর কারণে এগুলো দ্রুত বিকল হচ্ছে। এতে করে শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে।
এসময় তিনি সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, রফতানিমুখী শিল্পকারখানাগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থায় চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ করা হোক। একই সঙ্গে আরেকটি অনুরোধ হলো আমাদের উৎসে কর যা এ বছরে ১ শতাংশ করা হয়েছে, সেটি পূর্ববর্তী বছরের মতো একই পর্যায়ে রাখা হোক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন