বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

যানজটে আর কত নাকাল হবে নগরবাসী?

| প্রকাশের সময় : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

সমুদ্রে মৃদু নিম্নচাপের প্রভাবে ঢাকাসহ সারাদেশে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে খানাখন্দে ভরা ঢাকা নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলো হাটু পানিতে তলিয়ে গেছে। বিআরটি, মেট্টোরেলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উন্মুক্ত স্থানগুলো একেকটি বিপদসঙ্কুল ফাঁদ হয়ে উঠেছে। উন্নয়ন কাজের জন্য রাস্তার মাঝখানে টিনের বেড়া দেয়ার কারণে যান চলাচলের রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে পড়ায় এসব রাস্তায় যানজট চরম আকার ধারণ করেছিল। বৃষ্টিতে খানাখন্দ ও গর্তগুলো পানিতে ভরে তা বিপজ্জনক হয়ে ওঠায় গত দুইদিনে অস্বাভাবিক যানজটে অবর্ননীয় দুর্ভোগের শিকার হয়েছে নগরবাসি। মঙ্গলবার সারাদিন রাজধানীর ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়কসহ উত্তরা-রামপুরা, টঙ্গি থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত সবগুলো সড়কে গণপরিবহন যাত্রীরা ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় স্থবির বসে থাকতে বাধ্য হয়েছে। সকালে অফিসগামী পেশাজীবী ও কর্মজীবী মানুষ জীবিকা ও কর্মের তাগিদে বেরিয়ে সময়মত কর্মস্থলে পৌছতে না পেরে আক্ষেপ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে রাস্তায় আটকে থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌছতে পারেনি। বৃষ্টিতে রাস্তায় পানিবদ্ধতার কারণে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাওয়ার বিকল্প ব্যবস্থাও রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগের মাত্রা ছিল অনেক বেশি।
হঠাৎ করেই ঢাকায় এমন অবস্থা দেখা দেয়নি। বছরের পর বছর ধরে এ পরিস্থিতি একটি ক্রমাবনতিশীল বাস্তবতায় রূপ নিয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন হঠাৎ করে পরিকল্পনা মাফিক করে ফেলা যায়না। তবে তথাকথিত উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে মাত্রাহীন যথেচ্ছাচার ও নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবে নগর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও ব্যর্থতা সীমাহীন। এক বিআরটি প্রকল্প চার বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ১০ বছর পেরিয়ে এসেও তা নগরবাসির দুর্ভোগের সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিমানবন্দরের সাথে ঢাকার সড়ক যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাটির সাথে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২৩টি জেলার মহাসড়কগুলোর সংযোগ রয়েছে। এভাবে এহেন গুরুত্বপূর্ণ সড়ককে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে দখলকৃত ও বিপজ্জনক অবস্থায় ঠেলে দেয়ার কি কোনো আশু সমাধান নেই? এই প্রশ্ন এখন সকল ভুক্তভোগী জনসাধারণের। রাস্তায় ৫মিনিটের গন্তব্যে পৌছতে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে, তা শুধু নয়, বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার ছিঁড়ে চলন্ত প্রাইভেট কারের উপর পড়ে সম্প্রতি ৫জন আরোহীর করুণ মৃত্যু ঘটেছে। সে মৃত্যুর দায় কেউ নিচ্ছে না, মৃত্যুর শিকার পরিবারগুলো এখনো ক্ষতিপুরণ ও বিচারহীনতার অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে বিআরটি প্রকল্পে গার্ডার ছিঁড়ে ৫জন নিহতের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দায় এড়িয়ে এককভাবে চীনা ঠিকাদারের উপর দায় চাপিয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান(বিআইডিএস)’র ডিসেম্বরে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায়, ঢাকার যানজটে বছরে আর্থিক ক্ষতি ১ লক্ষকোটি টাকা। এটি জিডিপি’র প্রায় ৩ ভাগ। মানুষের কর্মঘন্টা অপচয়ের পাশাপাশি অপরিকল্পিত নগরায়ণের পরোক্ষ ক্ষতি যুক্ত করলে তা ৬ শতাংশের উপরে এবং পরিবেশ দূষণের সাথে যানজট-দুর্ভোগের কারণে মানুষের শারিরীক-মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতির হিসাব যুক্ত করলে তা ১২ শতাংশের উপরে গিয়ে দাঁড়াবে বলে উক্ত গবেষনা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। গত এক দশক ধরেই অনবরত উন্নয়নের গীত শোনা যাচ্ছে। এ সময়ে ঢাকা শহর বিশ্বে ক্রমশ বসসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে। ইকোনমিস্টের ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের বাৎসরিক রিপোর্টে বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা বিশ্বের ১৪০টি মেগাসিটির মধ্যে সর্বশেষ ১০টির মধ্যে অবস্থান করছে। রাজধানী শহরকে বসবাসের অযোগ্য ও অনিরাপদ রেখে দেশকে উন্নয়নের রোল মডেল বানানো যায়না। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে দুর্নীতি-অপচয়, অস্বচ্ছতা ও লুন্ঠনের বল্গাহীন তৎপরতার শিকার হচ্ছে নগরবাসি। প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেও ঢাকার স্যুয়ারেজ সিস্টেমের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন সম্ভব হয়নি। উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নে অতিমাত্রিক সময়ক্ষেপণ, ভুল নকশা প্রণয়ন এবং বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে ঢাকার রাস্তায় যানজট, পানিবদ্ধতা ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে মানুষ। নগর পরিকল্পনাবিদরা দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে নানা রকম পরামর্শ ও সুপারিশ দিলেও তা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগই দেখা যায়নি। বিশেষত যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুড়ি এবং সময়মত কাজ শেষ করতে না পারার কারণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও কর্তৃপক্ষের ক্ষতিপুরণ বা শাস্তির কোনো দৃষ্টান্ত না থাকায় উন্নয়ন কাজের নামে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলতে কেউ কোনো কিছুর পরোয়া করছে না। নগরবাসিকে এহেন দুর্ভোগ থেকে রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সর্বোচ্চ নজরদারি ও সমন্বয়হীনতা দূর করে সর্বক্ষেত্রে আইনের বাস্তবায়ন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন