বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

নামায না পড়া ও নামাযের ব্যাপারে উদাসীনতার পরিণতি-২

মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহমান | প্রকাশের সময় : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৬ এএম, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আল্লাহ কুরআনে কাফেরদের অনেক ভর্ৎসনা করেছেন। এক জায়গায় তাদের নিন্দা করে বলেছেন : সে বিশ্বাস করেনি এবং নামাযও পড়েনি। বরং সে অস্বীকার করেছে ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। অতঃপর সে দম্ভ করতে করতে তার পরিবারের কাছে চলে গেছে। দুর্ভোগ তোমার জন্য, দুর্ভোগের ওপর দুর্ভোগ। অতঃপর দুর্ভোগ তোমার জন্য, দুর্ভোগের ওপর দুর্ভোগ। (সূরা কিয়ামাহ : ৩১-৩৫)।

এ আয়াতে কাফেরের ভর্ৎসনা করা হয়েছে যে, সে ঈমানও আনেনি এবং নামাযও পড়েনি; বরং কুফরী করেছে এবং আল্লাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। উপরন্তু এগুলোর জন্য তার কোনো অনুতাপ নেই; বরং সে অহঙ্কারের সঙ্গে চলে। আয়াতটির শেষে এই কাফেরদের উপর্যুপরি দুর্ভোগের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।
কাফেরের নিন্দার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে কুফরী করেছে; ঈমান আনেনি। আর ঈমান ছাড়া আমলের (তা যত বড়ই হোক) কোনো মূল্য নেই। আয়াতটিতে কাফেরের কুফরীর পাশাপাশি নামায না পড়ার নিন্দা করা নামায তরক করার ভয়াবহতা তুলে ধরে। এ থেকে বোঝা যায়, নামায না পড়া গুরুতর পাপ। সকলের উচিত দম্ভ-অহঙ্কার ছেড়ে ঈমান আনা, নামায পড়া। পক্ষান্তরে ঈমান ও নামায থেকে বিমুখ থাকা আল্লাহর কাছে অতি নিন্দনীয় এবং এর পরিণতি ভয়াবহ।

কুরআনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি পরকালে জান্নাতী ও জাহান্নামীদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হবে। এরকম একটি আলাপ সূরা মুদ্দাসসিরে উল্লেখিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন : তারা (ডানের লোকেরা) জান্নাতে থাকবে। তারা জিজ্ঞাসাবাদ করবে অপরাধীদের সম্পর্কে, কোন্ জিনিস তোমাদের জাহান্নামে দাখিল করেছে? তারা বলবে, আমরা নামাযীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। আমরা মিসকীনদের খাওয়াতাম না। আর (অসার) আলাপে লিপ্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে আমরাও তাতে লিপ্ত হতাম এবং আমরা বিচার দিবসকে অস্বীকার করতাম। পরিশেষে নিশ্চিত বিষয় আমাদের কাছে এসে গেল। (সূরা মুদ্দাসসির : ৪০-৪৭)।

এখানে জান্নাতীদের জিজ্ঞাসার জবাবে জাহান্নামীরা নিজেরাই তাদের জাহান্নামে যাওয়ার কারণ বলে দিয়েছে। তাদের এই স্বীকারোক্তি থেকে স্পষ্ট যে, নামায না পড়া, সম্পদের হক আদায় না করা, অসার কথাবার্তায় জড়িত হওয়া এবং বিচার দিবসকে অস্বীকার করার পরিণাম জাহান্নাম। আল্লাহ কুরআনে জাহান্নামীদের এই স্বীকারোক্তি উল্লেখ করে তাঁর বান্দাদের সতর্ক করছেনÑ তারা যেন জাহান্নামীদের পথে না চলে। বরং তারা ঈমান আনে। নামায পড়ে। সম্পদের হক আদায় করে। অসার কথাবার্তা এড়িয়ে চলে।

আল্লাহ সূরা মারইয়ামে হযরত যাকারিয়া (আ.), ইয়াহইয়া (আ.), ঈসা (আ.), মূসা (আ.), হারূন (আ.), ইবরাহীম (আ.), ইসমাঈল (আ.), ইসহাক (আ.), ইদ্রিস (আ.)-এর আলোচনা করেছেন। তাঁরা সবাই আল্লাহর মনোনীত বান্দা ও নবী ছিলেন। তাঁদের আলোচনার শেষে আল্লাহ বলেছেন : তাদের পরে অযোগ্য স্থলাভিষিক্তরা এলো, যারা নামায নষ্ট করে ফেলল এবং খাহেশাতের পেছনে পড়ে গেল। সুতরাং তারা শিগগিরই গোমরাহীর (পরিণামের) সম্মুখীন হবে। (সূরা মারইয়াম : ৫৯)।

এ আয়াতে ওই নবীদের পরে আসা অযোগ্য জাতি-গোষ্ঠীর নিন্দা করা হয়েছে যে, তারা দুনিয়ার ভোগ-বিলাস ও প্রবৃত্তির কামনা-বাসনায় মেতে উঠেছে এবং নামায নষ্ট করে ফেলেছে। নামায নষ্ট করার একটি ভয়াবহ দিক হলো নামায একেবারে না পড়া। এমনিভাবে সময়ের ভেতর না পড়াও নামায নষ্ট করারই অন্তর্ভুক্ত।

এ আয়াত থেকে অনুমান করা যায়, নামায নষ্ট করা কত গুরুতর গোনাহ। এর কারণে এত কঠিন ভাষায় ভর্ৎসনা করা হয়েছে। এটা আমাদের এই বার্তা দেয়, নামাযের ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে এবং সময়মতো নামায পড়তে হবে। নামায নষ্ট করা যাবে না। নামায নষ্ট করা গোমরাহী। আয়াতটি আরো নির্দেশ করে, পার্থিব বিলাসিতা এবং নফসের খাহেশাতে মত্ত হওয়া বৈধ নয়। কারণ এর ফলে মানুষ আল্লাহ থেকে গাফেল ও বিমুখ হয়ে যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Rabbul Islam Khan ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:২৮ এএম says : 0
নামায না পড়াকে যারা ছোটখাট বিষয় মনে করেন, তাঁদের উদ্দেশ্যে বলছি- আসুন যেনে নেই নামাজ না পড়ার ভয়াবহতা কত । আল্লাহ কুরআনে বার বার জোর দিয়ে বলেছেনঃ "যালিকা ইয়াওমুল হাক্কু" - এই দিন নিশ্চিতই আসবে! যারা নামায পড়বেনা তাদের মাথা পাথর দিয়ে আঘাত করে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেওয়া হবে...
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:২৮ এএম says : 0
নেক্সট টাইম ফরয নামায ত্যাগ করার আগে চিন্তা করবেন, আমি কি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কথা বিশ্বাস করি? যদি বিশ্বাস করে থাকেন, তাহলে আপনি ফরয নামায কোনোমতেই ত্যাগ করতে পারবেন না। আর যদি ত্যাগ করেন, তাহলে আপনি কি আল্লাহর কথা বিশ্বাস করলেন?
Total Reply(0)
Ismail Sagar ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:২৯ এএম says : 0
একটু চিন্তা করে দেখুন - এই আয়াতে আসলে কাদের কথা বলা হয়েছে... "আর মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আদৌ তারা ঈমানদার নয়।" (বাক্বারাহঃ ৮) *এই আয়াতে যাদের কথা বলা হয়েছে এরা আসলে মুনাফেক, মুখে দাবী করে আমরা ঈমানদার অথচ তাদের অন্তরে আল্লাহর প্রতি ঈমান নেই...
Total Reply(0)
Md Ali Azgor ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:২৯ এএম says : 0
হে আল্লাহ আমাদের অতীতের ভুল ত্রুটিগুলো মাফ করো এবং ভবিষ্যতে সমস্ত গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তোওফিক দান করো, আমীন।
Total Reply(0)
Antara Afrin ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:২৯ এএম says : 0
নামায ওয়াক্ত অনুযায়ীই পড়তে হবে, নিজের মন মতো সময়ে পড়লে গ্রহণযোগ্য হবেনাঃ "ইন্নাস-সালাতি কানাত আ'লাল মুমিনিনা কিতাবান মাওক্বুতা।" অর্থঃ নিশ্চয়ই নামায মুমিনদের জন্য সুনিদিষ্ট সময়ের সাথেই ফরয করা হয়েছে। সুরা আন-নিসা, আয়াত ১০৩।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন