ভারতের ন্যাশনাল কংগ্রেসের সাবেক নেতা গুলাম নবি আজাদ বলেছেন, ৩৭০ ধারা জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়নে বাধা ছিল না এবং দাবি করেছেন যে, পূর্ববর্তী রাজ্যটি ৩০ সূচকে জাতীয় গড় থেকে ভাল পারফরম্যান্স করেছিল।
জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক এই মুখ্যমন্ত্রী গতকাল দাবি করেছেন যে, তিনি ৩৭০ ধারা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনাকে কখনই অস্বীকার করেননি, তবে বলেন যে, এটি একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া হতে পারে, শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তা অবিলম্বে করতে পারেন।
আজাদ অধিকৃত কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি (অনুচ্ছেদ ৩৭০) কোনো বাধা ছিল না। (জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে) আমি একটি তিন শিফটের কাজের ব্যবস্থা চালু করি, বিধানসভার বৈঠক সপ্তাহে ছয় দিন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল, স্কুল ও কলেজগুলোর একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছিল এবং পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল’।
সম্প্রতি কংগ্রেস ছেড়ে আসা সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেছেন, তিনি ৩৭০ ধারা নিয়ে সংসদে মোদিকে পাল্টাও দিয়েছিলেন। ‘আমি এ বিষয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাল্টা বলেছি। আমি ৩০টি সূচক হাইলাইট করেছি যেখানে ৩৭০ অনুচ্ছেদের অধীনে জম্মু ও কাশ্মীর জাতীয় গড়কে ছাড়িয়ে গেছে এবং ৪০টি সূচক যেখানে এটি গুজরাটের চেয়ে ভাল ছিল’।
তিনি যোগ করেছেন, ‘আমি সংসদে বলেছিলাম, যেহেতু জম্মু ও কাশ্মীর বেশিরভাগ সূচকে ভাল ছিল, গুজরাটকে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা উচিত এবং সেখানে একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নর পাঠানো উচিত’।
৩৭০ অনুচ্ছেদ পুনরুদ্ধারের বিষয়ে আজাদ বলেন, তিনি কখনই এর সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেননি, তবে এটি হতে সময় লাগতে পারে বলে মনে করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি বলিনি ৩৭০ ধারা পুনরুদ্ধার করা যাবে না। হয় মোদির মাধ্যমে এটি পুনরুদ্ধার করা হবে, যেমনটি তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতার সাথে খামার আইনের মাধ্যমে করেছিলেন, বা সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকতে হবে। আমি এ বিষয়ে তাকে বা তার মন্ত্রিসভাকে বোঝাতে পারি না’।
আজাদ বলেন, তিনি সংসদ থেকে প্রাপ্ত বিবরণ অনুসারে লোকসভার ৮৬ শতাংশ সদস্য বাতিলের পক্ষে এবং ১৪ শতাংশ এর বিপক্ষে ছিল।
‘এখান থেকে (জম্মু ও কাশ্মীর) কোন দল কি ৮৬ শতাংশ পেতে পারে? আমরা প্রার্থনা করতে পারি যে, একদিন আমরা দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাব, কিন্তু তা আজ হতে পারে না, আগামী বছরের মার্চে হতে পারে না। যদি এটি ডিসেম্বরের মধ্যে হতে হয় (এই বছর), কেবল মোদি সাহেবই তা করতে পারেন’ তিনি বলেছিলেন।
তিনি বলেন, অন্য পথ সুপ্রিম কোর্ট।
‘সুপ্রিম কোর্টে মামলা হওয়ার পর তিন বছরেরও বেশি সময় কেটে গেছে। এরপর থেকে অনেক প্রধান বিচারপতির পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু কেউ পিটিশনের প্রথম পাতা পর্যন্ত খোলেননি। শুনানির জন্য কোনো তারিখ দেওয়া হয়নি। বিচারকাজ শুরু হলে কত বছর লাগবে এবং কার পক্ষে সিদ্ধান্ত হবে, আমরা জানি না’। তিনি বলেন, ‘সুতরাং, আমরা এমন কোনো সেøাগান নিয়ে আসব না যা ন্যায্য, ন্যায়সঙ্গত এবং সম্ভব নয়। আমি কোনো মিথ্যা আশা দিতে চাই না, জনগণ আমাদের ভোট দিন বা না দেন’।
আজাদ বলেন, ৩৭০ ধারাটি সম্মানের যোগ্য, সেখানে অন্যান্য সমস্যাগুলোও রয়েছে, যা উন্নয়ন এবং শাসনের ক্ষেত্রে সংশোধন করা দরকার।
তিনি বলেন, ‘৩৭০ ধারা পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আমরা নিষ্ক্রিয় বসে থাকতে পারি না’। তিনি জম্মু ও কাশ্মীরে বিজেপির কাছে দ্বিতীয় বাঁশি বাজাচ্ছেন এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে আজাদ বলেন, এটি তিনি নন, তবে কংগ্রেসের কিছু নেতা ছিলেন যারা ‘কংগ্রেসমুক্ত ভারত’ অর্জনে বিজেপিকে সহায়তা করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাকে বিজেপির বন্ধু বলে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বিজেপির প্রকৃত বন্ধু তারাই যারা কংগ্রেসমুক্ত ভারত প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করছে। এটা তাদের বিরুদ্ধে আমার পাল্টা অভিযোগ’।
আজাদ বলেন, কংগ্রেস নেতারা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন, কারণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্যসভায় তার বিদায়ের সময় আবেগপ্রবণ হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি অবশ্যই কিছু ভাল কাজ করেছি...কারণ এই প্রধানমন্ত্রী কারো জন্য এভাবে চোখের পানি ফেলেন না। শুধু সংসদে আমার বক্তৃতা অনুসন্ধান করুন এবং আপনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমার মৌখিক আদান-প্রদান দেখতে পাবেন। সেসব বক্তৃতা দেখে মোদি সাহেবের আমাকে জেলে রাখা উচিত ছিল, কিন্তু তিনি বলেছিলেন যে, তিনি আমার মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন আমার সমস্ত নথি দেখেছেন, তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার নোট দেখেছেন। এটাই (দুর্নীতি) যা আজ বিজেপি ট্র্যাক করছে’।
আজাদ বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী তার জন্য কেঁদেছিলেন কংগ্রেস এই সত্যটি এনকাশ করতে পারে। তিনি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর নাম না নিয়ে বলেন, ‘কিন্তু আপরি কী করলেন? আপনি প্রধানমন্ত্রীকে ২৪ ঘণ্টা গালাগালি করতে থাকেন। ফলে আপনি আপনার নিজের আসনটিও হারিয়েছেন। আপনি যখন কাউকে গালি দিতে থাকেন, তখন সেই ব্যক্তি জনগণের কাছ থেকে সহানুভূতি পায়’। সূত্র : সিয়াসাত ডেইলি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন