শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

মিয়ানমারে উচ্চ প্রতিনিধিদল পাঠানো হোক

| প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

গত কিছুদিন ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে সশস্ত্র সংঘাতের ঘটনা ঘটে চলেছে। জানা গেছে, বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর প্রায় লাগাতার সংঘর্ষ হচ্ছে। এটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এনিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু এই সংঘাত-সংঘর্ষের জের বা প্রভাব সীমান্তের এপারে এসে পড়ায় আমরা সঙ্গতকারণেই উদ্বিগ্ন। গত শুক্রবার উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়া এলাকায় ওপার থেকে ছোড়া মটারের গোলায় এক কিশোর নিহত ও পাঁচজন আহত হয়। এরা সবাই পার্শ্ববর্তী রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা। পরদিন শনিবারও ওপারে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর ওই সীমান্তের তুমব্রু বাজারের পাশে এক কৃষকের বাড়ির আঙিনায় একটি গুলি এসে পড়ে। এরও আগে মিয়ানমার বাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া দুটি গোলা এসে পড়ে। এ ধরনের ঘটনা সীমান্তে নিরাপত্তার যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে, বাংলাদেশ তা উপেক্ষা করতে পারে না। বাংলাদেশে দায়িত্বরত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে একাধিকবার ডেকে এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তারপরও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। শুক্রবারের হতাহতের পর সীমান্তের অধিবাসীরা অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র নিরাপদ এলাকায় চলে গেছে। বাংলাদেশের তরফে সাবধানে চলাফেরা করতে বলা হয়েছে। সীমান্তের ওপারে আসলে কী ঘটছে, আমাদের কাছে তার পূর্ণ তথ্য ও চিত্র নেই। বিদ্রোহী বা বিচ্ছিন্নবাদীদের সঙ্গে মিয়ানমার বাহিনীর যুদ্ধ বা সংঘর্ষ নতুন কোনো ঘটনা নয়। অনেকের ধারণা, এখন যে সংঘাত-সংঘর্ষ চলছে, তাতে সেখানেকার রোহিঙ্গারা আরো অসহায় ও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তারা অনেকে বাংলাদেশ আসার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ সীমান্তে যে কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ করায় তারা বিপাকে পড়েছে। বাংলাদেশের এছাড়া কোনো বিকল্পও নেই। এখানে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৩-১৪ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। স্বদেশে প্রত্যাবাসন অনিশ্চয়তায় তারা এখন বাংলাদেশের বোঝা হয়ে উঠছে। অনেকে মনে করেন, অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের রাখাইন থেকে বিতাড়নই চলমান সংঘাত-সংঘর্ষের লক্ষ্য। এ ধারণা কতটা সত্য, খতিয়ে দেখার অবকাশ রাখে বৈকি!

বাংলাদেশ তার প্রতিবেশীদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে একেবারেই নারাজ। তার পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো, সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ ও সার্বভৌম সমতার নীতি অনুসরণ। সীমান্তে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানও তার বিঘোষিত নীতি। যে কারণে ভারত সীমান্তে বিএসএফ কখনো কখনো যুদ্ধপরিস্থিতি তৈরি করলে বিজিবি সে উস্কানিতে পা দেয় না। বিএসএফ বাংলাদেশিদের পাখির মতো গুলি করে মারলেও বিজিবি ভারতীয়দের নিশানা করে একটি গুলিও ছোড়ে না। মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী কিংবা সরকারি বাহিনী বিভিন্ন সময় সীমান্ত লংঘন করেছে, আকাশ বা সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করেছে, গুলি ছুড়েছে, অপহরণ করেছে। অথচ, বাংলাদেশ তার জবাবে অনুরূপ কিছুই করেনি। ধৈর্য ধারণ করেছে এবং কূটনৈতিক পন্থায় সমাধানের চেষ্টা করেছে। এর সুফলও পেয়েছে। পর্যবেক্ষকদের অনেকের অনুমান, বাংলাদেশের সঙ্গে একটা সংঘাত বা যুদ্ধ বাঁধানোর উস্কানি থাকতে পারে মিয়ানমারের দিক থেকে। বাংলাদেশকেও অনুরূপ উস্কানি দেয়ার শক্তির অভাব নেই। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এমন কি ভারতও চাইতে পারে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধুক, সম্পর্কের অবনতি ঘটুক। বাংলাদেশ-মিয়ানমার যুদ্ধ বাঁধলে বা সম্পর্কের অবনতি হলে রোহিঙ্গা মামলা মিটে যাবে, বাংলাদেশে আটকে পড়া রোহিঙ্গারা আর কখনো মিয়ানমারে ফিরতে পারবে না, এমনটা ভাবা কারোই উচিত নয়। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধলে বা সম্পর্কের অবনতি ঘটলে ভূরাজনৈতিক দিক দিয়ে কিছু দেশের বা শক্তির লাভ হতে পারে। সেই লাভের আশায় তারা বাংলাদেশ উস্কাতে পারে। শান্তি ও সুসম্পর্কের খাতিরে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ উভয়কেই এ ব্যাপারে সর্তক ও সাবধান হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের প্রভাব বাংলাদেশে পড়ার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, বাংলাদেশ এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সংযম অনুশীলন করছে।

অন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সংযম অনুশীলন বাংলাদেশের নীতি-কৌশলেরই অংশ। কাজেই, কোনো উস্কানির বশবর্তী হয়ে সংঘাত বা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া সমীচীন হবে না। ষড়যন্ত্র থাকতে পারে, চক্রান্ত থাকতে পারে, কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের জন্য লুক ইস্ট নীতির বাস্তবায়ন জরুরি। এর সম্ভাবনা অপার। কর্ণফুলি চ্যানেল থেকে শুরু করে বৃহত্তম চট্টগ্রামকেন্দ্রিক যে বিশাল উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে, তা দেশকে সমৃদ্ধির নতুন এক দিগন্তে নিয়ে যাবে। মিয়ানমার হয়ে চীনের সঙ্গে কানেক্টিভিটি, মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুরের সংযোগ এই প্রেক্ষাপটে কতটা প্রয়োজনীয়, সহজেই অনুমেয়। পূর্বমুখী কানেক্টিভিটির প্রথম দেশ হিসেবে মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সুসম্পর্ক জোরদার করার বিকল্প নেই। মিয়ানমারের জন্য বাংলাদেশের বন্ধুত্বও আবশ্যক। প্রায় এক মাসের কাছাকাছি হলো মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় সংঘাত-সংঘর্ষ হচ্ছে। বাংলাদেশে গোলাগুলি এসে পড়ছে। মানুষ হতাহত হচ্ছে। সীমান্তবাসী আতংকে দিন কাটাচ্ছে। অথচ, এই সময়ের মধ্যে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা ছাড়া বাংলাদেশের তরফে আর বিশেষ কিছু করা হয়নি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে যেতে পারতো। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হতে পারতো। তাতে দ্রুত সুফল পাওয়া যেতো। আমরা মনে করি, এখনো সে সুযোগ রয়েছে। অবিলম্বে একটি উচ্চ প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে পাঠানো হোক। সেই সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতাও জোরদার করা হোক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, আমরা যুদ্ধ চাই না। তার এ বক্তব্যে বাংলাদেশের তাবৎ মানুষের অভিমতের প্রতিফলন রয়েছে। জাতিসংঘে যাওয়ার যে কথা তিনি উল্লেখ করেছেন, তার আর প্রয়োজন হবে না, যদি মিয়ানমারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। আশা করি, সরকার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
jack ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০৮ পিএম says : 0
মায়ানমারের সাথে আমাদেরকে যুদ্ধ করতে হবে আজকে যদি রোহিঙ্গা মুসলিমদের কে আমরা যুদ্ধের ট্রেনিং দিয়ে পাঠিয়ে দিতাম তাহলে আজকে রোহিঙ্গারা নিজেদের স্বার্থ নিজেরাই উদ্ধার করতে পারত আর আমরা কিভাবে বাধ্য করবো দেশদ্রোহী আল্লাহ দরকার তো আমাদের আর্মি কে ধ্বংস করে দিয়েছে আমাদের দেশপ্রেমিকদের কে ধ্বংস করে দিয়েছে মায়ানমারের সাথে যখন নাফ নদী নিয়ে আমাদের যুদ্ধ হয়েছিল আমাদের দেশ প্রেমিক বিয়ারা মায়ানমারের 600 বর্বর আর্মি কে হত্যা করেছিল আমাদের দেশ প্রেমিক বিডিআর-বিএসএফ কে হত্যা করেছিল
Total Reply(0)
Abdul Quaium Sheikh ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ২:১৯ পিএম says : 0
ঠিক বলেছেন।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন