বছরের শুরুতে হল প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবির আন্দোলন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনের রূপ নিলে তাঁর পদত্যাগ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ঘোষণা দিয়ে আমরণ অনশনে বসেন ২৭ জন শিক্ষার্থী। পরে সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘শিক্ষার্থীদের দাবি’ মেনে নেয়া হবে এমন আশ্বাস দিয়ে অনশন ভাঙানো হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর ‘মামলা তুলে নেয়া হবে’ এমন আশ্বাসের পর আটমাস পেরিয়ে গেলেও এখনো তা মেনে নেয়া হয়নি।
হল প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবির আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে আন্দোলনকারীরা অবরুদ্ধ করলে সেখানে পুলিশি হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, ককটেলে গুরুতর আহত হয়ে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল তৎকালে আইআইসিটির ক্যাফেটেরিয়ার দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সজল কুন্ডু। সেদিন রাত থেকে প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবির আন্দোলন সুর পাল্টে ভিসি’র পতনের ‘একমাত্র দাবি’ আন্দোলনের রূপ নেয়। পুলিশি হামলার পর শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অজ্ঞাতনামা মামলা, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অর্থ সহায়তা প্রদানের দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারসহ আহত সজল কুন্ডুকে ক্ষতিপূরণ দেয়া, ৯ম গ্রেডে চাকুরি প্রদান ও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থার পাশাপাশি চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের দাবি জানায় আন্দোলনকারীরা। তবে প্রায় আট মাস পেরিয়ে গেলেও তাদের অধিকাংশ দাবিই মেনে নেয়া হয়নি। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, ১৬ই জানুয়ারির ওই নারকীয় ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে শাবিপ্রবির ইতিহাসে নজিরবিহীন এই ঘটনার মূল কুশীলব ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন ও আমরণ অনশনের একপর্যায়ে সরকারের উপর মহলের অনুরোধে আমাদের দাবি মেনে নেয়া হবে বলে তাদের দেয়া আশ্বাস নিয়ে ১৬৩ ঘণ্টা পর জাফর ইকবাল স্যার ও ইয়াসমিন ম্যাম ২৭ জন শিক্ষার্থীর অনশন ভাঙান। এরপর শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রীর সাথে ৫টি দাবি এবং দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে ৮দফা প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে শিক্ষামন্ত্রী তাঁর এখতিয়ারভুক্ত দাবি ও প্রস্তাবনাসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। তাঁর এখতিয়ারভুক্ত নয় এমন দাবিগুলোর বিষয়ে সরকারের উচ্চমহলকে অবহিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান। কিন্তুু বর্তমানে আটমাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও আমাদের দাবিগুলোর অধিকাংশই এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। আমাদের প্রধান দাবি মেনে নেয়া হয়নি। মন্ত্রী বলেছিলেন, ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ চ্যান্সেলরের কাছে উপস্থাপন করা হবে। চ্যান্সেলর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু এতদিন পরেও আমরা দেখছি শিক্ষার্থীদের উপর নৃশংস হামলার মূল হোতা ফরিদ উদ্দিন আহমদ শাবিপ্রবির ভিসি পদে বহাল আছেন। সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাসমূহ অবিলম্বে প্রত্যাহার করার কথা ছিল। কিন্তু এত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও মামলাগুলো তোলা হয়নি।
এদিকে সজল কুন্ডুকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা হলেও পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের কথা থাকলেও তা না করে প্রশাসন উল্টো তার ‘একমাত্র রুটিরোজির মাধ্যম- ক্যাফেটেরিয়া’ কেড়ে নিয়েছে বলে জানিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছেন সজল কুন্ডু। গত ১১দিন ধরে প্লেকার্ড হাতে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কেউই তার সাথে যোগাযোগ করেননি বলে জানা যায়। তবে ১১তম দিনে সজলের ‘সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের নামে করা হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, শিক্ষার্থীদের দেয়া প্রতিশ্রুতিসমূহের বাস্তবায়ন ও অন্যায়ভাবে কেড়ে নেয়া কর্মসংস্থান ফিরিয়ে দেয়া’ এ তিন দফা দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন তারা। প্রেসব্রিফিংয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, ১৬ই জানুয়ারির হামলার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী সজল কুন্ডুকে অন্তত ৯ম গ্রেডের একটি চাকরি এবং নগদ ক্ষতিপূরণ দেয়ার স্পষ্ট আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সজল এখনো শিক্ষামন্ত্রী কর্তৃক প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ বা চাকরি কোনোটাই পাননি। উল্টো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তিনি (সজল) যে ক্যাফেটেরিয়াটি চালাতেন সেটিও কেড়ে নেয়া হয়েছে। তার একমাত্র কর্মসংস্থান কেড়ে নেয়ায় এমনিতেই স্পিøন্টার ও বোমার মারাত্মক ক্ষত নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেও হিমশিম খাওয়া সজলের সামনে নতুন আতঙ্ক হয়ে এসেছে চরম অর্থ সঙ্কট। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রথম কিছুদিন সরকারী তত্ত্বাবধানে সজলের নিয়মিত চেকআপের ব্যবস্থা করা হলেও গত তিনমাস ধরে তাও বন্ধ। বারবার এ ব্যাপারে অবহিত করার পরও সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারও তরফ থেকেই আর সজলের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়া হচ্ছে না। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সজলের দাবিগুলোর সাথে সম্পূর্ণভাবে সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করছি। অবিলম্বে তার কর্মসংস্থান ফিরিয়ে দিয়ে পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তার চাকরি ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন