বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

নামাজে ইহকালীন কল্যাণ পরকালীন মুক্তি ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে নামাজের মূল্যায়ন

হাফেজ মাওলানা হুমায়ুন বিন বাসার | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

নামাজ এটি একটি শারীরিক ইবাদত। এটি ইসলামের একটি স্তম্ভ। (বুখারী-মুসলিম)। যথা সময়ে নামাজ আদায় করা মুমিনের উপর ফরজ করা হয়েছে। (সুরা নিসা : ১০৩)। এটি আদায় করার দ্বারা ইহজাগতিক কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি রয়েছে। আল্লাহপাক কুরআনুল কারিমে নামাজ সম্পর্কে প্রায় ১০৯ টি আয়াত অবতীর্ণ করেছেন, যা থেকে নামাজের তাৎপর্য উপলব্ধি করা যায়। আল্লাহপাক বলেন : নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে। (সুরা আনকাবুত : ৪৫)। নিম্নে নামাজের ইহজাগতিক ও পরকালীন কল্যাণ/উপকারীতা, চিকিৎসা বিজ্ঞানে নামাজের মুল্যায়ন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো।
সময়ানুবর্তিতা : নামাজ মানুষ কে সময়ানুবর্তিতা শিক্ষা দেয় ও সময় সম্পর্কে সচেতন করে তুলে। প্রখ্যাত সাংবাদিক, স্বাধীনচেতা, ভারতীয় নেতা, দেওয়ান শিং মাফতুন তিনি তার প্রসিদ্ধ ও বহুল প্রচারিত গ্রন্থ রিয়াসাত এ লিখেছেন, নামাজ এমন একটি আমল যা মানুষ কে সময়ানুবর্তিতা শিক্ষা দেয়। শৃঙ্খলা : নামাজের কাতারে এক ধরনের শৃঙ্খলা দৃশ্যমান। আমাদর উপর কোন প্রকার বল প্রয়োগ ছাড়ায় স্বেচ্ছায় সাচ্ছন্দ্যে সারি বদ্ধ হয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে যায় যা আমাদের কে শৃঙ্খলা শিক্ষা দেয়। এটি শৃঙ্খলা শিক্ষার অন্যতম মাধ্যম।
সামাজিক শিক্ষা : একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে চাইলে সমাজের প্রত্যেক মানুষ কে পরস্পর সমপ্রীতি ও সহানুভূতির মনোভাব নিয়ে চলতে হবে। আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পায়, নামাজে ছোট -বড়, ধনী -গরীব, বর্ণবৈষম্য ও বিভিন্ন ভেদাভেদ ভুলে মিলে মিশে দাঁড়িয়ে যায়। তাই নামাজ সামাজিক শিক্ষা গ্রহনের অন্যতম গুরু। মনোযোগ ও স্থিরতা : প্রত্যেকটি কাজের জন্য গভীর মনোযোগ ও স্থিরতা থাকা চায়। আর যে কাজে গভীর মনোযোগ ও স্থিরতার অভাব রয়েছে সে কাজে পরিপূর্ণ ফল পাওয়া দুরহ ব্যাপার। একজন মুমিন যখন নামাজে দাড়ায় তখন তাকে বিভিন্ন চিন্তা দুরে রেখে সুধু আল্লাহর ধ্যান মনে স্থির রেখে ও মনোযোগের সাথে নামাজের প্রত্যেকটি ধাপ ভালভাবে সম্পাদন করতে হয়। আর নামেজের মাধ্যমেই গভীর মনোযোগ ও স্থিরতা অনুশীলন করা সম্ভব।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে নামাজের মুল্যায়ন : আমরা সারারাত ঘুমিয়ে থাকি। তখন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ হয় নিস্তেজ, অবসাদগ্রস্ত ও বিষন্ন। সঠিক রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাই শরীরে এমন এক ব্যায়ামের প্রয়োজন যাতে রক্ত পূর্নশরীরে পৌছে যেতে সক্ষম হয় এবং শরীর নতুন ভাবে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পায় তাই তাহাজ্জুদ ও ফজর নামাজ দ্বারা আমাদের সেই ব্যায়াম সম্পন্ন হয়। নামাজ উৎকৃষ্ট ব্যায়াম : প্রখ্যাত আমেরিকান ডাক্তার বার্থম জোযিফ এক সাক্ষাৎকারে নামাজ ও ইসলাম সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী নামাজ হলো একটি পরিপূর্ণ ও উপযুক্ত শরীর চর্চা।
একজন পাকিস্তানী ডাক্তার ইউরোপে ফিজিওথেরাপিতে উচ্চ ডিগ্রী অর্জনের জন্য গমন করেন। সেখানে তাকে হুবহু নামাজের মত একটি ব্যায়াম পড়ানো হলো তখন তিনি ওই ব্যায়াম দেখে হতবাক হয়ে পরলেন। অশ্চর্য! আমরা তো এতদিন পর্যন্ত নামাজ কে শুধু ধর্মীয় কর্তব্য মনে করে আসছিলাম। কিন্তু এখন তো দেখছি এর মধ্যে অশ্চর্যজনক রহস্য আছে। এর দ্বারা বড় বড় রোগ-ব্যাধি নিঃশেষ হয়ে যায়। এই ব্যায়াম দ্বারা যে যে রোগ নিরাময় হয় ডাক্তার সাহেব তার একটি তালিকা দিলেন। ১. মানসিক রোগ। ২. স্নায়ুবিক রোগ। ৩. অস্থিরতা, ডিপ্রেশন, ব্যাকুলতার রোগ। ৪. মনস্তাত্ত্বিক রোগ। ৫. হার্ট এর রেগ। ৬. জোড়া রোগ। ৭. ইউরিক এসিড থেকে সৃষ্ট রোগ। ৮. পাকস্থলী ও আলসার রোগ। ৯. ডায়াবেটিস ও তার প্রভাব। ১০. চক্ষু ও গলা রোগ।
পরকালীন কল্যান সমূহ : আল্লাহ পাক বলেন, যাহারা নিজেদের নামাজের হেফাজত করে তারাই, জান্নাতে সম্মানের পাত্র হইবে। (সুরা মাআরিজ : ৩৫)। নবী করীম (সা.) বলেছেন যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সঠিক সময়ে আদায় করিবে আমি তাহাকে নিজ জিম্মাদারিতে জান্নাতে প্রবেশ করাইব। (ইবনে মাযাহ, আবু দাউদ, নাসাঈ)। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর ( রা.) বলেন নবী করীম (সা.) একদিন নামাজ সম্পর্কে আলোচনাকালে এরশাদ করলেন, যে ব্যক্তি নামাযের ইহতিমাম করবে কেয়ামতের দিন নামাজ তার জন্য নূর হবে এবং হিসাবের সময় দলিল হবে এবং নাজাতের উপায় হবে। (মুসনাদে আহমাদ)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন