শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

কোনো অবস্থাতেই ডিম আমদানি করা যাবে না

| প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

মাসের পর মাস ধরে দেশে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়ছে না। গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে দেশে সবধরনের পণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকে। মূল্যবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির কারণে জিনিসপত্রের দাম এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। কোনোভাবেই দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আজ যে দাম, কাল বেড়ে আরেক দাম হয়ে যাচ্ছে। দামের কোনো স্থিতিশীলতা নেই। এতে সীমিত আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জীবনযাপনে টানাপড়েন চলছে। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে নিম্নবিত্তরা। মাছ-গোশতের দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় তাদের পুষ্টিচাহিদা মেটানোর একমাত্র উৎস ছিল ডিম। ডিমকে বলা হয় গরিবের পুষ্টি। সেই ডিমের দামও এখন তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। মাস দেড়েক আগে অন্যান্য জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধির সাথে ডিমের দামও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। ডিমের ডজন ১২০-৩০ টাকা থেকে একলাফে বেড়ে ১৮০ টাকা পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। উৎপাদন খরচ, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে খবর পাওয়া যায়, বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সিন্ডিকেট করে ডিমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকারের কিছু উদ্যোগে কয়েকদিন আগে ডিমের দাম ১৮০ টাকা থেকে কমে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় নেমে আসে। এখন আবার তা বেড়ে ১৫০ টাকা পর্যন্ত হয়েছে।

গার্মেন্ট ও জনশক্তি রফতানি খাতের পর ডিম উৎপাদনের খাতটি স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। দেশে উৎপাদিত ডিম দিয়ে পুরো চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়েছে। প্রায় চার যুগ আগে শুরু হওয়া পোল্ট্রিশিল্প ধীরে ধীরে উন্নতি করে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি শিল্পে পরিণত হয়েছে। ’৮০ দশকে যেখানে এ শিল্পে বিনিয়োগ ছিল ১৫০০ কোটি টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। প্রাণীসম্পদ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ সালে ডিমের উৎপাদন ছিল বছরে ৫৭৪.২৪ কোটি। ২০১৯-২০ সালে এসে তিনগুণের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭৩৬ কোটি। জনপ্রতি বছরে গড়ে ১০৪টি ডিম বেড়ে হয়েছে ১০৪.২৩। এ হিসেবে দেশ ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে করোনা মহামারিতে সবকিছু অচল হয়ে পড়ায় এ খাতটি বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। করোনা প্রকোপ কমায় ধীরে ধীরে খাতটি ঘুরে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আবারও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বিশ্ববাজারে পোল্ট্রি ফিড বা মুরগীর খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় খাতটি সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। উভয়মুখী সংকটের কারণে দেশে এখন পোল্ট্রি খামারের সংখ্যা কমে গেছে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ সালে যেখানে দেশে পোল্ট্রি খামারের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার, তা ১ লাখ কমে এখন ৬০ হাজারে নেমেছে। দেখা যাচ্ছে, এ খাতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে। বিদ্যমান খামারের মাধ্যমেই উৎপাদিত ডিম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা সম্ভব হয়েছিল। তবে বিশ্ববাজারে পোল্ট্রিফিডের দাম বৃদ্ধি ও বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেট ও মনোপলির কারণে ডিমের দাম বেড়ে এখন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ পুষ্টিহীনতার শিকার হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, জিনিসপত্রের দাম কম-বৃদ্ধির বিষয়টি উৎপাদন ও পরিবহন খরচের সাথে সম্পর্কিত। এতে দামের কিছু হেরফের হতে পারে। দাম বৃদ্ধি পেলেও তা সহনীয় ভারসাম্যমূলক পর্যায়ে থাকে। দেখা যাচ্ছে, বিগত কয়েক মাসে যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, তা একেবারে লাগামহীন হয়ে পড়েছে। অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বিশ্ববাজারের দোহাই দিয়ে তাদের ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে। যতটা বাড়ার কথা, তার চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। দামবৃদ্ধির ক্ষেত্রে অজুহাতই তাদের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো যুক্তি ও বিবেকের ধার ধারছে না। বাজারে গিয়ে দরিদ্র সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ছে। মাছ-গোশতের পরিবর্তে যে ডিম ও ব্রয়লার মুরগী তাদের পুষ্টির অন্যতম উৎস হয়েছিল, তাও এখন তাদের সাধ্য ও সহ্য ক্ষমতার বাইরে। আয়ের সাথে ব্যয়সংকুলান করতে পারছে না।

ডিমের দাম বৃদ্ধিকে অজুহাত দেখিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ পোল্ট্রি খাতটিকে অস্থিতিশীল ও ধ্বংস করার জন্য একটি চক্র উঠেপড়ে লেগেছে। চক্রটি এখন ডিমের দাম কমানোর অজুহাতে আমদানির পরামর্শ ও পাঁয়তারা করছে। যদি ডিম আমদানি করা হয়, তাহলে এ খাতটি যে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে দেশের অর্থনীতির বিপুল ক্ষতি হবে, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। হিসাব অনুযায়ী, পোল্ট্রি খাতে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে এখন ৬০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখাতে কর্মরতদের প্রায় ৪০ শতাংশ নারী, যা গার্মেন্ট খাতের পর সর্বোচ্চ। এর সাথে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের সাথে জড়িয়ে আছে আরও লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। সবমিলিয়ে পোল্ট্রিখাতের ওপর প্রায় দেড়কোটি মানুষ নির্ভরশীল। জিডিপিতে এ খাতের অবদান ২.৪ শতাংশ। অর্থনীতির এই বিশাল খাত ধ্বংস করার জন্য একটি চক্র ডিম আমদানির কথা বলছে। এটা কোনোভাবেই করতে দেয়া যাবে না। যদিও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, কোনো অবস্থাতেই ডিম আমদানি করতে দেয়া হবে না। তাকে ধন্যবাদ জানাই এই বক্তব্য দেয়ার জন্য। এ প্রেক্ষিতে, সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে কিভাবে ডিমের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা যায়, তা নিয়ে সুচিন্তিত পরিকল্পনা করা অপরিহার্য। খাদ্য, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে পোল্ট্রি খামারিদের প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পোল্ট্রি খাতকে বাঁচাতে এবং উৎপাদন অব্যাহত রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:৩৫ পিএম says : 0
এই সরকার আছে কিভাবে জনগণকে ধ্বংস করতে হবে দেশটাকে ধ্বংস করতে হবে সবকিছুতেই পরনির্ভরশীল করে রেখে দিয়েছে আমাদের দেশটাকে আল্লাহ এদেরকে ধ্বংস করে তোমার আইন দিয়ে আমাদের দেশ চালাও তাহলে আমরা নিজেরাই নিজেদের সবকিছু উৎপাদন করতে পারব চায়না থেকে উন্নত হতে পারব
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন