মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মিয়ানমারে অস্থিরতা, সংঘাত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দুরূহ করে তুলেছে’

নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞা মঙ্গল বয়ে আনে না : জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ এবং একে অপরের ওপর নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিশ্ব বিবেকের কাছে আমার আবেদন, অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ, স্যাংশন বন্ধ করুন। শিশুকে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা দিন। শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন। জাতিসংঘ সদর দফতরে সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। এ সময় তিনি মিয়ানমারের চলমান সংঘাত ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতির বিষয়ে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মিয়ানমারে অস্থিরতা, সংঘাত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দুরূহ করে তুলেছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ মেয়াদে অবস্থান আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিতে ফেলছে।

কোভিড-১৯ মহামারি প্রাদুর্ভাবের পর এই প্রথম ১৯৩টি সদস্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সশরীরে উপস্থিতির মাধ্যমে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নিউইয়র্কে সংস্থার সদর দফতরে গত ১৩ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া অধিবেশন চলবে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। শেখ হাসিনার ভাষণে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, শান্তি ও স্থিতিশীলতা, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, করোনা মহামারি, ফিলিস্তিন এবং অভিবাসন বিষয়ক বৈশ্বিক ও বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখযোগ্যভাবে স্থান পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে মানবাধিকার ও শান্তির প্রতি অঙ্গীকার তুলে ধরেন। জাতিসংঘ ব্যবস্থার প্রতি সমর্থন জানানোর পাশাপাশি করোনা মহামারির শিক্ষা নিয়ে এটি সংস্কারের আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধ বা একতরফা জবরদস্তিমূলক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার মতো বৈরীপন্থা কখনো কোনো জাতির মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। পারস্পরিক আলাপ-আলোচনাই সঙ্কট ও বিরোধ নিষ্পত্তির সর্বোত্তম উপায়। আমরা বিশ্বাস করি যে সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধান না করে আমরা শান্তি বজায় রাখতে পারি না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাতের অবসান চাই। নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে নারী, শিশুসহ ও গোটা মানবজাতিকেই শাস্তি দেওয়া হয়। এর প্রভাব কেবল একটি দেশেই সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং সকল মানুষের জীবন-জীবিকা মহাসঙ্কটে পতিত হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। মানুষ খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। বিশেষ করে, শিশুরাই বেশি কষ্ট ভোগ করে। তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে হারিয়ে যায়। তিনি বলেন, আমরা দেখতে চাই, একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব- যেখানে থাকবে বর্ধিত সহযোগিতা, সংহতি, পারস্পরিক সমৃদ্ধি এবং ঐকবদ্ধ প্রচেষ্টা। আমাদের একটি মাত্র পৃথিবী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই গ্রহকে আরো সুন্দর করে রেখে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব।

শেখ হাসিনা বলেন, এই অধিবেশন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সঙ্গে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন, সহিংসতা ও সংঘাত, করোনা মহামারির মতো একাধিক জটিল এবং বহুমাত্রিক প্রতিকূলতায় পৃথিবী নামক আমাদের এই গ্রহ জর্জরিত। মানবিক চাহিদা গভীর হচ্ছে, জলবায়ু লক্ষ্যগুলো মূলত অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে, বৈষম্য আরো প্রকট হচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্ব নেতারা সাধারণ পরিষদ হলে ব্যক্তিগতভাবে বিবৃতি বিনিময় করবেন। তিনি বলেন, গত আড়াই বছরে বিশ্ব যখন করোনাভাইরাস মহামারির বিধ্বংসী প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধার করতে শুরু করেছে, তখন রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বিশ্বকে একটি সম্মিলিত অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে সহায়তা-প্রার্থী ঝঁকিপূর্ণ দেশগুলো এখন আরো প্রতিকূলতার মুখে পড়েছে। বর্তমানে আমরা এমন একটি সঙ্কটময় সময় অতিক্রম করছি, যখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক পারস্পরিক সংহতি প্রদর্শন করা আবশ্যক। আমাদের প্রমাণ করতে হবে যে, সঙ্কটের মুহূর্তে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো জাতিসংঘ। তাই সর্বস্তরের জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জনের জন্য জাতিসংঘকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সকলের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করতে হবে।

‘গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ’ গঠন করায় জাতিসংঘের মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই গ্রুপের একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে, আমি বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব ও সঙ্কটের গভীরতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি বৈশ্বিক সমাধান নিরূপণ করতে অন্যান্য বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি জাতির পিতার রেখে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এর উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ জন্মলগ্ন থেকেই এই প্রতিপাদ্য-উদ্ভূত জোটনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করে আসছে।

শেখ হাসিনা ১৯৭৪ সালের ২৫-এ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণের একটি চুম্বকাংশ উদ্ধৃত করে বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন ‘শান্তির প্রতি যে আমাদের পূর্ণ আনুগত্য তা এই উপলব্ধি থেকে জন্মেছে যে, একমাত্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই আমরা আমাদের কষ্টার্জিত জাতীয় স্বাধীনতার ফল আস্বাদন করতে পারবো এবং ক্ষুধা, দারিদ্র্য, রোগ-শোক, অশিক্ষা ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য আমাদের সকল সম্পদ ও শক্তি নিয়োগ করতে সক্ষম হব’। তিনি বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই বক্তব্য এখনো সমভাবে প্রাসঙ্গিক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্বাস করতেন যে, শান্তি হলো বিশ্বের সকল নারী-পুরুষের আশা-আকাক্সক্ষার বাস্তব প্রতিরূপ। যুদ্ধের ফলে মানবজাতি, বিশেষ করে শিশু ও নারীরা চরম কষ্ট ভোগ করে। কত মানুষ রিফিউজি হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে করোনা মহামারির শুরু থেকে এ সঙ্কট মোকাবিলায় বাংলাদেশ মূলত তিনটি বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রেখে কৌশল নির্ধারণ করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমত, মহামারি সংক্রমণ ও বিস্তাররোধ করতে আমরা জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রসারিত করেছি। দ্বিতীয়ত, আমাদের অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখতে কৌশলগত আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করেছি, এবং আমরা জনগণের জীবিকা সুরক্ষিত রেখেছি। এসব উদ্যোগ মহামারিজনিত মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস করার পাশাপাশি মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সাহায্য করেছে।

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘের কার্যকর ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বিশ্ব নেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালে স্বদেশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে রোহিঙ্গাদের গণহারে বাংলাদেশে প্রবেশের পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরিতে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য অংশীজনদের নিয়ে আলোচনা সত্ত্বেও একজন রোহিঙ্গাকেও তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠানো যায়নি। মিয়ানমারে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সশস্ত্র সংঘাত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনকে আরো দুরূহ করে তুলছে। আশা করি, এ বিষয়ে জাতিসংঘ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Abdus Salam ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:২৭ এএম says : 0
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তার সাহসী ও সুন্দর বক্তব্যের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন।
Total Reply(0)
Atiqur Rahman ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:২৫ এএম says : 0
আপনার সরকার ব্যবস্থা দেশের জনগণকে অস্থির করে তুলছে
Total Reply(0)
Md Alom Sr. ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:২৮ এএম says : 0
সুন্দর কথা বলেছেন, ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । আল্লাহ আপনার নেক হায়াত দান করূন। আমিন
Total Reply(0)
Haider Ali ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:২৬ এএম says : 0
· আরো নিষেধাজ্ঞা আসছে নাকি?
Total Reply(0)
Md Al Imran ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:২৭ এএম says : 0
বিশ্বের দরবারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সকল পেক্ষাপট তুলে ধরেছের ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকার। তিনি জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় বক্তব্য দিয়েছে তাতে আমাদের বাংলা ভাষা বিশ্বের দরবারে আরো সম্মানের চুড়ায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনি এত দিনের মিশনে সব যায়গায় ইংরেজিতে বক্তব্য প্রদান করেন কিন্তু তিনি জাতিসংঘে ইংরেজি না বলার কারন, বিশ্ব জানুক বাংলা ভাষায় একটা স্বাধীন জাতি তার মনের ভাব প্রকাশ করে। বাংলা আমার মায়ের ভাষা।
Total Reply(0)
Mamun vai ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:২৭ এএম says : 0
দেশের মানুষের সমস্যা সমাধানেও আরো বেশি আন্তরিক হওয়া উচিৎ। এই দেশের মানুষ ন্যায় বিচার ও ন্যায্য অধিকার থেকে মারাত্মক ভাবে বঞ্চিত। রোহিংগা দের জন্য কথা বলার মানুষ আছে কিন্তু এই দেশের জনগণের জন্য কথাটা বলবে কে!! আফসোস!!
Total Reply(0)
Shoab Haji ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:২৭ এএম says : 0
বর্তমান বিশ্বের যে টালমাটাল ও ভয়ানক পরিস্থিতি চলছে তা নিয়ে সুন্দর উপস্থাপন করেছেন,এবং সমাধানের রাস্তা ও দেখিয়েছেন উনার সাহসী বক্তব্যের মাধ্যমে। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী
Total Reply(0)
Abdus Salam ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:২৭ এএম says : 0
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তার সাহসী ও সুন্দর বক্তব্যের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন।
Total Reply(0)
Md Alom Sr. ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:২৮ এএম says : 0
সুন্দর কথা বলেছেন, ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । আল্লাহ আপনার নেক হায়াত দান করূন। আমিন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন