কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় আটক ৫ শিক্ষকসহ ৬জনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। অপরদিকে ঘটনা তদন্তে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের তিন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি শনিবার তদন্ত রিপোর্ট বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃকামরুল ইসলামের নিকট জমা দিয়েছেন বলে জানাগেছে। দায়িত্বে অবহেলা আছে কিনা এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার দেব শর্মাকে শোকজের জবাব দেবার রোববার ছিলো শেষ দিন।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, ২০১৬ সাল থেকে একই পদ্ধতিতে অষ্টম শ্রেণির প্রশ্নপত্র ফাঁসের শুরু করে চক্রটি। তখন উদ্দেশ্য ছিলো নিজেদের বিদ্যালয়ের ফলাফল ভালো করা। আর ফাঁসের সাথে জড়িত ছিলো ২/৩ জন শিক্ষক। পরবর্তীতে চক্রের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয় এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও অন্যান্য জেলায় প্রশ্নপত্র বিক্রি করা হয়। একটি নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে গত ১০/৯/২০২২ তারিখে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে কেন্দ্র সচিবদের মিটিং ছিলো। ঐ মিটিংয়ে নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তার পরের দিন ১১/০৯/২২ তারিখে বোর্ড মিটিংয়ের কথাবলে তিনি এলাকায় অনুপস্থিত ছিলেন। জানাগেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের বায়নার (অগ্রীম) টাকা নিতেই তিনি সেদিন রংপুর গিয়েছিলেন।
প্রশ্নপত্র ফাঁস হবার পর তদন্ত কমিটি তদন্তকালে জানতে পারে শুধু তত্ত্বীয় প্রশ্ন ফাঁস করা হয়নি এর সাথে নৈর্ব্যক্তিক বিষয়ের প্রশ্নপত্রও ফাঁস করা হয়েছে। নৈর্ব্যক্তিক বিষয়ের গণিত (বি-সেট) ৪টি খামের মধ্যে ২০টি প্রশ্নের ১টি খাম, উচ্চতর গণিতের (বি-সেট) ২ খামের মধ্যে ২০টি প্রশ্নের ১টি খাম,পদার্থ বিজ্ঞান (সি-সেট)৩টি খামের মধ্যে ২০টির ১টি খাম, রসায়ন (এ-সেট)৩টি মধ্যে ২০টি প্রশ্নের ১টি খাম, জীব বিজ্ঞান (এ-সেট)৩টি খামের মধ্যে ২০টি প্রশ্নের ১টি খাম, কৃষি বিজ্ঞানের(বি-সেট) ৪টি খামের মধ্যে ২০টি প্রশ্নের ১টি খাম পায়নি।
তত্ত্বীয় বি সেটের গণিতের ১১টি খামের মধ্যে ৫০টির ১টি খাম,কৃষি (তত্ত্বীয়)১০টি খামের মধ্যে ৫০ টি প্রশ্নের ১টি, পদার্থ (তত্ত্বীয়)৪টির মধ্যে ৫০টির ১টি, উচ্চতর গণিত (তত্ত্বীয়)২টি খামের মধ্যে ৫০টির ১টি খাম, রসায়ন ৪টি খামের মধ্যে মধ্যে ৫০টি একটি,জীব বিজ্ঞান (তত্ত্বীয়)৪টি খামের মধ্যে ১টি খাম পায়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানাগেছে। একইভাবে এ- সেটের প্রশ্নপত্রও ফাঁস করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছে , প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান এসএসসি ২য় বিভাগ, এইচএসসি বিশেষ বিবেচনায় (কম্পার্টমেন্টাল) এবং স্নাতক ৩য় বিভাগে পাশ করেন। তিনি শ্বশুরের প্রভাব খাটিয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে প্রথমে হামিদা খানম উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। পরে একই কায়দায় ভূরুঙ্গামারী সদওে অবস্থিত নেহাল উদ্দিন পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিযুক্তি পান। প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হবার পর আর তাকে পিছু তাকাতে হয়নি। তিনি ভূরুঙ্গামারীর বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ স্থানে এবং তার নিজবাড়ী নাহার গঞ্জে কয়েক প্লট জমি কিনেছেন।
এই প্রধান শিক্ষকের অন্যতম সহযোগি মাওলানা যুবায়ের হোসেন ভোটহাট দাখিল মাদরাসার সুপার ছিলেন সেখান থেকে ইসলাম ধর্ম বিষয়ে নেহাল উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ পান। কিন্তু এনটিআরসিএ সার্টিফিকেট ভুয়া সার্টিফিকেটের কারণে তার এমপিও ভুক্তি হয়নি। এব্যাপাওে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলেও প্রধান শিক্ষক তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো খন্ডকালিন শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয়। তিনি খন্ডকালিন শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রশ্নপত্রের গ্রাহক সংগ্রহের দায়িত্বে ছিলেন। শুধু তাইনয়, তিনি ভূরুঙ্গামারী সরকারি কলেজ মসজিদেও ১ বছর থেকে পেশ ইমামের দায়িত্ব পালন কওে আসছিলেন।
প্রধান শিক্ষকসহ ৫ শিক্ষকের সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নেহাল উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান পলাশ। তিনি জানান, শত্রুতাবশত সাধারণ শিক্ষকদের যদি কেউ ফাঁসিয়ে দেয় এই আশংকায় সাধারণ শিক্ষকরা আতংকে রয়েছেন। এদিকে সাধারন শিক্ষার্থীরা জানান, বাংলা ২য় পত্র, ইংরেজী ১ম ও ২য় পত্রের প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও ঐ বিষয়ে সরকার কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। এর ফলে যারা প্রশ্ন পেয়েছে তারা লাভবান হলো আর যারা প্রশ্ন পায়নি তারা বঞ্চিত রয়ে গেল। তারা প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবী করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) আজাহার আলী জানান, পলাতক আসামীকে গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চলছে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলেই আরো কেউ জড়িত আছে কিনা জানা যাবে। ২৯ সেপ্টেম্বর রিমান্ডের শুনানি রয়েছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, ভূরুঙ্গামারীতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মঙ্গলবার নেহালউদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান, সহকারী শিক্ষক যুবায়ের হুসাইন, আমিনুর রহমানকে এবং বৃহস্পতিবার হামিদুল ইসলাম, সোহেল আল মামুন ও অফিস পিয়ন সুজন মিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। দায়িত্ব অবহেলার কারনে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার দেব শর্মাকে কারন দর্শাও নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। এব্যাপারে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন