ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তথ্য অধিকার বাস্তবায়নের জন্য হুমকি। এই আইন ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে। এর ফলে তথ্য অধিকার আইনের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে আর্টিকেল নাইনটিনের ওয়েবিনারে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। আলোচকরা আরও বলেন, অনুমোদিত প্রক্রিয়ায় তথ্য না দেওয়াকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত। এজন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে তথ্য লুকানোর প্রবণতা বন্ধ হতে পারে।
আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উপলক্ষে আর্টিকেল নাইনটিন গতকাল ’’জবাবদিহিতা নিশ্চিতে তথ্য অধিকার আইন’’ শীর্ষক একটি অনলাইন আলোচনা সভার আয়োজন করে।
আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সলের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য কমিশনের গবেষণা, প্রকাশনা ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক ড. মো: আবদুল হাকিম, প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক সোহরাব হাসান এবং দ্যা কার্টার সেন্টার বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অফিসার রুকসানা আফরোজ। অনুষ্ঠানে তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা বিষয়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন আর্টিকেল নাইনটিনের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মরিয়ম শেলী।
ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, ‘’সংবিধানের ৭ এবং ৩৯ নম্বর অনুচ্ছেদ তথ্য অধিকার আইনকে প্রকৃত অর্থেই জনগণের আইনে পরিণত করেছে। তথ্য কমিশন জনগণের জানার অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করছে। অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও তথ্য প্রাপ্তির সুবিধা নিশ্চিত করতে কমিশন বর্তমানে সরকারে একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের সঙ্গে কাজ করছে ।
সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্যই সরকার তথ্য অধিকার আইন করেছিল। কিন্তু বর্তমানে সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে জনগণের জানার যে অধিকার দেওয়া হয়েছিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে তা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি তথ্য অধিকার আইনে আপিল আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সময়সীমা কমিয়ে আনার আহŸান জানান।
ফারুখ ফয়সল বলেন, তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে তথ্য কমিশন একটি শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। স¤প্রতি কমিশন এই আইনে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলার বিষয়ে চাওয়া তথ্য আবেদনকারীকে সরবরাহের আদেশ দেয়। এ ধরনের রায় জনগণ ও গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য অধিকার আইন ব্যবহারের বিষয়ে উৎসাহিত করে।
এদিকে তথ্য অধিকার আইনের বাস্তবায়নে তথ্যের চাহিদা ও সরবরাহ উভয় ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতের বিশেষকরে তরুণ প্রজন্মের অনুঘটকের ভ‚মিকার ওপর গুরুত্ব প্রদানের আহŸান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উপলক্ষে গতকাল এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এই আহŸান জানান।
বাংলাদেশে তথ্য অধিকার আইন প্রণয়নে টিআইবি শুরু থেকেই সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা ও নির্ভরযোগ্য গবেষণা থেকে দেখা যায়, যে দেশে যতো বেশি তথ্যের অবাধ প্রকাশ নিশ্চিত করা যায়, সে দেশে ততো বেশি মানবাধিকার সুরক্ষা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি অর্জিত হয়। আমাদের দেশে আইনটি প্রণয়নের মাত্র ১৩ বছরে দীর্ঘকালের লালিত গোপনীয়তার সংস্কৃতি থেকে উত্তরণ করে স্বচ্ছতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে, সে আশা করা দুরূহ। কেননা, অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের মতো আইনের মাধ্যমে আমাদের দেশে ঔপনিবেশিককালের গোপনীয়তার সংস্কৃতি এখনও সরকারের একটি অংশের মধ্যে রয়ে গেছে। যদিও তথ্য অধিকার আইনের ফলে এ আইনের বিলুপ্তি হওয়ার কথা ছিলো। তথ্য অধিকার আইনের সর্বোত্তম প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় উপযুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক ও মানসিকতার পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য, তথ্য প্রদান ও প্রকাশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তথ্য প্রকাশের মানসিকতা সৃষ্টিতে উদ্যোগী হতে হবে। একইসঙ্গে, তথ্য অধিকার আইন ও তথ্য চাওয়ার প্রক্রিয়া সর্ম্পকে জনসাধারণকে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে সচেতন ও সক্রিয় অনুঘটক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।####
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন