মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামী সংগঠন পিএফআই সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৪:৫৬ পিএম

ভারতে মোদি সরকারের মুসলিম বিদ্বেষী পদক্ষেপের আরেক শিকার ইসলামী সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া বা পিএফআই। ‘সন্ত্রাসী কার্যকলাপে’ সমর্থন দেয়ার অভিযোগে তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভারতের সন্ত্রাস দমন এজেন্সি এনআইএ এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট গত কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন রাজ্যে পিএফআই-এর দপ্তরগুলিতে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আনিস আহমেদ-সহ অনেক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

এক বিবৃতিতে এনআইএ অভিযোগ করেছে যে ধৃতরা 'সন্ত্রাসী কার্যকলাপ'কে সমর্থন করেন। তবে পাল্টা বিবৃতি দিয়ে পিএফআই এই অভিযোগগুলোকে অসাড় এবং চাঞ্চল্যকর বলে অস্বীকার করে। পিএফআইয়ের দপ্তরগুলিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বারে বারে তল্লাশি অভিযান চলেছে আর তাদের নিষিদ্ধ করা হল বুধবার, কিন্তু নিরাপত্তা এজেন্সিগুলি তাদের ওপরে নজর রাখছে সেই ২০০৭ সাল থেকেই।

গত শতাব্দীর ৮০'র দশকে যখন থেকে ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রসার ঘটতে শুরু করেছিল, আর এরপরে যখন ১৯৯২ সালে বাবরী মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছিল, তারপরে "ভারতের সরকার এবং রাজনীতির প্রতি মুসলমানদের চিন্তাভাবনায় একটা বড় ধরণের পরিবর্তন আসতে শুরু করে" বলে মন্তব্য করেছিলেন সমাজবিজ্ঞানী জাভেদ আলম। দিল্লির জামা মসজিদের ইমাম আহমেদ বুখারীর 'আদম সেনা' অথবা বিহারের 'পসমন্দা মুসলিম মহাজ' বা মুম্বাইয়ের 'ভারতীয় সংখ্যালঘু সুরক্ষা মহাসংঘ' প্রভৃতি সংগঠন সেই সময়েই তৈরি হয়েছিল।

আবার কেরালায় 'ন্যাশনাল ডেভলমেন্ট ফ্রন্ট', তামিলনাডুর 'মনিথা নিথি পসারাই' আর 'কর্ণাটক ফোরাম ফর ডিগ্নিটি'র মতো সংগঠনও ভূমিষ্ঠ হয় সেই পর্যায়ে। এই তিনটি সংগঠন ২০০৪ সাল থেকেই নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া-সমঝোতা শুরু করে। ২০০৬ সালের ২২শে নভেম্বর কেরালার কোঝিকোডে এক বৈঠকে এই তিনটি সংগঠন মিশে গিয়ে 'পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া' বা পিএফআই তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর নতুন সংগঠনটি আনুষ্ঠানকিভাবে জন্ম নেয় ২০০৭ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি।

কেরালা, তামিলনাডু আর কর্ণাটকের তিনটি সংগঠন এক ছাতার তলায় চলে আসার পরে গোয়া, রাজস্থান, অন্ধ্র প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ আর মনিপুরের পাঁচটি সংগঠনও মিশে যায় পিএফআইয়ের সঙ্গে। পিএফআই দাবী করে যে তারা ভারতের সব চাইতে দ্রুত বেড়ে চলা 'ক্যাডার-ভিত্তিক গণআন্দোলন'। তেইশটি রাজ্যে তাদের চার লক্ষ সদস্য আছে বলেও দাবী করে পিএফআই। নিজেদের ওয়েবসাইটে পিএফআই আরও দাবী করে যে তাদের উদ্দেশ্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা রক্ষা করা এবং জাতীয় ঐক্য ও অখণ্ডতার জন্য কাজ করা।

তবে পিএফআইয়ের ব্যাপারে ভারত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিটা ভিন্ন। সংগঠনটির বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা, অবৈধ কার্যকলাপে যুক্ত থাকা, সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়ানো এবং ভারতের অখণ্ডতার ক্ষতি করার প্রচেষ্টার অভিযোগ এনেছে নিরাপত্তা এজেন্সিগুলি। সন্ত্রাসবাদে মদত দেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগেও এজেন্সিগুলি একের পর এক মামলা দায়ের করেছে পিএফআইয়ের বিরুদ্ধে।

পিএফআই যদিও তাদের সদস্য সংখ্যা নিয়ে বড় দাবী করে, তবে রাজনৈতিকভাবে তারা কেরালা আর কর্ণাটকের কিছু অংশেই সাধারণ কিছু সাংগঠনিক সাফল্য পেয়েছে। কর্ণাটকে আগামী বছরে বিধানসভার নির্বাচন আছে। ওই রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে পিএফআইয়ের প্রভাব এখন বাড়ছে বলে মনে করা হয়। আবার কেরালায় রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনাগুলিতেও পুলিশ পিএফআইয়ের দিকে আঙ্গুল তুলে থাকে।

কর্ণাটকের স্কুলগুলিতে হিজাব পরার অধিকার নিয়ে যে মামলা চলছে, সেখানে সরকারি আইনজীবী আদালতেই দাবী করেছিলেন যে পিএফআই-ই ঘটনাটিকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করছে। এও বলা হয়েছিল যে তারা মুসলমান নারীদের মাথায় এটা ঢুকিয়ে দিয়েছে যে হিজাব পরতেই হবে।

সেই মামলায় ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া আর ন্যাশনাল উইমেন্স ফ্রন্টেরও নাম উঠে এসেছিল। পিএফআইয়ের সঙ্গে এই সংগঠন দুটিকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া বা এসডিপিআই-কে মনে করা হয় পিএফআইয়ের রাজনৈতিক দল। তাদেরকে অবশ্য নিষিদ্ধ করেনি ভারত সরকার।

সংগঠনটির দাবী অনুযায়ী, এক বৈষম্যহীন সমাজ গড়া তাদের লক্ষ্য। সেই সমাজে প্রত্যেকের জন্য স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার আর নিরাপত্তা থাকবে। এই পরিবর্তন আনার জন্য তারা বর্তমান অর্থনৈতিক নীতিমালাতেও বদল আনতে চায়, যাতে তাদের সেই কাঙ্ক্ষিত সমাজে দলিত, আদিবাসী এবং সংখ্যালঘুরাও অধিকার পায়। সূত্র: বিবিসি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৫:২৪ পিএম says : 0
India itself a terrorist country
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন