২৩ বছরের মধ্যে এই প্রথম বারের মতো ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে সিনেমা হলগুলো খুলে দেয়া হচ্ছে। এর ফলে সংঘাতময় এই অঞ্চলে আবার সিনেমা হলে গিয়ে বড় পর্দায় সিনেমা দেখার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। শনিবার থেকে দুটি হলে সিনেমা প্রদর্শন শুরু হয়েছে আর তৃতীয়টিতে একটু সময় লাগবে। পাশাপাশি কমপ্লেক্সে শিশুদের জন্য আলাদা জোন আছে।
এ উপলক্ষে কাশ্মীরের প্রধান শহর শ্রীনগরের ইনক্স মাল্টিপ্লেক্সকে নতুন করে প্রস্তুত করা হয়েছে। এই মাল্টিপ্লেক্সের আরও শাখা আছে। পিতার সাথে মিলে এটি চালু করেছেন ভিকাশ ধর। তিনি বলছেন, এ পর্যায়ে আসতে তাদের চার বছর লেগেছে। তবে এটা কোন সাধারণ কাজ ছিল না- ধর পরিবার আট কক্ষের একটি গেস্ট হাউজ ভেঙ্গে সিনেমা হলটি তৈরি করেছেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর যার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে বলিউড তারকা আমির খানের লাল সিং চাড্ডা প্রদর্শনের মাধ্যমে।
জম্মু ও কাশ্মীরের গভর্নর মনোজ সিনহা এটিকে "ঐতিহাসিক দিন" আখ্যায়িত করেছেন এবং বলেছেন, "এটি সেখানকার মানুষের আশা, আকাঙ্ক্ষা, আত্মবিশ্বাস ও স্বপ্নের নতুন সূচনা।" এই সিনেমা কমপ্লেক্সটিতে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেমসহ তিনটি সিনেমা হল আছে। ধর পরিবার জানিয়েছে, তারা সংঘাত পীড়িত ওই অঞ্চলের শিশুদের ফ্যান্টাসির জগতে যাওয়ার সুযোগ দিতে চান। "স্কুল ছাড়া কাশ্মীরের শিশুদের জন্য আর কোন বিনোদনের ব্যবস্থা নেই," মিস্টার ধর বলছিলেন।
নব্বইয়ের দশকের শুরু পর্যন্ত ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই অঞ্চলটিতে অনেক সিনেমা হল ছিল। শ্রীনগরেই ছিল প্রায় দশটি। এছাড়া বলিউডের অনেক সিনেমার চিত্রধারণ করা হয়েছে কাশ্মীরে। কিন্তু আশির দশকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই শুরু হলে পরবর্তীতে এর জের ধরে বন্ধ হয়ে যায় সিনেমা হলগুলো। সহিংসতা জোরদার হলে জঙ্গি গোষ্ঠী আল্লাহ টাইগার্স চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও মদের দোকানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরে এসব কমপ্লেক্সগুলোর অনেকগুলো ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পে পরিণত হয়। আর কিছু পরিবর্তন করে দোকানপাট ও হাসপাতাল তৈরি করা হয়।
১৯৯৯ সালে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সিনেমা চালুর উদ্যোগ নিলে রিগ্যাল সিনেমা হলে রক্তক্ষয়ী হামলা হয়। তাতে করে ওই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। মনমোহন সিংহ গৌরি পুরনো প্যালাডিয়াম সিনেমা হলের মালিক। নিজেদের সর্বশেষ সিনেমা প্রদর্শনের কথা মনে করে বলেন, ১৯৮৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষবারের মতো সিনেমা দেখিয়েছিলেন তারা। ভিনোদ খান্নার 'মহা বদমাশ' ছবিটি সর্বশেষ দেখানো হয়েছিলো তাদের হলে।
১৯৩২ সালে মিস্টার গৌরির দাদা শ্রীনগরের লালচক এলাকায় সিনেমা হলটি চালু করেছিলেন। এরপর প্রায় ছয় দশক এটি মানুষকে বিনোদন দিয়েছে। ১৯৯৩ সালে এটি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের দোসরা নভেম্বর ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু তার ঐতিহাসিক ভাষণে কাশ্মীরিদের গণভোটের মাধ্যমে ভারত কিংবা পাকিস্তানকে বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়ার কথা বলেছিলেন। উভয় দেশই কাশ্মীরকে তাদের নিজেদের বলে দাবি করে কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করে একটি করে অংশ।
২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে লাদাখকে আলাদা করে প্রশাসনিক অঞ্চল চালু করেছে। এরপর অনেক আইন ও নীতি তৈরি ও বাস্তবায়নের কাজ চলছে। যদিও স্থানীয়রা এর বিরোধিতা করে অভিযোগ করছেন যে সরকার ওই অঞ্চলের জনমিতিও পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করছে। সূত্র: বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন