শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি জানেন

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০২ এএম

আল কোরআনে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন : অবশ্যই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী তারাই কেবল তাঁকে ভয় করে; নিশ্চয় আল্লাহ প্রবল পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। (সূরা ফাতির : ২৮)। এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, কেবলমাত্র আলেম ও জ্ঞানীগণই আল্লাহকে ভয় করে। বস্তুত: আল্লাহর শক্তিমত্তা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বিজ্ঞানময়তা, ক্রোধ, পরাক্রম, সার্বভৌম কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা এবং অন্যান্যগুণাবলি সম্পর্কে যে ব্যক্তি যত বেশি জানবে, সে তত বেশি তাঁর নাফরমানী ও কুফুরি করতে ভয় পাবে। অপরদিকে যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয় ও গুণাবলির ব্যাপারে যত বেশি অজ্ঞ হবে সে তাঁর ব্যাপারে তত বেশি নির্ভীক ও উদাসীন হবে।

তবে, এই আয়াতে কারীমায় জ্ঞান বলতে যা বুঝানো হয়েছে, তা’ দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস, অংক ইত্যাদি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় পঠিত বিষয়ের জ্ঞান নয়। বরং এখানে জ্ঞান বলতে আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলির জ্ঞান বুঝানো হয়েছে। এর জন্য প্রচলিত শিক্ষিত ও অশিক্ষিত হবার প্রশ্ন নেই। তাই, উল্লিখিত আয়াতে কারীমায় ‘উলামা’ শব্দ যোগে এমন লোকদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহ তায়ালার সত্তা ও গুণাবলি সম্পর্কে সম্যক অবগত এবং পৃথিবীর সৃষ্ট বস্তু-সামগ্রী, এর পরিবর্তন-পরিবর্ধন এবং আল্লাহর দয়া করুণা নিয়ে চিন্তা গবেষণা করেন। কেবল আরবি ভাষা কিংবা অন্য কোনো ভাষা, ব্যাকরণ ও অলঙ্কারাদি সম্পর্কে অথবা প্রচলিত বিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞানী ব্যক্তিকেই আল কোরআনের ভাষায় আলেম বা জ্ঞানী বলা হয় না।

আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে না, সে যুগের শ্রেষ্ঠ পÐিত হলেও কোরআনী জ্ঞানের দৃষ্টিতে সে নিছক একজন গÐমূর্খ-ছাড়া আর কিছুই নয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সত্তা সম্পর্কে জানে তাঁর গুণাবলি সম্পর্কে অবহিত এবং নিজের অন্তরে আল্লাহর ভয় পোষণ করে, সে ডিগ্রীধারী ব্যক্তি না হলেও জ্ঞানী। তবে কারো ব্যাপারে এই আয়াতটির প্রয়োগ ক্ষেত্র তখনই কল্পনা করা যাবে, যখন তাঁর মধ্যে আল্লাহ-ভীতি প্রবল থাকবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এক হাদীসে ইরশাদ করেছেন : যদি আমি যা জানি তা তোমরা জানতে তাহলে কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে। (সহীহ বুখারী : ৬৪৮৬; সহীহ মুসলিম : ২৩৫৯)। এর কারণ হলো, রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি জানেন এবং তাঁর তাকওয়া ও সবচেয়ে বেশি। এতদপ্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন : বিপুল সংখ্যক হাদীস জানা জ্ঞানের পরিচায়ক নয়, বরং বেশি পরিমাণ আল্লাহভীতিই জ্ঞানের পরিচয় বহন করে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : ‘তাঁরাই হচ্ছে আলেম, যারা নিশ্চিত বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান।’

হাসান বসরী (রহ:) বলেছেন : আল্লাহকে না দেখে বা একান্তে ও জনসমক্ষে যে ভয় করে সে-ই হচ্ছে আলেম। আল্লাহ যা কিছু পছন্দ করেন সে দিকেই আকৃষ্ট হয় এবং যে বিষয়ে আল্লাহ নারাজ সে ব্যাপারে সে কোনো আগ্রহ প্রকাশ করে না। সুফিয়ান সাওরী (রহ:) বর্ণনা করেছেন যে, জ্ঞান তিন ধরনের হয়। যথা : প্রথমত : আল্লাহ সম্পর্কে সম্যক অবগত হওয়া, তাঁর নির্দেশ সম্পর্কেও অবহিত হওয়া।

দ্বিতীয়ত : আল্লাহ সম্পর্কে সম্যক অবগত হওয়া, কিন্তু তাঁর নির্দেশ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকা। তৃতীয়ত : আল্লাহর নির্দেশ সম্পর্কে জ্ঞানী হওয়া কিন্তু আল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়া। সুতরাং যে আল্লাহ সম্পর্কে সম্যক অবগত এবং তাঁর নির্দেশ সম্পর্কেও জ্ঞানী, সে হচ্ছে ওই ব্যক্তি যে আল্লাহকে ভয় করে এবং আল্লাহর ফরয ওয়াযিবের সীমারেখা সম্পর্কে জ্ঞান রাখে।

আর যে আল্লাহর নির্দেশ সম্পর্কে জ্ঞানী কিন্তু আল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞ সে হচ্ছে ওই ব্যক্তি যে আল্লাহকে ভয় করে কিন্তু তাঁর ফরয ওয়াযিবের সীমারেখা সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না। আর যে আল্লাহর নির্দেশ সম্পর্কে জ্ঞানী অথচ তাঁর সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না সে হচ্ছে এই ব্যক্তি যে আল্লাহকে ভয় করে না। কিন্তু আল্লাহর ফরয ওয়াযিবের সীমারেখা সম্পর্কে জ্ঞান রাখে।

সার কথা হচ্ছে এই যে, যার মধ্যে যে পরিমাণ আল্লাহভীতি হবে, সে সেই পরিমাণ আলেম হবে। আহমাদ ইবনে সালেহ মিসরী (রহ.) বলেছেন : অধিক বর্ণনা ও অধিক জ্ঞান দ্বারা আল্লাহভীতির পরিচয় পাওয়া যায় না। বরং কোরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ দ্বারা এর পরিচয় পাওয়া যায়। সুতরাং যার মধ্যে আল্লাহভীতি নেই, সে আলেম নয়। (তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে ইবনে কাসির, তাফসীরে মায়ালেমুত তানজিল)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Quamrul Islam ১ অক্টোবর, ২০২২, ৮:৪৭ এএম says : 0
Allahu -Akbar.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন