শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য একটি নিরাপত্তা-বলয় - “স্বাস্থ্য নিরাপত্তা স্কিম”

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০২২, ৮:২৬ পিএম

চট্টগ্রামে ওয়াটারএইডের পৃষ্ঠপোষকতায় সম্প্রতি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তার জন্য গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ- স্বাস্থ্য নিরাপত্তা স্কিম’এর (এসএনএস) আওতায় তিনজন মৃত পরিচ্ছন্নতা কর্মীর নমিনিদের হাতে মৃত্যু দাবি নিষ্পত্তির অর্থ তুলে দেওয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) দপ্তরে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি পরিবারের প্রতিটিকে ৩০ হাজার টাকা সমমূল্যের চেক হস্তান্তর করা হয়। শনিবার (১ অক্টোবর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

মৃত বর্জ্য ও পরিচ্ছনতা কর্মীরা হলেন- স্বপন নাথ, দিল্লা দাস ও রিতা দাস। মৃতের পক্ষ থেকে তাদের স্বামী বা স্ত্রীরা এই চেক সংগ্রহ করেন। চেক প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চসিক’র মাননীয় ভারপ্রাপ্ত মেয়র আফরোজা কালাম, সিটি প্ল্যানার আবদুল্লাহ আল ওমর সহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে ওয়াটারএইডের টেকনিক্যাল পার্টনার ওয়াদা ইনসিওর,চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স এবং ইমপ্লিমেন্টিং পার্টনার ডিএসকে প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

মাত্র ১৯৯ টাকা সর্বনি¤œ বার্ষিক প্রিমিয়ামের বিনিময়ে বর্জ্য ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য একটি নিরাপত্তা-বলয় নির্মানের উদ্দেশ্যে এ বছরের আগস্টে যাত্রা শুরু করে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা স্কিম (এসএনএস)। টেকনিক্যাল পার্টনার হিসেবে ওয়াদা ইনসিওর, ইনস্যিওরার হিসেবে চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের অংশীদারিত্বে ৬ হাজারেরও বেশি বর্জ্য ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং তাদের পরিবারকে স্কিমের আওতায় এনে এর কার্যক্রম চালু হয়। স্কিম-গ্রহণকারী প্রাইমারি কার্ডহোল্ডারদের মৃত্যুতে তাদের নমিনিরা বিমা দাবি করতে পারবেন, পাশাপাশি বাংলাদেশ জুড়ে ২৫০টি ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে ছাড় পাবেন।

দারিদ্র্য এবং নানান সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতায় জর্জরিত বাংলাদেশের বর্জ্য ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সাধারণত সমাজের অধিকাংশ উন্নয়ন পরিকল্পনাতেই উপেক্ষিত হন। সমাজের সামগ্রিক পয়োঃনিষ্কাশন শৃঙ্খলের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজের সাথে জড়িত হওয়ার পরও সুস্থ জীবনযাপন ও সামাজিক সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকেন তারা। এছাড়া কাজ করার ক্ষেত্রে অনেক সময় তাদের রোগব্যাধি সংক্রমণ, আঘাত পাওয়া, এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও থাকে। সুরক্ষার ক্ষেত্রে তাদের ভর্তুকি দিতে ইচ্ছুক কোনো স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা কেন্দ্র এযাবৎ গড়ে ওঠেনি। তাই দীর্ঘমেয়াদী যেকোনো শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বা মৃত্যুজনিত সমস্যায় তাদের দূর্দশাগ্রস্থ পরিবারগুলোর জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা পাওয়ার তেমন কোনো আশা থাকে না।

একটি ঝুঁকিহীন স্কিমের মাধ্যমে বর্জ্য ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তার টেকসই অবকাঠামোর আওতায় এনে তাদের জীবনকে সহজ করতে বাংলাদেশে সুইডিশ দূতাবাসের সহযোগিতায় ‘স্বাস্থ্য নিরাপত্তা স্কিম’ চালু করে ওয়াটারএইড। সম্প্রতি উদ্যোগটি ওয়াটারএইডের অংশীদার ডিএসকে, সাজিদা ফাউন্ডেশন, নবলোক ও ওয়াদা ইনসিওরের সহযোগিতায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা সিটি করপোরেশনে কার্যক্রম শুরু করে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মাননীয় মেয়র ও অন্যান্য কর্মকর্তারা ওয়াটারএইডের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। চেক পাওয়ার পর মৃত পরিচ্ছনতা কর্মী রিতা দাসের স্বামী কাঞ্চন দাস ওয়াটারএইডকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আমার স্ত্রীর আয়ে আমাদের বাচ্চাদের পড়াশোনার খরচ চলত। তার মৃত্যুর পর পরিবারের সব চাহিদা মেটাতে গিয়ে আমি হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। আজ যে টাকা পেলাম, তাতে আমার কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে। আমাদের জন্য এরকম একটি স্কিম নিয়ে আসায় ওয়াটারএইডকে ধন্যবাদ।”

ওয়াটারএইডের ডিরেক্টর প্রোগ্রামস, হোসেন ইসরাত আদিব বলেন, “পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে কাজ করে যাচ্ছে ওয়াটারএইড। তাদের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ও একটি সম্মানজনক জীবিকা নিশ্চিত করতে ওয়াটারএইড এই স্কিমে করে, যেটি বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলো আন্তরিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। কর্মক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ঝুঁকির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মত কার্যকরী কোনো প্রক্রিয়া এখনো পর্যন্ত আমাদের মাঝে গড়ে ওঠেনি। এই স্কিম পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও তাদের পরিবারের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তায় একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ”।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন