মেঘনা নদীর ওপর আরেকটি বিকল্প সেতু হচ্ছে। তৃতীয় সেতুটি নির্মাণ হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিকল্প হিসেবে যোগাযোগ আরও সহজ হবে এবং ঢাকা-সিলেটের ২২ কিলোমিটার ও ঢাকা-চট্টগ্রামের ২৭ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে। এছাড়াও ঢাকার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। দক্ষিণ কোরিয়ার মাধ্যমে পিপিপি-জিটুজি ভিত্তিতে নির্মাণ করা হবে সেতুটি। বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এর সঙ্গে যুক্ত করে দুই পাশে সড়ক নির্মাণ করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।
সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা যায়, সওজের অধীনে সরকারি অর্থায়নে দুই লেনের ৩৬ কিলোমিটার একটি সড়ক তৈরি করা হবে। ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্চারামপুর সড়কের বাঞ্ছারামপুর উপজেলার কড়াইকান্দি ফেরিঘাট থেকে নবীনগর পর্যন্ত এ সড়কটি নির্মাণ করা হবে। সওজের কুমিল্লা জোনের অধীনে সড়কটির মানোন্নয়ন করা হবে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে অনুমোদনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শিগগির এর অনুমোদন মিলতে পারে। এ ছাড়া সড়কটি কুমিল্লার কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়ককে যুক্ত করবে। তৃতীয় মেঘনা সেতুটির আরেক প্রান্ত হবে আড়াইহাজার উপজেলার বিশনন্দী এলাকায়। এর ফলে আখাউড়া দিয়ে আগরতলার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। ঢাকা ও কুমিল্লার সঙ্গে আগরতলায় যাতায়াতের আরেকটি সহজ পথ তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া কড়াইকান্দি এলাকায় স্থলবন্দর নির্মাণের প্রস্তাব এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। আখাউড়াগামী পণ্য ঢাকা থেকে আশুগঞ্জ জাহাজ দিয়ে স্থলবন্দরে যেতে যে সময় লাগে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মেঘনা নদীর তীরে স্থলবন্দর হলে সেখানে চার ঘণ্টা সময় কম লাগবে।
জানা গেছে, ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর সড়কের ফেরিঘাটের ১০০ মিটার উজানে নির্মাণ করা হবে তৃতীয় মেঘনা সেতুটি। এর দৈর্ঘ্য হবে ৩.১৩ কিলোমিটার। উভয় প্রান্তে ৪.৪ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। নৌযান চলাচলের সুবিধার্থে সেতুর ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ১৮ দশমিক ৩০ মিটার ধরা হয়েছে।
বর্তমানে এ সড়কের বিশনন্দী-কড়াইকান্দি ফেরির মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর ও নবীনগরের সঙ্গে ঢাকা ও অন্যান্য জেলার যোগাযোগ করতে হয়। দুর্যোগকালে এই রুট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাছাড়া দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ। দীর্ঘদিন ধরেই সেতুটি নির্মাণের চেষ্টা চলছে।
জানা যায়, ২০২০ সালের মার্চে এই সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। পরে ওই বছরের ১৯ আগস্ট অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি প্রকল্পটি পিপিপিতে বাস্তবায়নের অনুমোদন দেয়। কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান দাইয়ু ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, হুন্দাই ইঞ্জিনিয়ারিং ও কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এ জন্য ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার হিসাবে আইআইএফসিকে নিয়োগ করে সেতু কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের এপ্রিলে সম্ভাব্যতা যাচাই করে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। আগামী বছরের মে মাসে সেতুটি নির্মাণে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষরের পরিকল্পনা রয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এবিএম তাজুল ইসলাম বলেন, মেঘনায় তৃতীয় সেতু নির্মাণ হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিকল্প হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হবে এবং ঢাকা-সিলেটের ২২ কিলোমিটার ও ঢাকা-চট্টগ্রামের ২৭ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে। এলাকায় ব্যাপক শিল্পকারখানা হবে। দক্ষিণ কোরিয়ার মাধ্যমে হবে সেতু এবং এর ব্যবহার বাড়াতে সওজের অধিনে আলাদা সড়ক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর-আখাউড়া যোগাযোগ সহজ হবে। যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সহজ হবে। তিনি আরও বলেন, অনেক দিন ধরেই সেখানে সেতুটি করার চেষ্টা চলছে। ওই সেতুর পাশাপাশি সড়ক নির্মাণেও জোর দিয়েছে সরকার। এতে ঢাকা থেকে আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ভারতের আগরতলারও দূরত্ব কমবে।
সওজের একটি সূত্র জানিয়েছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মাণ হবে ভুলতা-বাঞ্ছারামপুর-রাধিকা সড়ক। এটি যুক্ত করবে কুমিল্লার মুরাদনগর-কোম্পানীগঞ্জ সড়ককে। সওজের অধীনে ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর-শিবপুর-রাধিকা মহাসড়ক হবে ভবিষ্যতে। এর দৈর্ঘ্য হবে ৮০ কিলোমিটার। আরেকটি সড়ক হবে ২৮ কিলোমিটারের বাঞ্ছারামপুর-মুরাদনগর-কোম্পানীগঞ্জে। এজন্য আগামী তিন মাসের মধ্যে সমীক্ষা শুরু হবে। সড়ক দুটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিকল্প সড়ক।
ভুলতা থেকে কোম্পানীগঞ্জ হয়ে ময়নামতির দূরত্ব ৮৯ কিলোমিটার। অন্যদিকে ভুলতা থেকে মদনপুর হয়ে ময়নামতির দূরত্ব ৮৩ কিলোমিটার। এ ছাড়া ভুলতা থেকে মুরাদনগর (কোম্পানীগঞ্জ) সংযোগ সড়কটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এবং কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাসড়ককে সংযোগ করবে। ভুলতা থেকে আখাউড়া স্থলবন্দরে যোগাযোগের একটি বিকল্প সড়ক। সড়কটির উন্নয়ন হলে একদিকে কুমিল্লা হয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার যাতায়াত করা যাবে। অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দরে অনায়াসে যাতায়াত সম্ভব হবে।
বর্তমানে রোড ট্রান্সপোর্ট কানেকটিভিটি ইমপ্রæভমেন্ট প্রজেক্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটি প্রকল্পের আওতায় সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ২৩টি সড়কে প্রায় ১ হাজার ৭১১ কিলোমিটার অংশে সমীক্ষা ও বিশদ নকশার কাজ করা হচ্ছে। তা ছাড়া ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের অর্থায়নে আশুগঞ্জ-দরখার-আখাউড়া সড়কটি চার লেনে উন্নীত হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকা-সিলেট চার লেন করা হচ্ছে প্রথক প্রকল্পের অধীনে। এসব কারণে ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর-মুরাদনগর (কোম্পানীগঞ্জ) সড়কটির গুরুত্ব বেড়ে যাবে। সর্বোপরি প্রস্তাবিত সেতু ও সড়ক নির্মাণ হলে আখাউড়া স্থলবন্দর থেকে আগরতলা দিয়ে সেভেন সিস্টার্স রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের অবাধ ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। এতে আমদানি-রফতানি আরও বৃদ্ধির ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।
এ বিষয়ে সওজের প্রধান প্রকৌশলী একেএম মনির হোসেন পাঠান বলেন, সেতু বিভাগ বাস্তবায়ন করবে মেঘনা সেতুটি। এর সঙ্গে যুক্ত করতে সড়কগুলো করবে সওজ। এর সুফল পাবে গোটা দেশ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন