দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিলে বাজারে এর প্রভাব পড়ে বিদ্যুৎ গতিতে। আবার দাম কমানোর ঘোষণায় ‘আগের কেনা’ বলে ব্যবসায়ীদের দাম কমাতে না চাওয়ায় জনগন পড়েন দুর্গতিতে। এখানে দেশের ব্যবসায়ীরা যেন পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রই পরিবর্তন করে ফেলেছেন। গতিবিদ্যা বা গতিবিজ্ঞান পদার্থ বিজ্ঞানের একটি শাখা। যেখানে গতির কারণ, গতির পরিবর্তন ও গতির প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়। এখানে গতির কোন মেলবন্ধন নেই। সরকারের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুরোনো কৌশলেই নতুন করে প্রতারণার ছক একেছেন ব্যবসায়ীরা। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা কমিয়ে ১৭৮ টাকা নির্ধারণ করার ঘোষণা এলেও দেশবাসীকে এখনও বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে রান্নার উপকরণটি। গতকাল মঙ্গলবার থেকে নতুন দাম কার্যকরের যে ঘোষণা তেল বিপণন কোম্পানিগুলো দিয়েছে, তার কোনো নমুনা নেই বাজারে। প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর তেল বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলোর মোর্চা বাংলাদেশ ভেজিটেবল ওয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যারার্স অ্যাসোসিয়েশন বোতলজাত তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৭ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন এই দাম কার্যকর হওয়ার কথা ছিল আজ থেকে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বোতলজাত এক লিটার তেল বিক্রি করতে হবে ১৭৮ টাকায়, যা এতদিন ছিল ১৯২ টাকা। আর পাঁচ লিটার বোতলের দাম হবে ৮৮০ টাকা যা এতদিন ছিল ৯৪৫ টাকা। খোলা সয়াবিন তেলের নতুন দাম হবে ১৫৮ টাকা, যা এতদিন ছিল ১৭৫ টাকা।
কিন্তু রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, পুরোনো দামেই বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। কচুক্ষেত বাজারের ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, এগুলো সব আগের দামে কেনা তেল। নতুন দামে এখনো তেল দোকানে আনা হয়নি। যে কারণে ১৭৮ টাকা দরে বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে। গত ২৩ আগস্ট যখন তেলের দাম লিটারে ৭ টাকা বাড়ানো হয়, সে সময় ব্যবসায়ীরা আগের কম দামে কেনা তেলের দাম বাড়িয়ে দেন সঙ্গে সঙ্গে। এই চিত্র তারও আগে দেখা গেছে। এমনও দেখা গেছে দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসার ১০ দিনেও ক্রেতারা নতুন দামে তেল কিনতে পারেননি। মিরপুর ১১ নম্বরের এক দোকানী জানান, নতুন কোনো দামের নির্দেশনা তারা পাননি। এজন্য আগের দরে তেল বিক্রি করছেন।
তেল কিনতে আসা ক্রেতারা বলেন, তেলের দাম কমলেও বাজারে সেটার প্রভাব পেলাম না। আগের দামেই তেল কিনতে হলো। অথচ দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে সেটার প্রভাব পড়ে।
ঘোষণা তো ১৭৮ টাকা, ১৪ টাকা বেশি দামে কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যবসায়ীরা বলেন, নতুন দামের তেল এখনও সরবরাহ করা হয়নি। কোম্পানির প্রতিনিধি তেল দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। পুরোনো তেলই বিক্রি করতে হচ্ছে। ক্রেতারা নতুন দামের তেল চাচ্ছেন, কিন্তু দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে বাকবিতÐা হচ্ছে। খুচরা বাজার তো বটেই পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারের চিত্রও একই। এই বাজারে তেলের ডিলার বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, পাইকারি বাজারে এখন তেল সরবরাহে ঘাটতি নেই। চাহিদামতো তেল এখন পাওয়া যাচ্ছে। তবে তেলের নতুন দাম ঘোষণার পর এখনো তেল আসেনি। সাধারণত দাম নির্ধারণের তিন-চার দিন পর নতুন দামের থেকে তেল সরবরাহ শুরু করেন মিলমালিকরা। তখন নতুন দামে তেল বিক্রি করা যাবে।
খোলাবাজার তো বটেই এমনটি সুপার শপেও নতুন দাম কার্যকর হতে দেখা যায়নি। সেখানকার বিক্রেতারা এসব বিষয়ে কথাই বলতে চান না। একাধিক বিক্রেতা বলেছেন, তাদেরকে কোম্পানি থেকে যে মূল্য তালিকা দেয়া হয়েছে, সেই দামেই তারা বিক্রি করতে বাধ্য।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন