বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভবিষ্যৎ সমাজ ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে

মিয়ানমারের যুবসমাজ হুমকিতে, অর্থনীতির বড় ক্ষতি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০২২, ৮:০৪ পিএম

মিয়ানমারে বেসামরিক সরকারের কাছ থেকে গত বছর ক্ষমতা কেড়ে নেয় সামরিক বাহিনী। তারপর হত্যা করা হয় এবং গ্রেপ্তার করা হয় হাজার হাজার মানুষকে। এর আগে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের শহর দাওয়ে’তে শান্তিতে বসবাস করছিলেন হনিন সি। ওই সময়ে তিনি যখন অফিসে যেতেন, সপ্তাহান্তে ঘুরতে বেরুতেন, তখন তিনি বাইসাইকেলে চারপাশের প্রকৃতি দেখতেন অথবা বন্ধুদের সাথে নিয়ে পাহাড়ের চ‚ড়ায় পৌঁছে যেতেন আন্দামান সাগরের সৌন্দর্য্য অবলোকনের জন্য। কিন্তু সেসব দিন আর নেই। অনলাইন আল-জাজিরা এ নিয়ে দীর্ঘ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, সামরিক অভ্যুত্থানের পর সেনা শাসনের বিরুদ্ধে যারাই গিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ দমনপীড়ন শুরু করেছে তারা। বিশেষ করে তাদের বড় প্রতিপক্ষ হলো যুব সমাজ। তারাই বেশি প্রতিবাদমুখর হয়েছে। কিন্তু এই যুব সমাজের ওপর যখন দেশের অর্থনীতির ভার থাকার কথা, তখন তাদেরকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এতে দেশের অর্থনীতি ধসে পড়ছে। তারা শিক্ষা গ্রহণ করে যে স্বপ্ন রচনা করেছিল, তাও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। এসিসট্যান্স এসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স-এর জয়েন্ট সেক্রেটারি কো বো চি বলেন, প্রতিটি যুবককে দেশের সবচেয়ে বড় শত্রæ হিসেবে দেখছে সামরিক জান্তা। অধিকার বিষয়ক গ্রæপগুলো যেসব ডকুমেন্টারি করেছে, তাতে বলা হয়েছে, সামরিক অভ্যুত্থানের পর গণতন্ত্রপন্থিদের বিরুদ্ধে জান্তা সরকারের দমনপীড়নে ১৬ থেকে ৩৫ বছর বয়সী কমপক্ষে ৯০০ যুবককে হত্যা করেছে। একই বয়সসীমার কমপক্ষে ২৮০০ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, যুবসমাজের হওয়া উচিত দেশের ভবিষ্যত। কিন্তু সামরিক আটক, নির্যাতন ও হত্যার মধ্য দিয়ে তাদেরকে শেষ করে দেয়া হচ্ছে। এর ফলে দেশ এবং ভবিষ্যত সমাজ ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। মিয়ানমারের সর্ব দক্ষিণের তানিনথারিয়ি’র এলাকার যুবকদের ৮ জনের সাথে কথা বলেন আল-জাজিরার সাংবাদিক। তারা বলেছেন, শহরগুলোতে যুব শ্রেণির মানুষ নেই বললেই চলে। তাদের বেশিরভাগই পালিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। অথবা যোগ দিয়েছে প্রতিরোধ আন্দোলনে। যারা এখনও এলাকায় আছেন, তাদের মধ্যে সর্বক্ষণ ভয়, হতাশা। হনিন সি’র বয়স ২০-এর কোটার শেষের দিকে। তিনি শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছিলেন। অভ্যুত্থানের পর সরকারি কর্মচারীদের ধর্মঘটের জন্য তিনি ফেসবুকে অর্থ সংগ্রহ শুরু করেন। কিন্তু এখন তিনি বাইরে যান না বললেই চলে। ফেসবুকে বা কোনো মাধ্যমে কোনো পোস্ট দেন না। স¤প্রতি তার সাথে যোগাযোগ আছে এমন কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারণ, এসব মানুষ মানবিক সাপোর্ট দিচ্ছিলেন বাস্তুচ্যুত মানুষকে। এ কথা জানার পর কয়েকদিনের জন্য এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করেন হনিন সি। তিনি বলেন, আমরা যুব সমাজ মনে করছি, আমাদের জীবন থেমে গেছে। আমাদের ভবিষ্যতের কোনো আশা নেই। ২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি মিয়ামনারে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। নির্বাচিত বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচির সরকারকে হটিয়ে দিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এর প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে মিয়ানমার। কিন্তু তাদেরকে দমন করতে সামরিক জান্তা ব্যবহার করে প্রাণঘাতী অস্ত্র। নিরস্ত্র এসব মানুষের বিরুদ্ধে তারা কঠোর দমনপীড়ন চালায়। কিন্তু জনগণ তাদের বিপ্লবের কৌশল পরিবর্তন করে। ফলে সেনা শাসনের বিরোধী কেউ আছে, এমন কোনো স্থান টিকিয়ে রাখতে চায়নি জান্তা সরকার। নিয়মিতভাবে সন্দেহজনকদের বাড়িতে ঘেরাও দিতে থাকে সেনাবাহিনী এবং পুলিশ। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করতে থাকে। রাতের বেলা তল্লাশি চালিয়ে চেক করে, রাতে কোন বাড়িতে কোন অতিথি আছে। কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধন নাই, এমন কাউকে পেলেই তারা তাকে ধরে নিয়ে যায়। আত্মগোপনে থাকা বিরোধীরা যাতে বেরিয়ে আসেন, সে জন্য তাদের পরিবারের সদস্য এবং সংশ্লিষ্টদের পিছু লাগে জান্তা সরকার। অভ্যুত্থানের পর প্রবীণ পিতামাতা এবং তাদের টিনেজ বয়সী শিশু সহ কমপক্ষে ৪৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সামরিক জান্তা। এখানেই শেষ নয়। রাস্তায় হেঁটে যাওয়া মানুষকেও থামিয়ে তাকে তল্লাশি করে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। আল-জাজিরা।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন