শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

বিশ্বের সবচেয়ে দামি যুদ্ধজাহাজ জেরাল্ড ফোর্ড এ বার আটলান্তিকে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০২২, ৯:০৩ পিএম

ভার্জিনিয়ায় আমেরিকার নৌবাহিনীর ঘাঁটি থেকে সমুদ্রে পাড়ি দিচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড। আটলান্তিক মহাসাগরের আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ‘নেটো’র ‘স্ট্রাইক কোরের’ অংশ হিসাবে কাজ করবে এই রণতরী।

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং তাইওয়ান নিয়ে চীনের সঙ্গে আমেরিকার সঙ্ঘাতের আবহে আটলান্তিকে পরমাণু চালিত এই বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের ঘটনা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে ‌করছে সামরিক বিশ্লেষকদের একাংশ। ১,৩০০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই যুদ্ধজাহাজটি আমেরিকার ৩৮তম প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের নামাঙ্কিত। ১৯৭৪-৭৭ সালে প্রেসিডেন্ট পদে থাকা প্রয়াত ফোর্ড আমেরিকার নৌসেনার প্রাক্তনী।

৩৩৭ মিটার দীর্ঘ এবং এক লক্ষ টন ওজনের এই যুদ্ধজাহাজে ৭৫টিরও বেশি যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টার রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। বিমানবাহী রণতরীটির ফ্লাইট ডেকের প্রস্থ প্রায় ৭৮ মিটার। তাতে রয়েছে দু’টি রানওয়ে। ২০০৫ সালের অগস্ট এই যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ নিয়ে আলোচনা এবং নকশা তৈরি শুরু হয়। নিউপোর্ট নিউজ শিপবিল্ডিং কোম্পানিকে দেওয়া হয় ফোর্ড গোত্রের প্রথম বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের বরাত।

২০০৯-এর গোড়ায় শুরু হওয়ার পরে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছিল ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড নির্মাণের কাজ। ২০১৩-র অক্টোবরে প্রথম জলে ভাসে বিশালাকৃতির এই যুদ্ধজাহাজ। দীর্ঘ ‘সি ট্রায়াল’ পর্বের পরে ২০১৫-য় ফোর্ডে অস্ত্রসম্ভার বসানোর কাজ শেষ হয়। ২০১৭-র অক্টোবরে এই যুদ্ধজাহাজকে আনুষ্ঠানিক ভাবে আমেরিকার নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

পঞ্চাশের দশকে তৈরি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস এন্টারপ্রাইজ ২০১২ সালের ডিসেম্বরে আমেরিকার নৌবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছিল। ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ডকে সেই ‘শূন্যস্থান’ পূরণে কাজে লাগানো হয়। আমেরিকার দ্বিতীয় নৌবহরের প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল ড্যান ডোয়ার জানিয়েছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভূমিকা বদলেছে ফোর্ডের। নেটোর জোটের নৌবাহিনী ‘ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপে’ আটলান্তিকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলাবে এই যুদ্ধজাহাজ।

দু’টি পরমাণু চুল্লিবিশিষ্ট এই যুদ্ধজাহাজ বেশ কয়েক বছর টানা সমুদ্রে থাকতে পারে। ওই সময়ের মধ্যে জ্বালানির জন্য কোনও বন্দরে ভিড়তে হবে না ফোর্ডকে। সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি বড় সুবিধা। এক লক্ষ টন ওজন নিয়েও ঘণ্টায় ৩০ নটিক্যাল মাইল (৫৬ কিলোমিটার) গতিবেগে ছুটতে পারে ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড। এতে থাকতে পারেন ৯,০০০-এরও বেশি নৌসেনা এবং অন্যান্য কর্মী।

আমেরিকা ছাড়াও এই যুদ্ধজাহাজে নেটো-ভুক্ত দেশ কানাডা, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস এবং স্পেনের নৌসেনারা ঠাঁই পাবেন। বস্তুত, আটলান্তিক মহাসাগরে নেটোর ‘ভাসমান দুর্গের’ ভূমিকা পালন করবে ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড। তবে আটলান্তিকে মোতায়েন নেটো বহরের আর এক অংশীদার ব্রিটেনের কোনও নৌসেনা আপাতত আমেরিকার বিমানবাহী রণতরীটিতে থাকবেন না। প্রসঙ্গত, গত অগস্টেও ওই এলাকায় টহলদারিতে থাকা ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ ‘প্রিন্স অফ ওয়েলস’ দুর্ঘটনায় পড়েছিল।

বিমানবিধ্বংসী স্বয়ংক্রিয় কামান ও ক্ষেপণাস্ত্র, সি স্প্যারো ক্ষেপণাস্ত্র, ফ্যালন্যাক্স ‘ক্লোজ ওয়েপন সিস্টেম’ সমৃদ্ধ এই ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ডের আত্মরক্ষার ব্যবস্থা অন্য বিমানবাহী রণতরীর তুলনায় সুদৃঢ় বলেই মনে করেন নৌ-প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অনেকে। ফোর্ড গোত্রের আর এক বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস জন এফ কেনেডি নির্মাণের কাজও ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। চলছে সমুদ্রে পরীক্ষার পালা। এই গোত্রের ডরিস মিলার, এন্টারপ্রাইজ-সহ মোট পাঁচটি যুদ্ধজাহাজ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা।

তাইওয়ানের সঙ্গে চীনের সাম্প্রতিক সঙ্ঘাতের প্রেক্ষিতে আমেরিকা নৌসেনার আর এক বৃহৎ বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ, নিমিৎজ গোত্রের ইউএসএস রোনাল্ড রেগনকে সম্প্রতি চীন সাগরে মোতায়েন করেছে পেন্টাগন। সূত্র: টাইমস নাউ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন