শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

প্রজনন নির্বিঘ্নের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আজ মধ্যরাত থেকে ২২ দিন ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০২২, ২:১০ পিএম

নির্বিঘ্ন প্রজননের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে আজ মধ্যরাত থেকে উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ২২ দিন সব ধরনের মৎস্য আহরণ সহ সারাদেশে ইলিশের পরিবহন ও বিপননে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে। মৎস্য বিজ্ঞানীগন আশ্বিনের পূর্ণিমার আগে পড়ের ২২ দিনে ভোলার পশ্চিম আউলিয়া পয়েন্টÑতজুমদ্দিন, মনপুরা দ্বীপ, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লতাচাপলি পয়েন্ট-এর ধলচর দ্বীপ, মৌলভীরচর দ্বীপ, কালিরচর দ্বীপ এবং মায়ানী পয়েন্টÑমীরসরাই ছাড়াও কুতুবদিয়া পয়েন্ট এলাকায় মা ইলিশের অত্যাধীক প্রচুর্য চিঞ্হিত করেছেন। উপক’লের ঐ ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ‘ইলিশের প্রধান প্রজননস্থল’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে ২২ দিন সবধরনের মৎস্য আহরন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হচ্ছে।

ফলে জেলে পারিবারগুলোতে কিছুটা বিষাদের ছায়া লক্ষ্য করা গেলেও সরকার ইলিশ আহরনে নির্ভরশীল জেলেদের খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় ১৩ হাজার ৮৭২ টন চাল বিনামূল্যে বিতরনের কর্মসূচীও ঘোষনা করেছে। আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ৩৭টি জেলার ১৫৫টি উপজেলার ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৭ জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি করে এ চাল বিতরন করা হবে। এরমধ্যে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ৪১টি উপজেলার ৩ লাখ ৬ হাজার ১২০ জেলে পরিবারের মাঝে ৯ হাজার ১৮২ টন চাল বিতরন করা হবে। দেশে উৎপাদিত ইলিশের ৭০%-ই পাওয়া যায় দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ নদ-নদী ও উপক’লীয় এলাকায়।

আগামী ২২ দিনের এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করণে পুলিশ এবং র‌্যাব ছাড়াও বাংলাদেশ নৌ বাহিনী ও কোষ্ট গার্ড বাহিনীকেও সম্পৃক্ত করছে সরকার। এছাড়া প্রতিটি জেলা উপজেলা পর্যায়ে ভ্রাম্যমান আদালত সহ বিভিন্ন ধরনের অভিযানের মাধ্যমেও নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানার সাথে কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহনের কথা জানিয়েছে বিভিন্ন জেলা প্রশাসন।

‘হিলসা ফিসারিজ ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্লান’এর আওতায় ২০০৫ সালে প্রধান প্রজনন মৌসুমে দেশে প্রথমবারের মত ১০দিন ইলিশ আহরন বন্ধ রাখা হয়। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে ২০১১ সালে তা ১১ দিন এবং ২০১৫ সালে ১৫ দিনে ও ২০১৬ সালে থেকে ২২ দিনে উন্নীত করা হয়। এমনকি ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র এবং মাইগ্রেশন পথ নির্বিঘœ রাখা সহ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মজুত ও জীব বৈচিত্রকে সমৃদ্ধ করতে হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন ৩ হাজার ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে দেশের প্রথম ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বা মেরিন রিজর্ভ এরিয়া’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা সহ জাটকা আহরনে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত দুই দশকে দেশে ইলিশের উৎপাদন ২ লাখ টন থেকে গত অর্থ বছরে প্রায় ৫.৬০ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে বলে মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। এমনকি সারা বিশে^ উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৬৫% বাংলাদেশে উৎপাদন ও আহরিত হচ্ছে। আমাদের অর্থনীতিতে ইলিশের একক অবদান এখন ১%-এরও বেশী এবং মৎস্য খাতে প্রায় ১২%।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশের ইকাসিষ্টেমে সারা বছরই ৩০% মা ইলিশ ডিম বহন করে। এসব ইলিশ পরিপক্ক হয়ে ডিম ছাড়ে। যে ডিমগুলো পুরুষ ইলিশ দ্বারা নিষিক্ত হয়ে থাকে তা নতুন প্রজন্ম গঠন করে।

অভিপ্রয়াণী মাছ ইলিশ প্রতিদিন শ্রোতের বিপরিতে ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে চলে জীবনচক্রে স্বাদু পানি থেকে সমুদ্রের নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে পুনরায় স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়ান করে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, উপক’লের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন ক্ষেত্রে মূক্ত ভাসমান অবস্থায় ছাড়া ডিম থেকে ফুটে বের হয়ে ইলিশের লার্ভা, স্বাদু পানি ও নোনা পানির নার্সারী ক্ষেত্রসমুহে বিচরন করে খাবার খেয়ে বড় হতে থাকে। নার্সারী ক্ষেত্রসমুহে ৭Ñ১০ সপ্তাহ ভেসে বেড়াবার পরে জাটকা হিসেব সমুদ্রে চলে যায় পরিপক্কতা অর্জনে। বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় ১২Ñ১৮ মাস অবস্থানের পরে পরিপক্ক হয়েই পূর্র্ণাঙ্গ ইলিশ হিসেবে প্রজননের লক্ষ্যে স্বাদু পানির নার্সারী ক্ষেত্রে ফিরে এসে ডিম ছাড়ে।

মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, ২০১৮-এর ৭Ñ২৮ অক্টোবর আহরন বন্ধকালে উপকূলের প্রজননস্থল সহ অভ্যন্তরীন মূক্ত জলাশয়ে ৪৮% মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পায়। মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউট-এর মতে প্রজননক্ষম মা ইলিশের হার ২০১৭ সালে ৭৩% থেকে ’১৮ সালে ৯৩%-এ উন্নীত হয়। পাশাপাশি এসময়ে প্রজনন সাফল্য ৮০%-উন্নীত হয়। ইলিশ আহরন নিষিদ্ধের ফলে ঐ সময়ে দেশে ৭ লাখ ৬ হাজার কেজি উৎপাদিত ডিমের ৫০%-এর সাফল্যজনক পরিস্ফুটন সহ তার ১০% বেঁচে থাকলেও ইলিশ পরিবারে নতুন ৩ হাজার কোটি জাটকা যূক্ত হয়। ২০১৯ সালে মূল প্রজনকালীন সময়ে দেশের প্রধান ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্র সমুহে পরিক্ষামূলক নমুনায়নে ৮৩% ইলিশের রেনুর পাশাপাশি ১৭% অন্যান্য মাছেরও রেনু পোনা পাওয়া যায়। ফলে ইলিশ আহরন নিষদ্ধকালীন ২২ দিনে উপক’লে অন্যান্য মাছেরও নিরাপদ প্রজননও সাফল্যজনক ভাবে স¤পন্ন হচ্ছে বলে মৎস্য বিজ্ঞানীগন মনে করছেন। যা দেশে অন্যান্য প্রজাতির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করছে বলেও জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে কার্যকর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান তালুকদার জানিয়েছেন, সরকারী নির্দেশনায় আমরা জিরো টলারেন্স নিয়ে তা কার্যকর করব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন