শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ

| প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলায় তিনদিন বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসার অবহেলাতেই ২৩ নভেম্বর বিকেলে ওই শিশুটির মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেছেন তার বাবা জসিমউদ্দিন মাতব্বর। জসিমউদ্দিনের বাড়ি শরীয়তপুর। তিনি ঢাকার আজিমপুরের বাসিন্দা।
জসিমউদ্দিন জানান, ২০ নভেম্বর ঢাকা মেডিক্যালে তার স্ত্রী নাজমা একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেন। চিকিৎসক জানায়, শিশুটির কিছুটা শ্বাসকষ্ট রয়েছে। তাকে এনআইসিইউতে (নিউন্যাটাল ইন্টেনসিভ কেয়ার) রাখতে হবে। তারা সেন্ট্রাল হাসপাতালে যাবার কথা বললেন। চিকিৎসকের কথামত তারা শিশুটিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. এম এস কবীরের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করান।  
জসিমউদ্দিন বলেন, ২০ তারিখ সেন্ট্রাল হাসপাতালে যখন ভর্তি করাই তখনও আমার বাচ্চা ভালো ছিল। চিকিৎসকও সে কথা বলেছেন। ২১ তারিখ চিকিৎসক যখন আমাদের ব্রিফ করলেন তখনও তিনি বলেছেন, আমাদের বাচ্চা মোটামুটি সুস্থ আছে। তবে পুরোপুরি সুস্থ হতে কয়েক দিন লাগবে। ২২ তারিখ দেখলাম বাচ্চাটা ইনকিউবেটর এইচ-এ নেই। জানতে চাইলে নার্স জানালো বাচ্চাকে ইনকিউবেটর সি তে নেয়া হয়েছে। ২৩ তারিখ সকাল ১১টার দিকে চিকিৎসক আমাদের জানালেন বাচ্চা ভালো আছে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা নেই। তাই অক্সিজেন খুলে দেয়া হয়েছে। মুখে খাবারও দেয়া হচ্ছে। খাবারের পরিমাণ বাড়লেই বাচ্চাটাকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারব।
জসিমউদ্দিন বলেন, চিকিৎসকের কথায় মনে অনেকটা শক্তি পেলাম। এরপরই ওকে কাঁচের ভেতর দিয়ে দেখতে গেলাম।  দেখলাম বাচ্চাটা হা হয়ে ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। বুকের মাঝখানটা দেবে গেছে। বাচ্চাকে দেখতে আমি আমার স্ত্রীকে ভেতরে যেতে বললাম। নাজমা ভেতরে গেল। তখন ভেতরে দায়িত্বে ছিলেন নার্স মাহবুবা খাতুন। নাজমা তার কাছে বাচ্চাটা কেন ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে, মুখ হা হয়ে রয়েছে  এবং ঠোঁট ফেটে কেন রক্ত বেরুচ্ছে তা জানতে চাইলো। উত্তরে নার্স মাহবুবা বলেছেন, আপনাদের বাচ্চার সমস্যা আছে বলেইতো এখানে রাখা হয়েছে। ভ্যাসলিন নিয়ে আসেন ঠোঁটে লাগিয়ে দেব। নাজমা বের হয়ে এলো। আমি একটা কাজে প্রেসক্লাব এলাকায় এলাম। বিকেল ৪টার দিকে আমার ফোনে হাসপাতাল থেকে একটি কল এলো। আমাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যেতে বলা হলো। আমি গেলাম। আমাকে জানানো হলো, বাচ্চার অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়েছে। আমরা দেখতে গেলাম। দেখলাম তার বুকের অংশটাই কেবল একটু নড়ছে। আমার ভাই বাংলাদেশ মেডিক্যালে ইন্টার্নি করছে। সে দেখে জানাল, আমার বাচ্চাটা আর বেঁচে নেই। লাইফ সাপোর্টে থাকার কারণেই বুকের ওই অংশ নড়ছে। আমরা চিকিৎসকের কাছে পুরো বিষয়টা জানতে চাইলে আমাদের বলা হলো, আমার বাচ্চার অনেক সমস্যা ছিল। তারা চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাচ্চা বাঁচাতে পারেনি।
সেদিন হাসপাতালের সব পাওনা মিটিয়ে দিয়ে আমরা চলে এলাম। কিন্তু কেন যেন মনটা সায় দিচ্ছিল না। আমি সুস্থ বাচ্চা নিয়ে গিয়েছিলাম। চিকিৎসক আর নার্সের অবহেলায় আমার বাচ্চাটা মারা গেল। ২৬ তারিখ আমি আবার হাসপাতালে গেলাম। হাসপাতালের পরিচালক ডা. কাশেম সাহেবের কাছে অভিযোগ করলাম। তিনি বিষয়টি শুনলেন। এনআইসিইউতে ফোন করে সম্পূর্ণ বিষয়টি জানলেন। ডা. কবীরের সাথেও কথা বললেন। কথাবার্তায় বুঝলাম যে ডা. কবীর নার্সের উপরই দোষ চাপাচ্ছেন। আমি ডাক্তার এবং নার্স উভয়েরই শাস্তি দাবি করি। পরে আমাকে জানানো হলো তারা ব্যবস্থা নেবেন। পরে আমাকে জানানো হলো নার্স মাহমুদাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ডা. কবীরের বিষয়টি হাসপাতালে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। আমি ২৮ তারিখ এনআইসিইউতে ফোন দিয়ে নার্স মাহমুদাকে চাইলাম। দেখলাম তিনি চাকরিতে বহাল আছেন। এরপর আমি আবার ডা. কাশেম সাহেবের কাছে যাই এবং বিষয়টি জানতে চাই। পরে তারা আমাকে বরখাস্তের লিখিত ডকুমেন্ট দেখান।
জসিমউদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আমার বাচ্চা শ্বাসকষ্টে মারা গেছে। দুই দিন অক্সিজেন দেয়ার পর তার অবস্থা বিবেচনা না করেই অক্সিজেন খুলে নেয়া হয়। চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলার কারণেই আমার বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব।
এ প্রসঙ্গে সেন্ট্রাল হাসপাতালের পরিচালক ডা. এম এ কাশেম বলেন, প্রতিটা বাবা-মা’ই এমন অভিযোগ করবে। তবে কোনো চিকিৎসকই আসলে চায় না যে তার রোগী মারা যাক। ওই বাচ্চাটির অবস্থা ভালোর দিকেই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই অবস্থার অবনতি ঘটে। নার্স মাহমুদাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং ডা. কবীরকেও ওয়ার্নিং দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।  নিজের অবহেলার কথা অস্বীকার করে ডা. এম এস কবীর বলেন, বাচ্চাটা অপরিপক্ব এবং কম ওজনের ছিল। হঠাৎ করে ফুসফুসে রক্তক্ষরণ হওয়ায় শিশুটি মারা গেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন