পুঁজিবাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর স্বচ্ছতা বাড়াতে ও সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ও জনপ্রিয় করে তুলতে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ফান্ডগুলো কোন কোন শেয়ারে বিনিয়োগ করেছে, সেই বিষয়টি সবার সামনে নিয়ে আসতে চায় তারা। এ জন্য তহবিলগুলোর বিভিন্ন তথ্য নিয়ে নতুন একটি ওয়েবসাইট গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএসইসি কমিশনার মিজানুর রহমান।
বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ পালনের অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এই তথ্য জানান তিনি। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে মিউচ্যুয়াল ফান্ড পরিচালনাকারী সম্পদ ব্যবস্থাপকের সংগঠন এসোসিয়েশন অফ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডস বা এএএমসিএমএফ।
আলোচনা অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু ছিল ‘রোল অফ টেকনোলজি এবং ইউএসজি এনালাইটিকস ইন সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স। বিএসইসি কমিশনার বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোতে স্বচ্ছতা আনতে পারি, জবাবদিহিতা বাড়াতে পারি ও বিনিয়োগকারীদের তারল্য দিতে পারি, সুরক্ষা দিতে পারে, তাহলে মানুষ ব্যাংকে টাকা না রেখে দেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোতে বিনিয়োগ করবে।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে সব তথ্য সবার কাছে উন্মুক্ত করার পরিকল্পনার কথাও জানিয়ে বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে, আর মানুষের কাছে ফান্ডগুলোকে সহজ ও জনপ্রিয় করে তুলতে, আমরা একটি খুব আধুনিক ওয়েবসাইট তৈরি করার পরিকল্পনা করেছি। যেখানে বাংলাদেশের সব সম্পদ ব্যবস্থাপক তাদের ব্যবস্থাপনায় থাকা মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর বিভিন্ন তথ্য দেবে। বিশেষ করে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো কোন শেয়ারে বিনিয়োগ করছে, এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এখানে থাকবে। বাংলাদেশের ও বাংলাদেশের বাইরের সব বিনিয়োগকারী এখানে ঢুকে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সমস্ত তথ্য দেখতে পারবে। এটা অ্যাপ আকারেও করা হবে।
২০১০ সালের মহাধসের পর মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো লভ্যাংশ বিতরণের ক্ষেত্রে হতাশ করলেও গত দুই বছরের পরিস্থিতি ভিন্ন। ফান্ডগুলো এই দুই বছরে আকর্ষণীয় লভ্যাংশ দিয়েছে। তবে লভ্যাংশ নিয়ে বিনিয়োগকারীর খুব একটা মুনাফা হয়েছে এমন নয়। কারণ, যে হারে লভ্যাংশ দেয়া হয়েছে, ইউনিট দর কমেছে তার চেয়ে বেশি।
তালিকাভুক্ত ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩০টিই অভিহিত মূল্যের চেয়ে কমে লেনদেন হচ্ছে। যেসব ফান্ডের ইউনিট প্রতি সম্পদমূল্য সাড়ে ১০ টাকার বেশি, সেগুলো লেনদেন হচ্ছে ৫ টাকা বা আশেপাশে দরে। এই অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা আরও হতাশ এই কারণে যে, এবার লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট শেষে ক্রেতা এতটাই কমে গেছে যে, অর্ডার দিয়েও ইউনিট বিক্রি করা যাচ্ছে না।
মিজানুর রহমান এই আলোচনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মিউুচয়াল ফান্ডের যে সংষ্কার করা হয়েছে সেগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা যখন কাজ শুরু করি বাংলাদেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের ১০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে তিন হাজার কোটি টাকা লোকসানে ছিল। আমরা আসার পরে এই খাতে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে নিয়ে আসতে কাজ করেছি। এখন এই খাতের অবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো। আমরা এখন এই খাতকে বড় করার জন্য নতুন নতুন পণ্য নিয়ে আসতে কাজ করছি। আমরা ইটিএফ নিয়ে আসছি। আমাদের কাছে ৫টি ইটিএফ আবেদন করেছেভ এই বছরের শেষে বাজারে ৫টি ইটিএফ আসবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এএএমসিএমএফ এর সভাপতি হাসান ইমাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থিত করেন এএএমসিএমএফ এর ট্রেজারার আজাদ চৌধুরী। এছাড়া অতিথি হিসেব উপস্থিত ছিলেন বিএসইসি কমিশনার রুমানা ইসলাম ও আরেক কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।
বিএসইসি আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সংঘের সদস্য। এই সংঘের নাম হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ সিকিউরিটিস কমিশনস বা আইওএসসিও। আইওএসসিও এর সদস্য দেশগুলো তাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের সচেতন করতে, বিনিয়োগ শিক্ষা বাড়াতে, বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ পালন করে থাকে। বিএসইসি ২০১৭ সাল থেকে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ বাংলাদেশে পালন করে আসছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন