নিরাপদ প্রজননের জন্য গতকাল মধ্যরাত থেকে দেশের নদ-নদীতে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। ইলিশের প্রজনন নির্বিঘœ করতে বেশ কয়েক বছর ধরে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে। এই সময় ইলিশ মাছ ধরা, বিক্রি, বিপণন, মজুত ও পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের সংবাদদাতার তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদনÑ
বরিশাল ব্যুরো জানায়, প্রতিবছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে মিলিয়ে ইলিশের ডিম ছাড়ার এসময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নদীতে ছুটে আসে। এ সময় ইলিশকে স্বাচ্ছন্দ্যে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতেই সরকার দেশের সব নদ-নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
মৎস্য বিজ্ঞানীগণ আশ্বিনের পূর্ণিমার আগে পড়ে ভোলার পশ্চিম আউলিয়া পয়েন্ট-তজুমদ্দিন, মনপুরা দ্বীপ, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লতাচাপলি পয়েন্ট-এর ধলচর দ্বীপ, মৌলভীরচর দ্বীপ, কালিরচর দ্বীপ এবং মায়ানী পয়েন্ট-মীরসরাই ছাড়াও কুতুবদিয়া পয়েন্ট এলাকায় মা ইলিশের অত্যাধিক প্রচুর্য চিহিৃত করেছেন।
এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে পুলিশ এবং র্যাব ছাড়াও বাংলাদেশ নৌ বাহিনী ও কোস্ট গার্ডকেও সম্পৃক্ত করছে সরকার। এ নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে মৎস্য অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান তালুকদার ‘ইলিশ রক্ষায় সরকারি নির্দেশনার আলোকে জিরো টলারেন্স নিয়ে তা কার্যকর’ করার কথা জানিয়েছেন।
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় মা ইলিশ রক্ষায় সমুদ্রে ও নদীতে ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিপণন বন্ধ থাকবে। সেই হিসেবে গতকাল ছিল ইলিশ ক্রয় বিক্রয়ের শেষ দিন। এদিন খুলনার হাটবাজারে ইলিশ কিনতে গিয়ে অনেকেই খালি হাতে বাড়ি ফিরে গেছেন। অন্যান্য দিনের মতো খুব ভোরে নগরীর নতুন বাজার মৎস্য আড়তে ইলিশ বেচাকেনা শুরু হয়। বিক্রির শেষদিন বলে বিক্রেতারা মাইকিং করে ইলিশ বিক্রি করেন।
এদিকে, নগরীর বড়বাজার, চিত্রালী বাজার, নিউমার্কেট বাজার, দৌলতপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, উচ্চ মূল্যের কারণে অনেকেই ইলিশ কিনতে না পেরে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। ক্রেতারা ধারণা করেছিলেন, শেষদিনে দাম হয়তো কম হবে কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। পাইকারি বাজারের সাথে খুচরা বাজারে ইলিশের কেজিতে পার্থক্য প্রায় একশ’ টাকা।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল জানান, ৭ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত সমুদ্র ও নদীতে ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিপণন নিষিদ্ধ থাকবে। মা ইলিশ রক্ষায় এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জেলেদেরকে সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে।
ল²ীপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ল²ীপুরের মেঘনা নদীতে মৎস্য প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিষেধাজ্ঞার সময়ে নদীতে সার্বক্ষণিক নজরদারি করবেন এবং নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করবেন। অভিযান সফল করতে জেলা, উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য অফিদফতর, পুলিশ, নৌ-পুলিশ, নৌ-বাহিনী এবং কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তারা অভিযান সফল করতে দিন-রাত কাজ করবে।
ল²ীপুর সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. সারোয়ার জামান বলেন, ইলিশ সাধারণত সামুদ্রিক মাছ। তবে প্রজনন সময়ে এ মাছ নদীতে চলে আসে। আশ্বিন মাসের ভরা পূর্ণিমায় বেশিরভাগ ইলিশ ডিম ছাড়ে। এ সময়টাতে ইলিশ মাছ বাঁধাপ্রাপ্ত হলে তাদের প্রজননও বাঁধাগ্রস্ত হয়। ফলে এসব ডিমওয়ালা মা ইলিশ যাতে নির্বিঘেœ ডিম ছাড়তে পারে সেজন্য জেলেদেরকে নদীতে মাছ শিকার থেকে বিরত রাখা হয়।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, দক্ষিণের বৃহৎ মৎস্য বন্দর মহিপুর ও আলীপুর ঘাটসহ শিববাড়িয়া নদীতে এসে পৌঁছেছে সমুদ্রগামী মাছধরা হাজারো ট্রলার। তবে অবরোধকালীন সময়ে জেলেদের প্রদেয় প্রণোদনা বাড়ানোসহ দেশের সীমানায় প্রতিবেশি দেশের জেলেদের মাছ ধরা বন্ধে কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন মৎস্যজীবীরা।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, অবরোধ সফল করতে আমরা জেলে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এছাড়া জেলে পল্লীগুলোতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে।
ভোলা জেলা সংবাদদাতা জানান, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২২ সফল করতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ নিয়ে মৎস্য বিভাগের উদ্যোগে প্রতিদিনই হাট-বাজার, জেলে পল্লী, মাছ ঘাট, মৎস্য আড়ৎগুলোতে জেলেদের নিয়ে সচেতনতা সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একইসাথে ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট, মাইকিং ইত্যাদির মাধ্যমে জেলেদের অভিযান সম্পর্কে জানান দেয়া হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদউল্লাহ জানান, ৬ তারিখ রাত ১২টার পর থেকেই আমাদের অভিযান শুরু হবে চলবে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত। এ সচেতনতামূলক সভায় জেলেদের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মৎস্যজীবী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত থাকছেন। বাস-ট্রাক-লঞ্চগুলোতে চিঠি দেয়া হবে, নিষোজ্ঞাকালীন সময়ে ইলিশ মাছ পরিবহন থেকে বিরত থাকার জন্য। বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে বরফকলগুলোকে। এই সময়ে জেলেদের গ্রহণ করা ঋণের কিস্তি স্থগিত রাখার জন্য এনজিওগুলোকে চিঠি দেওয়া হবে। আমরা নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে নদীতে কোন নৌকা বা ট্রলার নামতে দেবনা। এ জন্য বিভিন্ন খাল ও মাছ ঘাটগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন