দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার প্রায় ১ কোটি জনসংখ্যার ৭০ লাখ ৩৩ হাজার ৫২৫ জন করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে গত ৩ অক্টোবর থেকে তা বন্ধ হয়ে গেছে। এ অঞ্চলে ঠিক কতজন এখনো ভ্যাকসিনের আওতার বাইরে রয়েছে তা বলতে না পারলেও স্বাস্থ্য বিভাগের মতে প্রথম ডোজ প্রদান আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হলেও বাদ পড়াদের যে কেউ ইচ্ছে করলে টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে হাজির হয়ে তা গ্রহণ করতে পারবেন।
তবে একাধিক সূত্র মতে, দক্ষিণাঞ্চলের ১ কোটি জনসংখ্যার অন্তত ২০ ভাগ মানুষ এখনো করোনা ভ্যাকসিনের বাইরে রয়েছেন। সে ক্ষেত্রে কিছু বিধি বিধান মানতে হবে। সেপ্টেম্বর মাসে দক্ষিণাঞ্চরে ৪৮ হাজার ৫৪৯ জন প্রথম ডোজ ও ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৭৯০ জন দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করলেও বুষ্টার ডোজ গ্রহণে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। গত মাসে দক্ষিণাঞ্চলের ৪২ উপজেলায় বুষ্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন ২৬ লাখ ৯২ হাজার ৩০৪ জন।
অপরদিকে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুধুমাত্র বরিশাল সিটি করপোারেশন এলাকায় ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী ছাত্রÑছাত্রীদের করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হলেও চলতি মাস থেকে সবগুলো জেলা ও উপজেলায় তা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ভ্যাকসিন প্রদান আগে থেকেই দক্ষিণাঞ্চলে সর্বত্রই উন্মুক্ত ছিল। গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বরিশাল মহানগরীর ৫Ñ১১ বছর বয়সী মাত্র সাড়ে ১০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে ভ্যাকসিন দেয়া করা হয়। আর ১২-১৭ বছর বয়সী ১ম ডোজের ভ্যাকসিন গ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ৩৫ হাজার এবং দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছে ৯ লাখ।
অপরদিকে গত মাসে দক্ষিণারঞ্চলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আগষ্টের তুলনায় দ্বিগুন বেড়েছে। আগষ্টে দক্ষিণাঞ্চলের ৪২ উপজেলায় যেখানে ১০৮ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে, সেখানে সেপ্টেম্বরে সংখ্যাটা দ্বিগুনেরও বেশি বেড়ে দাঁড়ায় ২৭৩ জনে।
স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেব অনুযায়ী ৭ অক্টোবর, শুক্রবার পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৫৪ হাজার ১৯৮ জনে। গত ৩৬ দিনে বরিশালে ২৭৩ জনসহ মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ২২ হাজার ২১ জনে। এর মধ্যে গত এক মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ১৪৪ জন। পটুয়াখালীতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত ৭ হাজার ১৭৯ জন আক্রান্তের মধ্যে গত মাসেই ২১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। দ্বীপ জেলা ভোলাতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত ৮ হাজার ৪৪ জনের মধ্যে গত এক মাসে ৩৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। পিরোজপুরেও এ পর্যন্ত আক্রান্ত ৬ হাজার ৪৩৬ জনের মধ্যে গত মাসে ৩৯ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। বরগুনাতেও এ পর্যন্ত শনাক্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৭৭৫। যার মধ্যে গত মাসে ২১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের ছোট জেলা ঝালাকাঠীতে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৪৩ জন আক্রান্তের মধ্যে গত এক মাসেই ২৫ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।
তবে দক্ষিণাঞ্চলে এ পর্যন্ত করোনা সংক্রমণে ৬৯৩ জনের মৃত্যু হলেও গত ৩ মাসে কোন মৃত্যু সংবাদ নেই বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। এ পর্যন্ত মৃতদের মধ্যে মহানগরীতে ১০৫ জনসহ বরিশাল জেলায় ২৩৭, পটুয়াখালীতে ১১০, বরগুনাতে ৯৯, ভোলাতে ৯২, পিরোজপুরে ৮৩ এবং ঝালকাঠীতে ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত জুলাই মাসে দক্ষিণাঞ্চলে করোনা পজিটিভ শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৮৭৩। মৃত্যু হয় ৩ জনের। জুন মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৭১। এ ছাড়া গত মার্চে ১২০ জন, এপ্রিলে ৭ জন এবং মে মাসে মাত্র ৩ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছিল দক্ষিণাঞ্চলের ৪২ উপজেলায়।
অপরদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমিত হিসেব অনুযায়ী দক্ষিণাঞ্চলে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৬ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩শ’ শয্যার করোনা ওয়ার্ডে ইতোপূর্বে যেখানে রোগীদের ঠাই মিলত না, সেখানে এখন দৈনিক গড়ে ৩-৪ জনের বেশি রোগী থাকছে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন