মুন্সীগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের তীব্র সঙ্কট চলছে। জেলা সদরসহ আশপাশের এলাকায় দিনের বেলায় গ্যাসের পর্যাপ্ত চাপ না থাকায় বাসাবাড়িতে রান্নায় গৃহিনীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গ্যাসের চাপ না থাকায় আবাসিক গ্রাহকরা বাধ্য হয়ে বিকল্প হিসেবে সিলিন্ডার গ্যাস কেহ কেরোসিন বা মাটির চুলা ব্যবহার করছে। এতে আবাসিক গ্রাহকদের প্রতিমাসে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় এবং একই পাইপ লাইনে নারায়নগঞ্জ এবং মুন্সীগঞ্জে গ্যাস সরবরাহ করায় গ্যাসের চাপ মুন্সীগঞ্জে কমে যাচ্ছে। এ কারণে মুন্সীগঞ্জে গ্যাসের তীব্র সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। পর্যাপ্ত গ্যাসের অভাবে বিভিন্ন শিল্প কল-কারখানায়ও উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, মুন্সীগঞ্জ জেলা সদরসহ আশপাশ এলাকায় প্রথম ১৯৯৫ সালে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়। বর্তমানে মুন্সীগঞ্জে আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা রয়েছে সাড়ে ১৩ হাজার ৭১৬ এবং দুইটি সিএনজি স্টেশনসহ ২৫টি শিল্প কল কারখানায় গ্যাস সংযোগ রয়েছে। গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্যাসের চাহিদা কয়েক গুণ বাড়লেও গত ২৫ বছরে গ্যাস সরবরাহ চাহিদার তুলনায় বৃদ্ধি পায়নি। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহের জন্য সরবরাহ লাইনের উন্নতি হয়নি।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মুন্সীগঞ্জের ব্যবস্থাপক মো. মেসবাউদ্দিন আহম্মেদ জানান, বর্তমানে মুন্সীগঞ্জে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে প্রতি মাসে প্রায় ৭১ লাখ ঘনমিটার, এর বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ৪৫ লাখ ঘনমিটার। ফলে ঘাটতি থাকছে ২৬ লাখ ঘনমিটার। পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় গ্যাসের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। মুন্সীগঞ্জে গ্যাসের সঙ্কট গত কয়েক বছর ধরে চলছে। গ্যাস সঙ্কট সমাধানের দাবিতে এলাকাবাসী বিভিন্ন সময় রাস্তায় নেমেছে, মানববন্ধন করেছে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিনেও সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। শহরতলী রামপালের আবাসিক গ্রাহক শামসুন নাহার ক্ষোভের সাথে বলেন, লাইনের গ্যাসে রন্নাবান্না করতে পারছি না। শিশু সন্তানের খাবার সময় মতো তৈরি করতে না পারায় বাধ্য হয়ে লাকরির চুলায় পাক করতে হচ্ছে। তিতাস গ্রাস কোম্পানি পর্যাপ্ত গ্যাস না দিয়েও প্রতি মাসে ১ হাজার ৮০ টাকা বিল নিচ্ছে। এটি আবাসিক গ্রাহকদের ওপর অত্যাচার ছাড়া কিছুই নয়। গ্রাহক আব্দুল রশিদ বরেন, লাইনের গ্যাসে চাপ না থাকায় রান্নার কাজে প্রতি মাসে সিলিন্ডার গ্রাস ব্যবহার করায় অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। নিত্যপ্রযোজনীয় দ্রব্যের উর্ধগতির এ সময়ে সংসার চালাতে যেখানে হিমশিম খাচ্ছি। সেখানে সিলিন্ডার গ্রাসের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় মরার ওপর খড়ার ঘা। সদর উপজেলার মানিকপুর এলাকার চাকরিজীবী সালমা বেগম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি বলেন, গ্যাসের সমস্যার কথা বলে কোন লাভ নেই। মাসের পর মাস নিয়মিত গ্যাস বিল দিয়েও গ্যাস পাচ্ছি না। সকালে গ্যাসের কোন চাপ না থাকায় অফিসে যাবার আগে রান্না কাজ শেষ করে যেতে পারি না। অল্প বেতনে চাকরি করায় প্রতি মাসে সিলিন্ডার গ্যাসের জন্য অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা খরচ করা সম্ভব না। সারাদিন পর্যাপ্ত গ্যাস না থাকায় আবাসিক গ্রাহকদের পাশাপাশি গ্যাস ভিত্তিক শিল্প কল কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
সিমেন্ট ফেক্টরি মালিক এসোসিয়েশনের সভাপতি আলমগীর কবীর জানান, শিল্প লাইনেও গ্যাস চাপ না থাকায় সিমেন্ট ফেক্টরিতে জেনারেটর চালানো যাচ্ছে না, তাতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। জানা যায়, একই পাইপ লাইনে নারায়নগঞ্জের সিদ্বিরগঞ্জ থেকে নারায়নগঞ্জ এবং মুন্সীগঞ্জে গ্যাস সরবরাহ করায় গ্যাসের চাপ মুন্সীগঞ্জে কমে যাচ্ছে। অভিজ্ঞমহলের অভিমত সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ভিন্ন একটি লাইন স্থাপন করে মুন্সীগঞ্জে গ্যাস সরবরাহ করলে গ্যাস সঙ্কটের সমাধান হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন