এক বছরের ব্যবধানে আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দোরগোড়ায়। গত আসরের পর থেকে এই সংস্করণে বাংলাদেশের ত্রাহি অবস্থা। আমূলে বদলে যাওয়া নতুন এক দল বাংলাদেশ। এই ফরম্য্যাটের ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞরা। এক ঝাঁক তরুণ্য নির্ভর দলটির নেতৃত্ব এখন সাকিব আল হাসানের কাঁধে। দলে অধিনায়কের ভূমিকা বাকি ক্রিকেটারদের মতো নয়। শুধু ২২ গজে ক্রিকেটীয় লড়াইয়েই নয়, মাঠে নামার আগেও দলটাকে এক সুতায় বাঁধার কাজটা করতে হয় তাকেই। তবে সেই কাজটি কি ঠিক ঠাক করতে পেরেছেন দেশের ক্রিকেটের সবচাইতে বড় এই বিজ্ঞাপন!
এমনিতেই টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান লজ্জাজনক। সদ্য শেষ হওয়া এশিয়া কাপে সেই দীনতা প্রকাশ পেয়েছে মোটা দাগে। শুধু খেলার ধরণেই নয়, শরীরি ভাষাতেও অন্য দলগুলোর চেয়ে যোজন যোজন পিছিয়ে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। শুধু নতুন দল গঠনই নয়, এই দলটিকে ঘিরে প্রয়োজন ছিল বাড়তি যত্নেরও। সেখানে সাকিবের ছন্নছাড়া আচরণ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে বিসিবির দীনতাও।
ক্য্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলার জন্য এশিয়া কাপের পর সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুই ম্যাচের সিরিজ থেকে ছুটি নিয়েছিলেন সাকিব। সাকিবের ছুটি মঞ্জুর নিয়ে তখন বিসিবির ভাষ্য ছিল, আমিরাতের সঙ্গে বাকিরাই পারবে। পেরেছেও। নুরুল হাসান সোহানের নেতৃত্বে দুই ম্যাচের সিরিজটি হোয়াইটওয়াশের উৎসবে মেতেছে বাংলাদেশ। কিন্তু বৃহৎ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কোথায়? বিশ্বকাপ মিশনের আগে নতুন দলটির ছন্দ পরখ করতে অধিনায়কের সফরে থাকা কি উচিত ছিল না!
সে না হয় গেল। বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে নিউজিল্যান্ডে পাকিস্তানকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ। কণ্ডিশন আর শক্তিশালী দুই প্রতিপক্ষের সঙ্গে এক সিরিজে প্রায় ৪ থেকে ৫টি ম্যাচ খেলার সুযোগ কটি দল পেয়ে থাকে? দলের কম্বিনেশন পরখ করার এর চাইতে ভালো সুযোগ কি আর হতে পারতো? এখানেও সাকিবের ‘খামখেয়ালি’ আচরণের দায় এড়াতে পারেনা বিসিবি।
সিপিএলের জন্য বিসিবি সাকিবকে ছুটি দিয়েছিল ২ অক্টোবর পর্যন্ত। ২৮ সেপ্টেম্বর গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্সের সিপিএল শেষ হয়ে যাওয়ার পর সাকিব চেয়েছিলেন ৩০ সেপ্টেম্বর নিউজিল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা দিতে। কিন্তু ৩০ সেপ্টেম্বরের টিকিট তিনি পাননি। পেলে নিউজিল্যান্ডে পৌঁছে যেতে পারতেন ২ অক্টোবরের মধ্যেই। পরের যে টিকিট পেয়েছেন, সেই টিকিটে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাহিতি হয়ে সাকিবের ক্রাইস্টচার্চে পৌঁছানোর কথা ৪ অক্টোবর। অথচ ‘ভিসা জটিলতা আর ফ্লাইট বিড়ম্বনার দোহাই’ দিয়ে নির্ধারিত দিনে পৌঁছুতে পারেন নি সাকিব। পরে একদিন আগে পৌঁছুলেও ‘ভ্রমণক্লান্তি’ জনিত বিশ্রামের দোহাই দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচও তাকে নামাতে পারেনি বিসিবি। দলটাকে বুঝতে ও বোঝাতে নিউজিল্যান্ডে সিরিজ শুরুর আগে তার হাতে যথেষ্ট সময় থাকা উচিত ছিল, যেটা নিশ্চিত করতে পারেনি বিসিবিও।
ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রফি নিয়ে তিন অধিনায়কের ফটোসেশন, সিরিজ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলন আর ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামে বাংলাদেশ নুরুল হাসান সোহানের নেতৃত্বে! ম্যাচটি হেরেছেও বাংলাদেশ বিশ্রিভাবে। না ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে দেখাতে পেরেছে শক্ত কোনো অবস্থান, না ছিল বোলারদের নিবেদন। আজ এই ভঙ্গুর দশা নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। তবে হার-জিত ছাপিয়ে এই ম্যাচেও প্রশ্ন, সাকিব ফিট তো? ফিট তাকলেও খেলবেন তো! তবে টিম ম্যানেজমেন্টের বরাতে পাওয়া স্বস্তির খবর হচ্ছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এই ম্যাচে খেলবেন সাকিব।
পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের আগের দিন দলের সঙ্গে যোগ দেন সাকিব। ভ্রমণক্লান্তি থাকায় তাকে বিশ্রামে রেখেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। সঙ্গে ম্যাচ ফিটনেসের ভাবনাও ছিল। গতকাল ছিল দলের ঐচ্ছিক অনুশীলন। এদিন কোচিং স্টাফদের নিয়ে সাকিব একা কাজ করেছেন লিঙ্কনের নেটে। বিসিবির পাঠানো ভিডিওতে দেখা যায়, সাকিব নেটে থ্রোয়ার রমজানের বল মোকাবিলা করছেন। সে সময়ে দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর শ্রীধরন শ্রীরাম এবং ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স পাশেই ছিলেন। অনুশীলন শেষে কোচিং স্টাফদের সঙ্গে আলাপ করতেও দেখা যায় তাকে।
ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা ১২টায়। ১২ অক্টোবর সকাল ৮টায় স্বাগতিকদের বিপক্ষে হবে তৃতীয় ম্যাচ। গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে ১৩ অক্টোবর পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচটাও শুরু সকাল ৮টায়। পয়েন্ট তালিকার সেরা দুই দল ফাইনাল খেলবে ১৪ অক্টোবর। ত্রিদেশীয় সিরিজ শেষেই বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে রওনা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন