বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

রাহমাতুল্লিল আলামীন এ ধরায় এলেন যেদিন

মুফতি আহমাদ যাকারিয়া | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

মহানবী (সা.) এর শুভাগমন হয়েছিল ৫৭০ খৃ. ১২ই রবিউল আউয়াল রোজ সোমবার। শীতের অবসান প্রায়, তরু শাখা প্রশাখায় নব পাতা-পল্লব সমাগত। এমন এক দিনে রাতের শেষ প্রহরে হালকা শীতের স্নিগ্ধ বাতাস প্রবাহিত হচ্ছিল। পবিত্র মক্কা নগরীতে উঁচু-নিচু ভূমিতে প্রভাতী আলোক শিখা শুভাগমনী বার্তা নিয়ে কারা যেন ছড়িয়ে পড়েছিল। যার আগমনের অপূর্ব নুরে আসমান জমিন আলোকিত হয়েছিল। আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছিল- ‘মারহাবা ইয়া হাবিবাল্লাহ্, শুভাগমণ! অভিনন্দন! সমস্ত সৃষ্টিজগত আজ আনন্দে আত্মহারা, গগণে গগণে ফেরেশতাদের ছুটাছুটি, তোরনে তোরনে সালাম সম্ভাষণ। সবই আজ বিস্মিত, পুলকিত, কম্পিত ও শিহরিত। জড় প্রকৃতির অন্তরেও লেগেছে দোলা। বেহেশতি খুশবুতে বাতাস আজ সুরভিত। যুগ-যুগান্তরের প্রতীক্ষিত না আসা অতিথির আগমণ মুহূর্ত আজ যেন আসন্ন হয়ে ওঠেছে। তারই অভ্যর্থনার জন্য আজ সব আয়োজন। এমন স্নিগ্ধ-শান্ত আমেজের মধ্য দিয়ে শুভ মুহূর্তে সোবহে-সাদিকের সময় আরবের মরু দিগন্তে মক্কা নগরীর এক প্রাচীন কুটিরের নিভৃত কক্ষে মা আমেনার কোলে তাশরীফ আনলেন প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)।

আম্বিয়াগণের শুভাগমণের মুহূর্তে বিস্ময়কর ও আশ্চর্যজনক কিছু ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কথা ইতিহাসে উল্লেখ আছে। সৃষ্টির দুলালের আগমনের মুহূর্তেও অভাবনীয় বিস্ময়কর ও অতি আশ্চর্যজনক কিছু ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায় যাকে বলা হয়- ‘ইরহাসাত’। নবী (সা.) এর জন্মলগ্নে সত্যের আগমনে মিথ্যার কম্পন সৃষ্টি হয়েছিল তামাম দুনিয়ার খোদাদ্রোহী শাষকদের অন্তরে। সৃষ্টির দুলালের শুভ জন্মের সময়ে পারস্যের রাজ প্রাসাদে ফাটল দেখা দেয়, তার ১৪টি গম্বুজ ভূমিতে ধসে পড়ে, পারস্য মন্দিরের অগ্নি নির্বাপিত হয়ে যায়, যা ইতোপূর্বে হাজার বছরেও নির্বাপিত হয়নি। সিরিয়ার মরুভূমিতে নহর প্রবাহিত হলো। সাওয়া নদী শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হলো। সায়্যিদা আমেনার জীর্ণ কুটিরের আলোতে সিরিয়ার সব মহল ও রোম সাম্রাজ্যের প্রাসাদসমূহ পর্যন্ত আলোকিত হলো।

মা আমেনার কোলে তাশরীফ এনেছেন যে-নূর তার নাম মুহাম্মদ (সা.)। হযরত মুহাম্মদ (সা.) একটি নাম। কোটি কোটি মানুষের ওষ্ঠদ্বয় প্রতিদিন বহুবার এ নামের আস্বাদ গ্রহণ করে। এ নাম মুমিনের হৃদয়ে প্রবাহিত করে খুশি ও আনন্দের ফুল্গুধারা। সাড়ে ১৪শ’ বছর ধরে এভাবেই চলছে দুনিয়ার ইতিহাস। পৃথিবীর শেষ দিনটি পর্যন্ত অগণিত মানুষের মুখে মরুর দুলালের নামের উচ্চারণ এবং হৃদয়ের গভীরে তার অনুরাগ এমনিভাবে অব্যাহত থাকবে।

রাসুল (সা.) এর শুভ জন্মের দিন সোমবার দিবসটি ইতিহাস বিজড়িত। রাসুল (সা.) এর শুভ জন্ম হয়েছে সোমবার, নবুওয়্যাত লাভ করেছেন সোমবার, মদিনায় হিজরতের উদ্দেশ্যে মক্কা ত্যাগ করেছেন সোমবার, মদিনা মুনাওয়্যারায় আগমন করেছেন সোমবার, উম্মতদেরকে শোক সাগরে ভাসিয়ে পরপারে যাত্রা করেছেন সোমবার এবং হাজরে আসওয়াদ স্থাপন করেছেন সোমবার।

মানব সৃষ্টির কমবেশি ছয় হাজার বছর পর সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হিসেবে আবির্ভূত হয়ে ওহির জ্ঞানের আলোকে আদর্শ সমাজ গড়ে যে শিক্ষা মানব জাতিকে দিয়েছেন, সে শিক্ষার আলোকে পথ চলে আমরাও হাউজে কাউসার পানকারী এবং তাঁর শাফায়াতের যোগ্য হতে পারি ইনশাআল্লাহ।

সমস্যা হোক পাহাড়সম, জটিলতা হোক সমুদ্রসম তবুও নবীজীর আনীত ধর্মে তার সঠিক সমাধান ও সঠিক উত্তর নিহিত রয়েছে। প্রিয় নবীজির অপ্রতিদ্বন্দ্বী আদর্শের দিকে ফিরে যাওয়াতেই রয়েছে ইহকালীন ও পরকালীন শান্তি। তাঁর অনিন্দ্য সুন্দর জীবনের আলোয় আমাদের জীবনকে আলোকিত করার মধ্যেই রয়েছে সফলতা। নবী (সা.) এর প্রদর্শিত মত ও পথকে মুক্তির একমাত্র গ্যারান্টি হিসেবে জীবনের সর্বক্ষেত্রে গ্রহণ করার মধ্যেই রয়েছে আমাদের কল্যাণ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Ismail Sagar ৯ অক্টোবর, ২০২২, ৬:১৮ এএম says : 0
উম্মতের প্রতি নবী কারিম (সা.)-এর নির্দেশনা ও ভালোবাসার প্রমাণ। ব্যক্তি জীবনেও তিনি ছিলেন আদর্শ ও অনুকরণীয়। হজরত আলী (রা.) ছিলেন নবী কারিম (সা.)-এর অন্তরঙ্গ সাথিদের একজন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আচরণশৈলী সম্পর্কে হজরত হুসাইন (রা.)-এর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ ছিলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল ও বিনম্র স্বভাবের অধিকারী। তিনি রূঢ়ভাষী ও কঠিন হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন না। তিনি উচ্চস্বরে কথা বলতেন না, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করতেন না, অপরের দোষ খুঁজে বেড়াতেন না এবং তিনি কৃপণ ছিলেন না। তিনি অপছন্দনীয় কথা থেকে বিরত থাকতেন। তিনি কাউকে নিরাশ করতেন না, আবার মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও দিতেন না। অর্থহীন বিতর্কে লিপ্ত হওয়া, প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলা এবং অপ্রয়োজনীয় কোনো প্রসঙ্গের পেছনে লাগা এই তিনটি বিষয় থেকে তিনি দূরে থাকতেন। অন্যের বেলায়ও তিনটি বিষয় থেকে বিরত থাকতেন কাউকে মন্দ বলা, কারও দোষ-ত্রুটি তালাশ করা এবং কারও গোপন অন্বেষণের জন্য আড়ি পাততেন না ...।’ শামায়েলে তিরমিজি : ২৬৯
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ৯ অক্টোবর, ২০২২, ৬:১৭ এএম says : 0
উম্মতের কল্যাণ সাধনা ছিল তার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। উম্মতকে ঘিরে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় কাটতো তার রাতদিন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে একজন রাসুল এসেছেন, যিনি তোমাদের বিপন্ন কষ্ট পান। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী। মুমিনদের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু।’ সুরা তওবা : ১২৮
Total Reply(0)
Md Ali Azgor ৯ অক্টোবর, ২০২২, ৬:১৬ এএম says : 0
নবী মুহাম্মদ (সা.) একক কোনো জাতি-গোষ্ঠীর নবী নন। তিনি ছিলেন সমগ্র বিশ্বের সব মানুষের নবী। রাহমাতুল্লিল আলামিন (সা.)। উম্মতের প্রতি তার দরদ ও ভালোবাসা ছিল অপরিসীম।
Total Reply(0)
Rabbul Islam Khan ৯ অক্টোবর, ২০২২, ৬:১৯ এএম says : 0
দ্বীন প্রতিষ্ঠায় এমন ত্যাগী ও সাধক পুরুষ পৃথিবী এর আগে কাউকে দেখেনি। তিনি মুসলিম জাতির মধ্যমণি, হৃদয়ের স্পন্দন।
Total Reply(0)
Jahangir Kabir ৯ অক্টোবর, ২০২২, ৬:১৯ এএম says : 0
মুসলমানরা নিজেদের জীবনের তুলনায় তাকে বেশি ভালোবাসে। এ ভালোবাসা ইমানের দাবি।
Total Reply(0)
Md. Kabir ১০ অক্টোবর, ২০২২, ৯:১৯ পিএম says : 0
হযরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন