মহানবী (সা.) এর শুভাগমন হয়েছিল ৫৭০ খৃ. ১২ই রবিউল আউয়াল রোজ সোমবার। শীতের অবসান প্রায়, তরু শাখা প্রশাখায় নব পাতা-পল্লব সমাগত। এমন এক দিনে রাতের শেষ প্রহরে হালকা শীতের স্নিগ্ধ বাতাস প্রবাহিত হচ্ছিল। পবিত্র মক্কা নগরীতে উঁচু-নিচু ভূমিতে প্রভাতী আলোক শিখা শুভাগমনী বার্তা নিয়ে কারা যেন ছড়িয়ে পড়েছিল। যার আগমনের অপূর্ব নুরে আসমান জমিন আলোকিত হয়েছিল। আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছিল- ‘মারহাবা ইয়া হাবিবাল্লাহ্, শুভাগমণ! অভিনন্দন! সমস্ত সৃষ্টিজগত আজ আনন্দে আত্মহারা, গগণে গগণে ফেরেশতাদের ছুটাছুটি, তোরনে তোরনে সালাম সম্ভাষণ। সবই আজ বিস্মিত, পুলকিত, কম্পিত ও শিহরিত। জড় প্রকৃতির অন্তরেও লেগেছে দোলা। বেহেশতি খুশবুতে বাতাস আজ সুরভিত। যুগ-যুগান্তরের প্রতীক্ষিত না আসা অতিথির আগমণ মুহূর্ত আজ যেন আসন্ন হয়ে ওঠেছে। তারই অভ্যর্থনার জন্য আজ সব আয়োজন। এমন স্নিগ্ধ-শান্ত আমেজের মধ্য দিয়ে শুভ মুহূর্তে সোবহে-সাদিকের সময় আরবের মরু দিগন্তে মক্কা নগরীর এক প্রাচীন কুটিরের নিভৃত কক্ষে মা আমেনার কোলে তাশরীফ আনলেন প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)।
আম্বিয়াগণের শুভাগমণের মুহূর্তে বিস্ময়কর ও আশ্চর্যজনক কিছু ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কথা ইতিহাসে উল্লেখ আছে। সৃষ্টির দুলালের আগমনের মুহূর্তেও অভাবনীয় বিস্ময়কর ও অতি আশ্চর্যজনক কিছু ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায় যাকে বলা হয়- ‘ইরহাসাত’। নবী (সা.) এর জন্মলগ্নে সত্যের আগমনে মিথ্যার কম্পন সৃষ্টি হয়েছিল তামাম দুনিয়ার খোদাদ্রোহী শাষকদের অন্তরে। সৃষ্টির দুলালের শুভ জন্মের সময়ে পারস্যের রাজ প্রাসাদে ফাটল দেখা দেয়, তার ১৪টি গম্বুজ ভূমিতে ধসে পড়ে, পারস্য মন্দিরের অগ্নি নির্বাপিত হয়ে যায়, যা ইতোপূর্বে হাজার বছরেও নির্বাপিত হয়নি। সিরিয়ার মরুভূমিতে নহর প্রবাহিত হলো। সাওয়া নদী শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হলো। সায়্যিদা আমেনার জীর্ণ কুটিরের আলোতে সিরিয়ার সব মহল ও রোম সাম্রাজ্যের প্রাসাদসমূহ পর্যন্ত আলোকিত হলো।
মা আমেনার কোলে তাশরীফ এনেছেন যে-নূর তার নাম মুহাম্মদ (সা.)। হযরত মুহাম্মদ (সা.) একটি নাম। কোটি কোটি মানুষের ওষ্ঠদ্বয় প্রতিদিন বহুবার এ নামের আস্বাদ গ্রহণ করে। এ নাম মুমিনের হৃদয়ে প্রবাহিত করে খুশি ও আনন্দের ফুল্গুধারা। সাড়ে ১৪শ’ বছর ধরে এভাবেই চলছে দুনিয়ার ইতিহাস। পৃথিবীর শেষ দিনটি পর্যন্ত অগণিত মানুষের মুখে মরুর দুলালের নামের উচ্চারণ এবং হৃদয়ের গভীরে তার অনুরাগ এমনিভাবে অব্যাহত থাকবে।
রাসুল (সা.) এর শুভ জন্মের দিন সোমবার দিবসটি ইতিহাস বিজড়িত। রাসুল (সা.) এর শুভ জন্ম হয়েছে সোমবার, নবুওয়্যাত লাভ করেছেন সোমবার, মদিনায় হিজরতের উদ্দেশ্যে মক্কা ত্যাগ করেছেন সোমবার, মদিনা মুনাওয়্যারায় আগমন করেছেন সোমবার, উম্মতদেরকে শোক সাগরে ভাসিয়ে পরপারে যাত্রা করেছেন সোমবার এবং হাজরে আসওয়াদ স্থাপন করেছেন সোমবার।
মানব সৃষ্টির কমবেশি ছয় হাজার বছর পর সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হিসেবে আবির্ভূত হয়ে ওহির জ্ঞানের আলোকে আদর্শ সমাজ গড়ে যে শিক্ষা মানব জাতিকে দিয়েছেন, সে শিক্ষার আলোকে পথ চলে আমরাও হাউজে কাউসার পানকারী এবং তাঁর শাফায়াতের যোগ্য হতে পারি ইনশাআল্লাহ।
সমস্যা হোক পাহাড়সম, জটিলতা হোক সমুদ্রসম তবুও নবীজীর আনীত ধর্মে তার সঠিক সমাধান ও সঠিক উত্তর নিহিত রয়েছে। প্রিয় নবীজির অপ্রতিদ্বন্দ্বী আদর্শের দিকে ফিরে যাওয়াতেই রয়েছে ইহকালীন ও পরকালীন শান্তি। তাঁর অনিন্দ্য সুন্দর জীবনের আলোয় আমাদের জীবনকে আলোকিত করার মধ্যেই রয়েছে সফলতা। নবী (সা.) এর প্রদর্শিত মত ও পথকে মুক্তির একমাত্র গ্যারান্টি হিসেবে জীবনের সর্বক্ষেত্রে গ্রহণ করার মধ্যেই রয়েছে আমাদের কল্যাণ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন