শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেতাবে ‘কাজির গরু’

চিনির দাম বাড়লেও বাজারে সয়াবিন-পাম অয়েলের দাম কমেনি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

গ্রাম বাংলায় প্রচলিত প্রবাদ ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’। এর ব্যাখ্যা হলো গোয়ালে কতটি গরু রয়েছে বা বাস্তব চিত্র কি সেটা দেখার দরকার নেই; কাগজপত্র ঠিক রাখতে হবে। উপনিবেশিক শাসনামলে মূলত সরকারি কর্মকর্তারা মাঠের চিত্র না দেখেই কাগজপত্রের হিসেব ঠিক রাখতেন। সে সময় এই প্রবাদটি চালু হয়। ইংরেজরা চলে গেছে প্রায় পৌঁনে একশ বছর আগে। কিন্তু বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজীর কেতাবের কৌশল গ্রহণ করে চলছেন। গত এক বছর ধরে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন, কমাচ্ছেন। পণ্যের দাম বৃদ্ধি করার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হচ্ছে। কিন্তু পণ্যের দাম কমালে তা কার্যকরে মাসের পর মাস লেগে যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়টি যেন দাম কমানো, বাড়ানোর মধ্যেই দায়িত্ব সম্পন্ন করছে। বাজারে প্রকৃত চিত্র দেখার প্রয়োজন মনে করছে না।

মানুষের নিত্যপণ্যের চাহিদা, সরবরাহের প্রকৃত চিত্র না দেখেই পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে; আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমানো হচ্ছে। কিন্তু এরপর বাজার তদারকি ও নিয়ন্ত্রণে নেই। বর্তমানে দেশের ভোজ্যতেলের বাজারে নৈরাজ্য চলছেই। গত ৩ অক্টোবর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ১৪ টাকা কমানো হয়েছে। এ ঘোষণার পর বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনি। গতকাল শনিবার পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারে আগের দামেই তেল বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে গত ৬ অক্টোবর পাম তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা কমিয়ে ১২৫ টাকা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিনির দাম বাজারে বেড়ে গেলেও পাম তেলের দাম কমেনি। ভুক্তভোগী ক্রেতারা বলছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম বেধে দিয়েই খালাস। তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে না। মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমান আদালত বসালেও ক্রেতারা যাতে মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া দামে পণ্য কিনতে পারেন সে ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। যার কারণে ভোক্তাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে।

এ নিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, কমদামের তেল তারা এখনো পাননি। আর সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো বলছে, নতুন দামের তেলের উৎপাদন শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর যাত্রবাড়ি, শনিরআখড়া, ধোলাইপাড়, আরামবাগ, সায়েদাবাদ এলাকার একাধিক দোকান ঘুরে নতুন দামের তেল পাওয়া যায়নি। কোম্পানি থেকে আগের দামেই তারা কিনছেন বলে অভিযোগ করেছেন দোকানিরা।

অথচ গত সোমবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন দাম কমিয়ে ১ লিটার সয়াবিনের তেলের মূল্য নির্ধারণ করে ১৭৮ টাকা; যা আগে ছিল ১৯২ টাকা। অন্যদিকে ৫ লিটার বোতলে ৬৫ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৮০ টাকা; যা আগে ছিল ৯৪৫ টাকা। অর্থ্যাৎ বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিনে লিটার প্রতি ১৩ টাকা কমেছে। খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৭ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫৮ টাকা। কিন্তু কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী জানান, তারা আগের দামেই তেল ক্রয় করছেন এবং বিক্রি করছেন। শনির আখড়ার মনির স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. মনির হোসেন জানান, বোতলজাত ১ লিটার তেল তিনি ১৯০-১৯২ টাকায় বিক্রি করছেন। অন্যদিকে ৫ লিটারের তেল বিক্রি করছেন ৯৪৫ টাকায়। বাড়তি দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগের দামেই তেল বিক্রি করছি। কারণ নতুন মূল্যে তেল এখনো কোম্পানি দিয়ে যায়নি। কমানো দামে তেল দিলে আমরাও তেলের দাম কমাতে পারবো।

যাত্রাবাড়ি এলাকায় কয়েকটি দোকান ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, নতুন দামের খবর শুনেছি কিন্তু এর প্রভাব নেই। কেননা কোম্পানিগুলো এখনও পুরোনো দামে তেল বিক্রি করছে। দাম কমানোর সরকারি ঘোষণার পর পাইকারি বাজার থেকে আগের দামে তেল কিনে বিক্রি করতে হচ্ছে। কম দামে তেল পেলে আমরাও কম দামে বিক্রি করবো।

আরামবাগ ও ফকিরাপুল বাজারে দেখা গেছে একই চিত্র। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন দামের সয়াবিন তেল বাজারে এখনো আসেনি। আগের দামেই তেল বিক্রি করছেন সবাই। ক্রেতারা দোকানে গিয়ে নতুন দামের সয়াবিন চাইছেন, এ নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক এস এম মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, নতুন দামের সয়াবিন তেল বাজারে এখনো আসেনি। তবে এর উৎপাদন শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে সারা দেশে নতুন দামের তেল পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।

এদিকে গত ৬ অক্টোবর পাম তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা কমিয়ে ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বেশিরভাগ দোকানে পাম তেল বিক্রি না হলেও যেসব দোকানে পাম তেল বিক্রি হচ্ছে তারা আগের দামেই তেল বিক্রি করছেন। কারণ হিসেবে বিক্রেতারা পুরোনো দামে তেল পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার পর গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব শেষ করেন। পরবর্তীতে বাজারে সে সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে কি-না তা দেখছে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন