বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাতের অন্ধকারে নদীতে চলছে ইলিশ শিকার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০২২, ১০:১৫ এএম

সারা দেশে ইলিশ ধরার ওপরে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। সরকারি এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দেশের বিভিন্ন এলাকার নদীতে রাতের অন্ধকারে জেলেরা অবাধে ইলিশ ধরছে। আর ওইসব ইলিশ বিক্রিও হচ্ছে গোপনে। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে, আবার কোথাও কোথাও তাদের ম্যানেজ করে নদীতে চলছে ইলিশ ধরার মহোৎসব।

জানা গেছে, নৌকাতেই এসব ইলিশ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা জেলেদের কাজটি করতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেঘনা নদীর তীর লাগোয়া ১০টি স্থানে ও ভোলার ইলিশা বন্দরের পাড় ঘেঁষে রাত গভীর হলেই জমে ওঠে অবৈধভাবে ধরা এসব ইলিশের হাট। এসব হাটেই রাতের বেলায় ধরা ইলিশ বিক্রি হয়ে যায়। ট্রলারে করে এসে এসব হাট থেকে ইলিশ কিনে নিয়ে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করছেন তারা। আবার কেউ কেউ সংরক্ষণ করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জেলে জানিয়ছেন, মাছ ব্যবসায়ীরাই জেলেদের জাল ফেলতে বাধ্য করেন। দাম বেশি দেওয়ার লোভও দেখায় কেউ কেউ। জেলেদের যারা অগ্রিম টাকা নেয় তারা বাধ্য হয় মাছ ধরতে। প্রশাসনের কেউ কেউ অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন বলেও অভিযাগ পাওয়া গেছে।
এদিকে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে রাতে নদীতে অভিযান পরিচালনা অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মুন্সীগঞ্জের পর ধলেশ্বরী থেকে শুরু করে পুরো মেঘনা নদী হয়ে বরিশালের মুলাদি এবং শিকারপুরের সন্ধ্যা নদীর মোহনা পর্যন্ত, অপরদিকে ভোলার তেঁতুলিয়া নদীতে রাতে শত শত ট্রলারে চলছে ইলিশ আহরণ। এসব নদীতে রাতের বেলায় চলাচলকারী একাধিক নৌযান চালকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে মিলিয়ে মোট ১৫ থেকে ১৭ দিন ইলিশের ডিম ছাড়ার প্রধান মৌসুম মনে করা হলেও এখন সময় আরও বাড়িয়েছে সরকার। গবেষকদের মতে, ইলিশ শুধু আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমায় নয়, অমাবস্যায়ও ডিম ছাড়ে। সে কারণে সময় বাড়িয়ে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়িয়ে ২২ দিন করা হয়েছে। এ সময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ ছুটে আসে নদীতে। ফলে মা-ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন রাখতে প্রতিবছর তিন সপ্তাহ ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ২৮ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত। মা ইলিশকে স্বাচ্ছন্দ্যে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতেই এ সময়ে ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট, ১৯৫০’-এর অধীন প্রণীত ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ রুলস, ১৯৮৫’ অনুযায়ী, সারা দেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এসময় দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে। ইলিশ আহরণে বিরত থাকা সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলেদের সরকার খাদ্য সহায়তা হিসেবে দেবে ভিজিএফ চাল।
কিন্তু সরকারের এতসব উদ্যোগের পরেও রাতের অন্ধকারে দেশের মেঘনাসহ বিভিন্ন এলাকার নদীতে চলছে ইলিশ শিকার। দিনের বেলা নদীতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হলেও রাতে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসন কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নদীতে যায় না। এই সুযোগেই শত শত জেলে নৌকা নিয়ে ইলিশ শিকার করছে। ধরছে মা ইলিশ। ঢাকা থেকে নৌপথে বরিশাল ও ভোলা আসা-যাওয়ার পথে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
বিভিন্ন রুটে নৌযান পরিচালনাকারী সদস্যরা জানিয়েছেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা- উপজেলা থেকে ঢাকার দিকে ছেড়ে আসা এবং ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলো মুন্সীগঞ্জের পর থেকে নদীতে স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারে না। রাতে নদীতে জাল ফেলে জেলেরা নৌকায় বা ট্রলারে অবস্থান করেন। কোনও নৌযানকে তাদের জালের কাছাকাছি দিয়ে আসতে দেখা মাত্রই নৌকা থেকে উচ্চ আলো ছড়াতে সক্ষম টর্চলাইট দিয়ে দিক পরিবর্তনের নির্দেশনা দেয়। লঞ্চগুলোর চালকরা এসব টর্চের আলোতে দেখানো নির্দেশনা অনুযায়ী দিক পরিবর্তনের মাধ্যমে জাল ফেলা এলাকা অতিক্রম করে। এটি এখন মেঘনা অববাহিকা সংলগ্ন নদীগুলোর রাতের স্বাভাবিক দৃশ্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন