টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে সাকিব আল হাসানের পেশাদারিত্ব নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। তাসমান প্রতিবেশি নিউজিল্যান্ডে গুরুত্বপূণ ত্রিদেশীয় সিরিজে তার দেরিতে পৌঁছা, কিংবা পৌঁছুলেও বিশ্রামের অযুহাতে প্রথম ম্যাচে না খেলা- পাকিস্তানের কাছে ঐ ম্যাচ বাজেভাবে পারের পর এসবই এখন জন্ম দিচ্ছে নানান প্রশ্নের। গতপরশু সিরিজে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামে বাংলাদেশ। একাদশে ফেরা অধিনায়কের ব্যাটিং পজিশন নিয়ে তাই ছিল মেলা কৌতূহল। তার ফিটনেস নিয়ে ভাবনার সীমানায় সম্ভাব্য পজিশন ছিল মূলত তিন-চার-পাঁচ নম্বর। কিন্তু অনেকটাই চমকে দিয়ে তিনি ব্যাটিংয়ে নামেন সাত নম্বরে! ম্যাচটি কোনো প্রকার লড়াই না করেই হেরে গেছে তার দল। নিজের ‘লাকি’ সেভেনও পরিণত ‘আনলাকি’তে! ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে বাংলাদেশে করা ১৩৮ রান মাত্র দুই উইকেট খুইয়ে ১৩ বল আগেই টপকে যায় স্বাগতিকরা।
সুদীর্ঘ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এতটা নিচে ব্যাট করার অভিজ্ঞতা আছে তার আর স্রেফ দুইবার। ২০১৮ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফিতে দুই ম্যাচে সাতে ব্যাট করেছিলেন তিনি। সেবার চোট কাটিয়ে তিনি ফিরেছিলেন দলে। গত তিন বছরে এই সংস্করণে তিনি মূলত তিন নম্বরে ব্যাট করছিলেন। এই সময়ে কখনও কখনও খেলেছেন চারে। শ্রীধরন শ্রীরাম বাংলাদেশ দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট হয়ে আসার পর নানা ধরনের পরীক্ষা চলছে ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই ম্যাচে নতুন উদ্বোধনী জুটি নিয়ে নামে বাংলাদেশ। এরপর তিন, চার ও পাঁচে গত কয়েক ম্যাচের ধারাবাহিকতায় লিটন দাস, আফিফ হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেনকেই খেলানো হয়। আগের ম্যাচে সাতে খেলা ইয়াসির আলিকে এদিন নামানো হয় ছয়ে, সেদিন ছয়ে খেলা নুরুল হাসান সোহান এবার খেলেন আটে। এই দুজনের মাঝে নামানো হয় সাকিবকে।
দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের এত পরে ব্যাটিংয়ে নামা নিয়ে ধারাভাষ্যকাররা বিস্ময় প্রকাশ করেন খেলা চলার সময়। ম্যাচের পর ধারাভাষ্যকার ও সাবেক নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যান ক্রেইগ ম্যাকমিলানের প্রশ্নে সাকিব ব্যাখ্যা করলেন কারণ, ‘আমার ওপরে ব্যাট করারই কথা ছিল। তবে ওদের দুজন স্পিনার বোলিং করছিল, আমাদের মনে হয়েছে, উইকেটে ডানহাতি-বাঁহাতির সমন্বয় রাখলে ভালো হবে। তবে আজকে তা কাজে লাগেনি।’
অফ স্পিনার মাইকেল ব্রেসওয়েল ও লেগ স্পিনার ইশ সোধি বল করছিলেন তখন। টানা তিন ম্যাচ একই উইকেটে হওয়ায় হ্যাগলি ওভালের ২২ গজ এ দিন ছিল একটু মন্থর। ৪ ওভারে ১৪ রান দিয়ে ম্যাচ সেরা হন ব্রেসওয়েল। সোধিও নেন দুই উইকেট। চতুর্দশ ওভারে ৭৮ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ক্রিজে গিয়ে দলকে উদ্ধার করতে পারেননি সাকিব। ১৬ বল খেলে অধিনায়ক করতে পারেন ১৬। আরও একটি ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১৩৭ রানে আটকে গিয়ে বাংলাদেশ ম্যাচ হারে ৮ উইকেটে। সাকিব দায় দিলেন টপ অর্ডারকে, ‘শীর্ষ তিন বা চার ব্যাটসম্যানের কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে এবং ১৫-১৬ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করে যেতে হবে। এটাই আমরা চাই। এই মুহূর্তে তা হচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করে যাব। দুটি ম্যাচেই বোলাররা বেশ ভালো করেছে এবং ফিল্ডাররাও তাদের সঙ্গ দিয়েছে। এসব আমাদের ঠিকঠাক হচ্ছে। ব্যাটিংয়ে আমাদের উন্নতি করতে হবে। আমরা কাজ করে যাব।’
এই টপ অর্ডারের একজন নাজমুল হোসেন শান্ত। এদিন ম্যাচে বাংলাদেশের তিন পরিবর্তনের একটি ছিল শান্তর ফেরা। ওপেনিংয়ে ব্যর্থ সাব্বির রহমানকে বাইরে রেখে এই ম্যাচে মেহেদী হাসান মিরাজের উদ্বোধনী জুটির সঙ্গী করা হয় শান্তকে। শুরুটা তিনি খারাপ করেননি। তবে পরে আর গতিটা ধরে রাখতে পারেননি। ইনিংসকে দিতে পারেননি উল্লেখযোগ্য রূপ। যদিও তিনিই করেছেন দলীয় সর্বোচ্চ, তারপরও ২৯ বলে ৩৩ রানের ইনিংস টি-টোয়েন্টিতে খুব আদর্শ কিছু নয়। আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিনিধি হয়ে এসে ম্যাচের ময়নাতদন্তে নিজের দায়টুকু নিলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। ব্যাটিংয়ে এই ম্যাচে দলের সার্বিক ঘাটতির কথাও তিনি বললেন অকপটে, ‘ভালো একটা শুরু হয়েছিল। আমরা যদি জুটি গড়তে পারতাম, ব্যাটিংটা তাহলে আরও ভালোভাবে উপভোগ করতে পারতাম ও দলের জন্যও ভালো হতো। মাঝের ওভারে আমরা ব্যাক টু ব্যাক উইকেট দিয়েছি। সত্যি কথা বলতে, প্রথম ইনিংসে উইকেট এতটা সহজও ছিল না। ওই জায়গায় আমরা আরেকটু স্মার্ট ক্রিকেট খেললে আরেকটু বড় স্কোর হতে পারত। মাঝের ওভারগুলোয় আমরা আরও ভালো ব্যাট করতে পারতাম। যেহেতু আমি সেট ছিলাম, ওখান থেকে লম্বা সময় টেনে নিতে পারলে দলের জন্য ভালো হতো। ওটাই চাওয়া থাকবে, সামনের ম্যাচে আবার সুযোগ এলে, যত লম্বা করা যায়।’
দুই ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর প্রাথমিক পর্বে আর দুটি ম্যাচ বাকি থাকলেও বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে গেল সিরিজের ফাইনাল। আগামীকাল এই নিউজিল্যান্ড ও পরের দিন পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় (স্থানীয় সময় দুপুর ৩টা) খেলবে বাংলাদেশ। কঠিন এই পথ পাড়ি দিতে সাকিব নিজেও যেন সাহস পাচ্ছেন না। এই টুর্নামেন্টে আর দুটি ম্যাচ পাচ্ছেন ধরে নিয়েই বিশ্বকাপের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে চান অধিনায়ক, ‘দুটি ম্যাচ হারার পর প্রাণশক্তি ধরে রাখা কঠিন। তবে বিশ্বকাপ আছে সামনে, পরের দুটি ম্যাচ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মোমেন্টাম ধরে রাখার জন্য এই দুটি ম্যাচ খুব জরুরি। ভালো কিছু করে মোমেন্টাম নিয়ে বিশ্বকাপে যেতে পারলে ভালো হবে।’
একই উইকেটে হয়েছে তিন দিনে ৩ ম্যাচ। উইকেট শুরুতে থাকে স্লো, প্রতিপক্ষের ঘূণির কবলে পড়ে বাংলাদেশ। শান্তর আসা, এই দুই ম্যাচে উইকেটের কারণে কোনো দলকে ভুগতে হবে না, ‘আমরা যখন আজকে শুরুতে ব্যাট করেছি, ব্যাটিংয়ের জন্য খুব ভালো ছিল না উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ের জন্য অনেকটা সহজ হয়ে যায়। স্পিনারদের জন্য কাজ কঠিন হয়ে যায় তখন (শিশিরের কারণে)। দিনের ম্যাচ হয়তো আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে এবং দুই ইনিংসের মধ্যে পার্থক্য বেশি হবে না।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন