বৈশ্বিক ঝুঁকিতে শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। দেশে বহুবর্ষজীবী নদী থাকা সত্ত্বেও পানযোগ্য পানির তীব্র সঙ্কট রয়েছে। বিশেষত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকায় আরো এবং জনস্বাস্থ্য ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে প্রভাবিত করে। ডব্লিউএইচও/ইউনিসেফ জেএমপি (২০২১) এর তথ্যমতে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৪১ শতাংশ মানুষ নিরাপদে-পরিচালিত বিশুদ্ধ পানির পরিষেবাগুলো পাচ্ছে না। এমতাবস্থায় তীব্র পানি সঙ্কট নিরসনে ভূমিকা রাখবে কমিউনিটি ম্যানেজমেন্ট প্লাস (সিএম প্লাস) মডেল।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলি চৌধুরী সিনেট ভবনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ আয়োজিত এক সেমিনারে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ বদরুল হাসান।
তিনি বলেন, কমিউনিটি ম্যানেজমেন্ট প্লাস (সিএম প্লাস) মডেল হলো- একটি শাসন ব্যবস্থা যেখানে পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ব্যবহারকারীদের এবং সরকারী বস্তবায়নকারী সংস্থা বা স্থানীয় এনজিওগুলির মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। কিন্তু এটি এখনো অনেকাংশে অজানা যে, কোন পরিস্থিতিতে কমিউনিটি বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা টেকসই পরিচালনায় সিএম প্লাস মডেলটি সফল হতে পারে। তাই, আমার গবেষণার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে কমিউনিটি ডিডব্লিউএস পরিচালনার ক্ষেত্রে সিএম প্লাস মডেলটি সফল হওয়ার পূর্বশর্তগুলি অন্বেষণ করা।
ঢাবির এই প্রফেসর দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট এবং সাতক্ষীরাতে গবেষণাটি পরিচালনা করেন। কারণ এই অঞ্চলগুলিতে বিশুদ্ধ খাবার পানির ঘাটতি, কমিউনিটি পানযোগ্য পানির ব্যবস্থার উপস্থিতি, এবং ডিডব্লিউএস- পরিচালনায় এর সাফল্যে তারতম্য রয়েছে। তার এই গবেষণা মডেলটি কয়েকটি পরিস্থিতিতে সফল হতে পারে বলেও মত দেন তিনি। এগুলো হলো- নতুন পানি অবকাঠামোটি (ডিডব্লিউএস) স্থানীয় জনগণের পছন্দ ঐ ডিডব্লিউএস’র বৈশিষ্ট্যসমুহ দ্বারা প্রভাবিত হয়। যেমন- দুর্যোগ সহনশীলতা, স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত, পানীয় জলের নির্ভরযোগ্য সরবরাহ, পানির স্বাদ। পাশাপাশি পরিবারের বৈশিষ্ট্য যেমন- পরিবারের ভৌগোলিক অবস্থান, পরিবারের আকার, পরিবারের আয় ইত্যাদি দ্বারাও স্থানীয় জনগণের পছন্দ প্রভাবিত হয়; স্থানীয় জনগণ ডিডব্লিউএস গ্রহণ করতে ইচ্ছুক। গবেষণায় পাওয়া যায় যে, স্থানীয় জনগণের এই ইচ্ছা বিভিন্ন সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক ফ্যাক্টর দ্বারা প্রভাবিত হয় যেমন- অনুমিত স্বাস্থ্যঝুঁকি, পানির দাম/খরচ, পানির স্বাদ, স্ব-কার্যকারিতা, এবং বিকল্প পানির প্রাপ্যতা ও সংখ্যা ইত্যাদি। স্থানীয় জনগণ তাদের পানি অবকাঠামোটি পরিচালনায় একে অপরের সাথে এবং সরকারী সংস্থার সাথে যৌথকাজে অর্থপূর্ণভাবে সম্পৃক্ত হতে সক্ষম। পানি অবকাঠামো ব্যবহারকারীদের সাথে বহিরাগত সহায়তা সংস্থা যেমন ইউনিয়ন পরিষদ বা স্থানীয় এনজিও এর সহযোগিতামুলক সম্পর্ক গড়ে ওঠা সক্ষম।
ঢাবির এই গবেষক আশা প্রকাশ করে বলেন, গবেষণার ফলাফল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে পানি ব্যবস্থার টেকসই কার্যকারিতার ফ্যাক্টরসমুহ বুঝতে সাহায্য করবে এবং এর ফলে বাংলাদেশে এসডিজি-৬ লক্ষ্য অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ অর্জনে অবদান রাখবে।
ঢাবি ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথির ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আইনুল ইসলামের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন ঢাকাস্থ নেদারল্যান্ড দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ফকার দে জ্যাগার, প্রো-ভিসি (শিক্ষা) প্রফেসর ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. তাসনিম আরেফা সিদ্দিকী প্রমূখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন