শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঢাকা-সিলেট চার লেনের কাজ শুরু ডিসেম্বরে

জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কাটছে না জটিলতা প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যবহৃত হবে পলিমার মডিফাইড বিটুমিন

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

নানা জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেন প্রকল্প। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের ডিসেম্বরে কাজ শুরু হচ্ছে চারলেন প্রকল্পের। ইতোমধ্যে প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ নকশা চূড়ান্তের কাজ শেষ হয়েছে। ২১০ কিলোমিটার মহাসড়ককে চারলেনে উন্নত করার জন্য প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। অর্থায়ন থাকবে সরকারেরও।

সওজ সূত্রে জানা যায়, প্রায় সাত বছর আগে রাজধানী ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ উন্নত করার লক্ষ্যে এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করতে মূল কাজে অর্থাৎ সড়ক, সেতু, কালভার্ট, ওভারপাস, আন্ডারপাস, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণকাজে ব্যয় হবে ১৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি সাত জেলার ওপর দিয়ে নির্মাণ হবে। এ কারণে প্রতিটি জেলাকে একটি জোন ধরে সাতটি প্রস্তাব তৈরি করে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। জমি অধিগ্রহণের অর্থায়নের পুরোটাই ব্যয় হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।

সড়ক বিভাগ জানায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল গত বছরের জানুয়ারিতে। কিন্তু নানা জটিলতায় ডিপিপি চূড়ান্ত করতে লম্বা সময় লেগে যায়। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর ডিপিপি তৈরি করে তা একনেকের অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর সেখান থেকে দফায় দফায় প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয়ে আরও যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ফেরত পাঠায়। অবশেষে সবকিছু ঠিক করে ডিপিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে চারলেন প্রকল্প পরিচালক একে মোহাম্মদ ফজলুল করিম বলেন, আমরা আশা করছি চলতি মাসের মধ্যে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হবে। চুক্তিগুলি হয়ে গেলে, ঠিকাদাররা তাদের সংস্থাগুলি একত্রিত করবে এবং ডিসেম্বরে কাজ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি নিয়ে কিছু জটিলতা ছিল। তবে সুখবর হল কাজ শেষ পর্যন্ত শুরু হতে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সিলেট বিভাগকে রাজধানী ও চট্টগ্রামের সাথে সংযুক্ত করে, কিন্তু নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত বিদ্যমান দুই লেনের মহাসড়কটি ক্রমবর্ধমান যানবাহনের সংখ্যা মোকাবেলা করার জন্য যথেষ্ট নয়, প্রায়শই যানজট এবং সড়ক দুর্ঘটনা ঘটায়। এছাড়াও, এটি এশিয়ান হাইওয়ে-১ এর অংশ, যা মেঘালয়কে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাথে তামাবিল-সিলেট-ঢাকা-নড়াইল-যশোর হয়ে সংযুক্ত করে। সিলেট-তামাবিল মহাসড়ককে চার লেনের মহাসড়কে পরিণত করতে আলাদা প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সম্প্রসারণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে এবং সড়ক কর্তৃপক্ষ ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষাও করেছে। কিন্তু তহবিল নিয়ে জটিলতা পরিকল্পনাটি থামিয়ে দেয়। প্রকল্পটি এটুএ অধীনে চীনা অর্থায়নে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কর্তৃপক্ষ চীনা কোম্পানির সাথে চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় কাজ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে রশি টানাটানি শুরু হলে প্রকল্পটি ঝুলে যায়। একপর্যায়ে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পের কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য ডিপিপি তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলেও সেখান থেকে আরও কিছু সংশোধনী চেয়ে ফেরত পাঠানো হয়। সড়ক বিভাগ তা সুবিন্যস্ত করে ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। কিন্তু প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে যাওয়ার পর তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী প্রকল্পটি অনেক ব্যয়বহুল উল্লেখ করে এর জন্য বাইরের কোনো অর্থায়ন পাওয়া যায় কি না দেখতে নির্দেশ দেন। এর পরপরই প্রকল্পটি পুরোপুরি ঝুলে যায়। অথচ কথা ছিল সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগেই প্রকল্পটির কাজ শুরু হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। এরপর এ প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে আবারও আগ্রহ দেখায় এডিবি। পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এবং শেষ পর্যন্ত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে তহবিল নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তহবিল নিয়ে জটিলতার মধ্যে, সরকার ২০১৮ সালের অক্টোবরে কাজের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে জমি অধিগ্রহণ এবং বিদ্যুতের লাইনগুলি সরানোর জন্য ৩,৮৮৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়। ভূমি অধিগ্রহণ এবং বিদ্যুতের লাইন স্থানান্তর জন্য সময় নেয়। ৩,৮৮৫ কোটি টাকার প্রকল্পটি গত বছরের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবায়নকারী সংস্থা কাজ করতে না পারায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পটি সংশোধন করে, ব্যয় বাড়িয়ে ৭,৯৮২ কোটি টাকায় নির্ধারণ করে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হয়েছিল।

তবে সূত্র জানিয়েছে, এখনও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও জমি হস্তান্তর করা হয়নি। তবে আরএইচডি বলেছেন, যে বেশিরভাগ জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব স্থানীয় জেলা প্রশাসনের কাছে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থগিত রয়েছে। আমরা আশা করি যে, আমরা কাজ শুরু করার আগে প্যাকেজ-১ এর জন্য প্রয়োজনীয় নূন্যতম ৫০ শতাংশ জমি পেয়ে যাব। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে আরও কয়েকটি প্যাকেজের ভৌত কাজ শুরু করা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ফজলুল করিম বলেন, প্যাকেজ-১ এর জন্য প্রয়োজনীয় ৮০ শতাংশ জমি কাজ শুরুর আগেই পাওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, কাজ শুরু হওয়ার পর প্রয়োজনীয় সব জমি ঠিকাদারদের কাছে হস্তান্তরের জন্য তারা ২৭০ দিন সময় পাবেন। তবে ফজলুল করিম স্বীকার করে বলেন, হবিগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে, আমরা সেগুলি সমাধানের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।
সওজ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ২১০ কিলোমিটার চার লেন প্রকল্পে থাকবে মহাসড়কের দুই পাশে দুটি সার্ভিস লেন। নির্মাণ হবে ছয়টি রেল ওভারপাস। এ ছাড়া বেশ কিছু আন্ডারপাস থাকবে। মহাসড়কের দুই পাশে দেওয়া হবে বেষ্টনী। যাতে সাধারণ মানুষ, গবাদি পশু সড়কে উঠতে না পারে। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া সার্ভিস লেনের কোনো যানবাহন যেন মূল সড়কে উঠতে না পারে। ইউটার্ন থাকবে নির্দিষ্ট দূরত্বে। বিশেষ করে বাজার ও আরবান এলাকায় যেখানে জনবসতি আছে সেসব স্থান চিহ্নিত করে নির্মাণ করা হবে ইউটার্ন। এ প্রথমবারের মতো দেশের কোনো মহাসড়ক নির্মাণে ব্যবহার করা হবে পলিমার মডিফাইড বিটুমিন। যার ফলে সড়ক হবে টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
আবির ১২ অক্টোবর, ২০২২, ৮:১৩ এএম says : 0
আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমানো উচিত। এ উন্নয়ন কি মানুষ খেতে পারবে
Total Reply(0)
আবির ১২ অক্টোবর, ২০২২, ৮:১২ এএম says : 0
ভালো উদ্যোগ। তবে, বর্তমানে সবকিছূর দাম বেশি। এগুলো আগে কমানো উচিত। নয়তো এ উন্নয়ন কোনো কাজে আসবে না। কারণ এখন মানুষের বেঁচে থাকাটা কষ্ট হয়ে পড়েছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন