সন্ধ্যা ৭টা বাজলেই গ্রামটিতে সাইরেন বেজে ওঠে। তবে সেটা কোনো বিপৎসংকেত নয়। ওই সাইরেনের অর্থ হলো গ্রামবাসীকে এখন টিভি আর মোবাইল ফোন বন্ধ করতে হবে। গ্রামপরিষদ কর্তৃপক্ষ রাত সাড়ে ৮টায় ফের সাইরেন বাজালে তবেই চালু করা যাবে এই দুই আধুনিক ডিভাইস। প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতি আসক্তি কমিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে কথাবার্তা বাড়াতে এমন অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ভারতের মহারাষ্ট্রের সাঙলি জেলার ভাদগাঁও গ্রামে। তবে এই নিয়ম চালু করতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। প্রথম যখন গ্রামপরিষদে প্রস্তাব ওঠে তখন অনেক পুরুষ উপহাস শুরু করেন। পরে পরিষদে নারীদের জড়ো করা হয়। নারীরা কয়েক ঘণ্টা টিভি এবং ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে সম্মত হন। এরপর আরো এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, গ্রামের মন্দিরের ওপর একটি সাইরেন বসানো হবে। নিয়ম বাস্তবায়ন করাও সহজ হয়নি। শুরুর দিকে সাইরেন বাজলে গ্রামপরিষদের সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে অনুরোধ করতেন নিয়ম মানার জন্য। এভাবে আস্তে আস্তে সব গ্রামবাসী নিয়ম মানা শুরু করেন। ভাদগাঁও গ্রামে প্রায় তিন হাজার লোকের বাস। তাঁদের বেশির ভাগই হয় কৃষক, নয় তো চিনিকলের শ্রমিক। গ্রামপরিষদের সভাপতি বিজয় মোহিতে জানান, কভিড-১৯-এর সময় ছেলে-মেয়েরা অনলাইন ক্লাসের কারণে টিভি ও মোবাইল ফোনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এ বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হলে তারা স্কুল ও কলেজে সশরীরে ক্লাস করছে। কিন্তু ক্লাস থেকে ফিরেই তারা মোবাইল ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বা টিভি দেখে। তিনি আরো জানান, অনেক প্রাপ্তবয়স্করাও মোবাইল ফোনে খুব বেশি সময় কাটাতে শুরু করেন। তারা একজন আরেকজনের সঙ্গে তেমন কথাও বলেন না। বিজয় মোহিতে জানান, গত ১৪ আগস্ট গ্রাম বৈঠকে এই প্রযুক্তি আসক্তি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পরের দিন থেকে সাইরেন বাজতেই সব টিভি এবং মোবাইল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সে গ্রামের বাসিন্দা ভানদানা মোহিতে জানান, ছেলে-মেয়েরা মোবাইল বা টিভিতে আসক্ত হয়ে পড়ায় তাদের দেখভাল করা কষ্টকর হয়ে উঠছিল তার জন্য। তিনি বলেন, ‘গ্রামে নতুন নিয়ম চালুর পর তার স্বামী কাজ শেষে বাসায় ফিরে সন্তানদের পড়ায় সাহায্য করেন আর আমিও রান্নাঘরে নিজের কাজ শান্তিতে করতে পারি।’ বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন