উপকূলীয় জেলা বরগুনার পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এসব নদীগুলোর তীরবর্তী শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের দিন-রাত কাটছে ভাঙন আতঙ্কে। নদী ভাঙনে অনেকের বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আর ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো সদস্যরা করছে মানবেতর জীবনযাপন। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে সৃষ্ট পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে বরগুনা সদরের বড় বালিয়াতলী, তেতুলবাড়িয়া, বুড়িরচর, গোলবুনিয়া, রায়ের তবক, নলটোনা, আজগরকাঠি, পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা, জিনতলা, রুহিতা, কাকচিড়া, বামনা উপজেলার বামনা, রামনা, বেতাগীর শড়িষামুড়ি, কালিকাবাড়ি, হোসনাবাদ, মোকামিয়া, বেতাগীর পৌরসভার একাংশ, আমতলীর বালিয়াতলী, গুলিশাখালি, পচাকোরালিয়া, আরপাঙ্গাসিয়া, তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া, চরপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার মানচিত্র দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। এছাড়া জেলার সাড়ে ৮শ’ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, মহসেনসহ একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৫শ’ কিলোমিটার।
ক্ষতিগ্রস্ত ৮শ’ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে মাত্র ৩শ’ কিলোমিটার বাঁধের সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বাকি ৫শ’ কিলোমিটার বাঁধের সংস্কার জরুরি হয়ে পড়ছে। এসব ভাঙা বাঁধ দিয়ে অমাবশ্যা পূর্ণিমার সময় জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত করে ঘর-বাড়ি। ভাসিয়ে নেয় মাছের ঘের। নষ্ট করে ফসলি জমি। ব্যাহত হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা ও স্বাভাবিক জীবন যাত্রা।
পায়রা, বিষখালি ও বলেশ্বর নদীর এই তীব্র ভাঙন অব্যাহত থাকলে যে কোনো সময় জোয়ারের পানিতে হারিয়ে যাবে ফসলি জমি, ভিটে-বাড়িসহ নানা স্থাপনা।
ভাঙন আতঙ্কে থাকা তালতলী উপজেলার চরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হযরত আলী মাতুব্বর জানান, কয়েক বার ভাঙনে তার ভিটেবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নতুন করে বসতবাড়ি নির্মাণ করে কাছাকাছি বসবাস করা শুরু করেছেন তিনি। আবার ভাঙনের কবলে পড়লে সর্বস্বান্ত হয়ে যাবেন তিনি। পরিবার নিয়ে ভাঙনের আতঙ্কে বাস করছেন তারা। তিনি আবারও ভাঙনের কবলে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন।
বড়বগী ইউপি সদস্য মো. নজরুল ইসলাম খান লিটু বলেন, এই ভাঙন অব্যাহত থাকলে নদী তীরবর্তী বসবাসরত পরিবারগুলো বসতভিটা হারাতে বাধ্য হবে। নদী ভাঙন ঠেকাতে তিনি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানান।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নূরুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙনরোধে সরকার ইতোমধ্যেই বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। অচিরেই এসব ভাঙন কবলিত এলাকা সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন