২০১৫ এখানে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্য্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। সেবার বড় দুর্ভাবনার জায়গা ছিল অস্ট্রেলিয়ায় মাঠের বড় আকৃতি। বড় মাঠ মানেই বেশি ফাঁকা জায়গা আর এক-দুই-তিন রানের সুযোগ অনেক বেশি। রানিং বিটুউইন দ্য উইকেট তাই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত দৌড়ানো এবং ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। ফিটনেসের ব্যাপারটিও চলে আসে এখানে। বাংলাদেশের যে জায়গায় ঘাটতি ছিল ৭ বছর আগে, আছে এখনও।
তবে প্রচলিত এই সব ধারণার চেয়ে পুরো উল্টো মত শ্রীধরণ শ্রীরামের। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা তার। এখানকার ভেন্যুগুলোর সব দিক তার জানা। বাংলাদেশ দলকেও তিনি এখন ভালোভাবে জানেন বলেই ধরে নেওয়া যায়। গতকাল ব্রিজবেনে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্টের দাবি, তার দলের সুবিধাই হবে এসব বড় মাঠে, ‘(বড় সীমানা) আমাদের সহায়তাই করবে। কারণ আমাদের ব্যাটসম্যানরা পছন্দ করে বলের গতি কাজে লাগাতে। আমরা পাওয়ার হিটার নই, বলের গতির ওপর নির্ভর করি। বড় সীমানা তাই ব্যাটসম্যানদের সহায়তা করবে, যদি তারা সঠিক পকেটে বল ঠেলতে পারে এবং রানিং বিটুউন দা উইকেট ভালো হয়। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি, ফিল্ডিং পজিশন অনুযায়ী জায়গামতো বল ঠেলে দ্রুত দৌড়ানো এবং সুযোগমতো বাউন্ডারি আদায় করা। সঠিক গতিটা ধরতে পারলে আমরা ভালো করব।’
মূল পর্বে একটি জয়ের দেখা নেই ১৫ বছর ধরে। ৫টি জয় তো সেখানে একরকম আকাশ-কুসুম কল্পনা। তবে স্বপ্নের আকাশে ডানা মেলে দিলে তো সীমানার খেয়াল থাকে না অনেক সময়ই। শ্রীরাম এখানে বেশ সতর্ক। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নের কথা যেমন বলছেন তিনি, তেমনি পা রাখছেন বাস্তবতার জমিনেও। বাংলাদেশের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট এগোতে চান একটু একটু করে, জিততে চান ম্যাচের ভেতরের অসংখ্য ম্যাচগুলি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে ৫টি ম্যাচ পাচ্ছে বাংলাদেশ। সেই প্রথম আসরের পর এই ধাপে তাদের জয় নেই একটিও। টি-টোয়েন্টির বিশ্ব আসরে এখনও পর্যন্ত ৩৩ ম্যাচ খেলে জয় ধরা দিয়েছে স্রেফ ৭টি। এর মধ্যে মূল পর্বে একমাত্র জয় সেই ২০০৭ আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। বিশ্বকাপে যেটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ।
এবার তাই একটি ম্যাচ জিততে পারলেই বাংলাদেশ স্পর্শ করবে বিশ্বকাপে নিজেদের সেরা সাফল্যকে। দুটি জয় পেলে লেখা হবে সাফল্যের নতুন অধ্যায়। গত সোমবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেনও বলেছিলেন ঠিক এই কথাই। যেটিতে ফুটে ওঠে, বাংলাদেশ দলের ভাবনায়ও এমন কিছু আছে। শ্রীরামও দাবি করলেন, দারুণ চনমনে আছে তার দল, ‘খুবই উৎফুল্ল আছে ছেলেরা। আমি যতটা দেখছি, ওরা খুবই ইতিবাচক আছে। দারুণ কিছু শিখতে পেরেছে সবাই। ফলাফল আমাদের পক্ষে আসেনি, কাজেই শিখতে পারার পক্ষে কোনো প্রমাণ এখনও নেই। তবে দলের আবহ দারুণ ও ড্রেসিং রুমের পরিবেশ ফুরফুরে। ছেলেরা প্রতিদিনই শিখছে। নিজেদের মধ্যে যে আলোচনা ওরা করছে, তা অসাধারণ। এই আলোচনাগুলো তুলে ধরার ক্ষেত্রে সাকিবও দারুণ কাজ করছে। ছেলেরা টিম মিটিংয়ে অনেক কথা বলছে, এটা খুবই চমৎকার ব্যাপার। এমন নয় যে আমি বা কোচরাই স্রেফ কথা বলছে। ছেলেরা অনেক কথা বলছে। এটা খুবই ইতিবাচক।’
দলের সেই ইতিবাচক আবহ থেকেই স্বপ্নের দোলা লেগেছে শ্রীরামের মনে। পারফরম্যান্স পক্ষে না থাকলেও প্রক্রিয়ার ভেলায় তিনি এগিয়ে যেতে চান সামনে। প্রতিটি ম্যাচ জয়ের লক্ষ্য নিয়েই তিনি বিশ্বকাপের লড়াইয়ে নামতে চান। তবে চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে যান একটু একটু করে, ‘(লক্ষ্য) সম্ভব হলে ৫টি ম্যাচই জেতা! সব দলই তো জয়ের জন্য মাঠে নামে। তবে আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে। একটি করে ম্যাচ ধরে এগোতে হবে আমাদের। এখনও দুটি প্রতিপক্ষ আমরা জানি না, অপেক্ষা করছি জানার জন্য। তাই একটি একটি ম্যাচ করে এগোনো খুব গুরুত্বপূর্ণ। খুব বেশি দূর না ভেবে স্রেফ ওই ম্যাচ নিয়েই ভাবতে হবে।’ ম্যাচ জয়ের ক্ষেত্রেও শ্রীরামের চোখে গুরুত্বপূর্ণ ছোট ছোট কাজগুলি ঠিকঠাক করা। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে দাপট দেখিয়ে তিনি ছুঁতে চান জয়ের ঠিকানা, ‘ম্যাচের মধ্যে ম্যাচ নিয়েও ভাবতে হবে... খেলাটাকে ভেঙে, যতটা সম্ভব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করে ওই অংশগুলো জয় করা নিয়ে ভাবতে হবে। ওই ছোট ছোট মুহূর্তগুলো ভাবা হবে গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় না, পুরো ৫ ম্যাচ মাথায় রেখে আমাদের এগোনো উচিত। একটি করে ম্যাচ ধরে নেওয়া এবং সেই ম্যাচের নানা মুহূর্ত নিয়েই আমাদের মনোযোগ রাখতে হবে।’
এদিকে, গতকাল আমিরাতের জয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে পরের পর্বের টিকেট পেলো নেদারল্যান্ডস। তাদের বিপক্ষেই আসছে ২৪ অক্টোবর হোবার্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে সাকিব আল হাসানের দল। যেখানে বাংলাদেশে ছাড়াও রয়েছে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন