রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাকার্থি বলেছেন যে, তার দল কংগ্রেসের নিম্ন কক্ষের নির্বাচনে জয়ী হলে ইউক্রেনকে আর কোনো ব্ল্যাঙ্ক চেক দেয়া হবে না। তিনি ইউক্রেনের জন্য বিনা শর্তে অতিরিক্ত সহায়তা বিল পাস করতে অসম্মতি প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি মনে করি, মানুষ মন্দার মধ্যে বাস করবে এবং তারা ইউক্রেনের কাছে একটি ফাঁকা চেক লিখবে না।’ এতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, নভেম্বরের মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকান দল প্রতিনিধি পরিষদে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটদের বিরুদ্ধে জয়ী হলে ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অবারিত এবং সর্বাত্মক সহায়তা ভবিষ্যতে সীমিত হয়ে পড়বে।
রিপাবলিকান তরফের এ মন্তব্যে বেশ বড় ধাক্কা খেয়েছে ইউক্রেনপন্থ’ীরা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দলের প্রধান ডেভিড আরাখামিয়া বুধবার ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘সত্যিই, মি. ম্যাক্কার্থির এ মন্তব্য শুনে আমরা হতবাক হয়ে গেছি’। তিনি বলেন, ‘মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে, আমাদের প্রতিনিধিদল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন এবং মি. ম্যাক্কার্থির সাথে বৈঠক করেছিলেন। আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, নির্বাচনে জয়ী হলেও রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে ইউক্রেনের তাদের দ্বিদলীয় সমর্থন শীর্ষ অগ্রাধিকার থাকবে।
মার্কিন কংগ্রেস রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকে ইউক্রেনের জন্য শত শত কোটি ডলারের সহায়তা বিল পাস করেছে, কিন্তু সম্প্রতি মার্কিনু সরকারের আর্থিক মন্দা এড়াতে এই ইস্যুতে কংগ্রেসে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। মে মাসে, ১১ জন রিপাবলিকান সিনেটর এবং ৫৭ জন হাউস রিপাবলিকান ইউক্রেনের জন্য ৪০ বিলিয়ন ডলার নিরাপত্তা সহায়তার অনুরোধের বিরোধিতা করেছিলেন। আইনপ্রণেতা এবং বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন যে, পরবর্তী কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের ভিন্নমত বাড়বে, বিশেষ করে ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময়। ইতোমধ্যে মিসৌরির রিপাবলিকান সিনেটর জোশ হাওলি বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সমস্ত ইউরোপীয় মিত্রদের চেয়ে ইউক্রেনে সহায়তার জন্য বেশি ব্যয় করেছে এবং কোনও অর্থপ‚র্ণ তদারকি ছাড়াই। এটা বোকামি এবং টেকসই নয়।’
যদিও বাইডেন প্রশাসন বলেছে যে, তারা আশা করছে শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনকে সহয়তা সংক্রান্ত রিপাবলিকান-ডেমোক্রেট দ্ব›দ্বটি আলোচনার টেবিলে শেষ হবে, তবে কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক আলোচনার কোন সম্ভাবনা দেখছেন না। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড বাজেটারি অ্যাসেসমেন্টের কাউন্সেলর এরিক এডেলম্যান বলেছেন, ‘কিছু রিপাবলিকান থাকবে যারা এটাকে সমর্থন করবে। তবে এটি অনেক কঠিন হতে চলেছে কারণ রিপাবলিকান দলের মূল সমর্থনটি আরও বিচ্ছিন্নতাবাদী ইউক্রেন বিরোধী সমর্থনের দিকে সরে যাচ্ছে।
এদিকে, ইউক্রেন ইস্যুতে যখন যুক্তরাষ্ট্রে মতবিরোধ বাড়ছে, তখন ইউরোপে রাশিয়াকে সমর্থনের পাল্লা ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে। মঙ্গলবার ফাঁস হওয়া একটি রেকর্ডিং অনুসারে, ইতালীর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকোনি বলেছেন যে, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে তার পুরানো বন্ধুত্ব পুনরুজ্জীবিত করেছেন, উপহার এবং মিষ্টি চিঠি বিনিময় করেছেন। গত মাসে ইতালীয় সংবাদ সংস্থা লাপ্রেসে প্রকাশিত অডিও রেকর্ডিংয়ে ৮৬ বছর বয়সী বার্লুসকোনিকে বলতে শোনা যায়, ‘পুতিন আমাকে ২০ বোতল ভদকা এবং আমার জন্মদিনের জন্য একটি খুব মিষ্টি চিঠি পাঠিয়েছেন’। তিনি তার দলের একজন সংসদ সদস্যকে এও বলেন যে, প্রত্যুত্তরে তিনি একই রকম মিষ্টি বার্তা এবং ল্যামব্রæস্কো ওয়াইনের বোতল উপহার পাঠিয়েছেন।
পুতিনের সাথে ব্রোম্যান্সের খবর পুনরুজ্জীবিত হওয়ার বারলুসকোনির সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলি ইতালির ভবিষ্যত পররাষ্ট্র্র নীতির দিকনির্দেশনা এবং ইউক্রেনের যুদ্ধে দেশটির অবস্থানের বিষয়ে উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও ইতালির সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী বাদ্রার্স অফ ইতালির জর্জিয়া মেলোনি ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার তীব্র সমালোচনা করেছেন, তবে তার সরকার একবার ক্ষমতা গ্রহণ করলে, সুর পাল্টে যেতে পারে। কিন্তু তার দুই মিত্র যাদের উপর তার জোট নির্ভর করবে, বার্লুসকোনি এবং লিগের মাত্তেও সালভিনি উভয়েই পুতিনের দীর্ঘদিনের ভক্ত, যারা মস্কোর প্রতি ইইউ-এর কঠোর অবস্থান নিয়ে বরাবরই স্পষ্ট অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
গত মাসের নির্বাচনী প্রচারণার সময় সালভিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার জন্য ইতালীয়রা যে উচ্চ ম‚ল্য পরিশোধ করছে, সে সম্পর্কেও বারবার অভিযোগ করেন। ভোটের মাত্র দুই দিন আগে বার্লুসকোনি বলেন, ‘পুতিন কেবলমাত্র (ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির) জেলেনস্কির স্থানে ভদ্রলোকদের নিয়ে গঠিত একটি সরকার চেয়েছিলেন। কিন্তু তারপর ‘অপ্রত্যাশিত প্রতিরোধের সম্মুখীন হন’।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন