মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দুর্বিসহ যন্ত্রণা আর কতদিন?

যানজটে স্থবির ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক

স্টাফ রিপোর্টার ও টঙ্গী সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

যাত্রীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের নামকরণ করেছেন যন্ত্রণার মহাসড়ক। কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ ধীর গতির কারণেই মূলত এই যন্ত্রণা। প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে যানজটে আটকে থাকতে হয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যানজট নিরসনের চেষ্টা দেখা গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই কোনো ভ্রুক্ষেপ। ১০ মিটিটের পথ অতিক্রম করতে সময় লাগে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। বাধ্য হয়েই বেশির ভাগ যাত্রী যানবাহণের ভাড়া দিলেও মাঝপথে নেমে পায়ে হেটে গন্তব্যে পেঁৗঁছার চেষ্টা করেন। যারা দূর দূরান্তে যাবেন তাদের বাসে-সিএনজিতে ঠাঁয় বসে থাকতে হয়। মাসের পর মাস ধরে চলছে এই অবস্থা। ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন এই দুর্বিসহ যন্ত্রণা আর কতদিন থাকবে?
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে খানাখন্দ থাকায় ও মেরামত না হওয়ায় যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে এই সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। কর্মজীবী মানুষরা নির্দিষ্ট সময়ে তাদের গন্তব্যে যেতে পারেন নি। যানজটে আটকা পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই স্থানে বসে থাকতে হয়েছে। দূরপাল্লার যাত্রীবাহী গণপরিবহনকে বসে থাকতে হয়েছে স্থির হয়ে। এতে যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। অবর্নণীয় কষ্ট পোহাতে হয়েছে শিশু ও মহিলা যাত্রীদের। তবে প্রায় আট ঘণ্টা পর যানবাহন চলাচল একটু একটু করে স্বাভাবিক হতে চলেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে।
জানা যায়, গতকাল বুধবার ভোর থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গীর যানজট চলে এসেছে রাজধানীর বনানী পর্যন্ত। উন্নয়নকাজের প্রভাবে সড়ক সঙ্কুচিত ও খানাখন্দের কারণে ঢাকা থেকে গাজীপুরগামী সড়কে যানবাহনের মাত্রাতিরিক্ত ধীরগতি দেখা দিয়েছে। এরফলে যানজট পেরিয়ে গেছে ঢাকার বনানী পর্যন্ত। যার প্রভাব পড়ছে নগগরীর অন্যান্য সড়কগুলোতেও। বনানী থেকে বিমানবন্দরগামী যানবাহনগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
অনেকক্ষণ পর পর কিছুটা এগুলেও আবার দাঁড়িয়ে থাকছে এক স্থানেই। এতে সকাল থেকেই চরম ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। বিআরটি প্রকল্পে কাজের কারণে ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়ক সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। এর ওপর বিভিন্ন অংশ খানাখন্দে ভরা। বৃষ্টিতে সেসব খানাখন্দে পানি জমে যাওয়ায় যান চলাচল স্বাভাবিক থাকছে না। ধীরগতি থেকে যানবাহনের চাপ বাড়তে বাড়তে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে আর সময়ের সঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে গাড়ির সারি। বৃষ্টির কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গীর অংশে গর্ত ও খানাখন্দে পানি জমেছে। এতে কয়েক ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট ছড়িয়ে পড়ে।
বৃষ্টির কারণে গত সোমবার থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকায় যান চলাচলে ধীরগতি ছিল। কোথাও কোথাও থেমে থেমে যানবাহন চলছিল। বৃষ্টির প্রভাবে মহাসড়কের নতুন করে খানাখন্দ তৈরি ও পুরনো খানাখন্দগুলো বড় আকার ধারণ করে অনেক জায়গাতেই গর্তে পরিণত হয়েছে। পুলিশ ও বিআরটি প্রকল্পের কর্মকর্তারা ইট, বালুসহ নানা উপকরণ দিয়ে সেই খানাখন্দ মেরামত করলেও ভারি যানবাহন চলাচল করায় তা উঠে গিয়ে বড় গর্তের তৈরি হয়েছে। এসব খানাখন্দ ও গর্তের কারণেই যানজটের তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় পাঁচ থেকে ছয় লেনে গাড়ি চলত, সেখানে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলায় লেন সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে ঢাকায় প্রবেশে এবং ঢাকা থেকে বের হতে এক লেনে চলাচল করছে গাড়িগুলো।
ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, ভোর ৫টা থেকেই ময়মনসিংহমুখী সড়কের টঙ্গীর মিলগেট থেকে রাজধানীর বনানী এবং ঢাকামুখী সড়কের গাজীপুরের বোর্ডবাজার পর্যন্ত যানজট দেখা দিয়েছে। এতে সকাল থেকেই চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ।
সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, বিআরটি প্রকল্পের ধীরগতির কাজের কারণে সড়কের বিভিন্ন অংশ খানাখন্দে ভরা। সামান্য বৃষ্টি হলেই সেসব খানাখন্দে পানি জমে যায় এবং নালার পানি উপচে ওঠে সড়কে। তৈরি হয় যানজট। টানা বৃষ্টিতে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
টঙ্গী স্টেশন রোডে কথা হয় দুই হাতে ব্যাগসহ মোসলেম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি পরিবারের কয়েকজনকে নিয়ে কুমিল্লার মুরাদনগর গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে হেঁটে আব্দুল্লাহপুর বাস কাউন্টারে যাচ্ছেন। বললেন, জয়দেবপুর থেকে স্টেশন রোড আসতে দুই ঘন্টা লেগেছে। বাস আর সামনে আগাচ্ছে না। তাই হেঁটে রওয়ানা দিয়েছি।
পিপলস সিরামিক কারখানার সম্মুখে কথা হয় মন্নু টেক্সটাইল মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স.ম. জাকারিয়ার সাথে। তিনি বলেন, বিআরটি প্রকল্পের কাজে অত্যধিক ধীরগতির ফলে টঙ্গী-গাজীপুরবাসী সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমার স্কুলটি মহাসড়কের পাশে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও প্রায় প্রতিদিনই যানজটের কারণে আমাকে আসা যাওয়া চার কিলোমিটার পথ হেঁটে স্কুল করতে হয়।
মিলগেট এলাকার ব্যবসায়ী আজগর আলী বলেন, বিআরটি প্রকল্পের কাজের দরুন এই এলাকায় রাস্তা আগের চেয়ে সরু হয়ে গেছে। তার উপর খানাখন্দ মেরামত না করায় যানজট ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এলাকায় নিত্যদিন যানজট লেগে থাকায় ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
টঙ্গী কলেজ গেট এলাকার ব্যবসায়ী মানুন বলেন, মিলগেট থেকে টঙ্গী বাজার পর্যন্ত সড়কের মেরামত করলেই যানজট থাকে না। অথচ এটুকু কাজের জন্য যানজটে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গর্তে পড়ে বিকল হচ্ছে শতশত যানবাহন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার আলমগীর হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে টঙ্গীর মিলগেট এলাকার সড়কে ছোটবড় গর্ত ও খানাখন্দে পানি জমে থাকায় যানবাহন ধীর গতিতে চলাচল করছে। এই কারণে গত দুইদিন গাজীপুর ও ঢাকা অভিমুখে যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। যানজট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগ কাজ করছে। আশা করছি, খুব শীঘ্রই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তরা ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার বদরুল হাসান বলেন, বিমানবন্দর সড়কে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলায় রাস্তায় খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। আর গত দুদিন টানা বৃষ্টি হওয়ায় সেটা এখন দুভোর্গের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকালে এই রোডে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা স্বাবাভিক হয়েছে।
বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক মহিরুল ইসলাম জানান, সড়কের স্থায়ী নির্মাণ কাজ চলছে। নভেম্বরের দিকে কাজ শেষ হলে আর ভোগান্তি থাকবে না। যেখানে বেশি ভাঙা, সেখানে মেরামত করছি। বৃষ্টির কারণে আবার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় স্থায়ী কাজ করা হচ্ছে।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন