শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

রাসূল (সা.)-এর বিদায়ের দিন

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাসূলে আকরাম (সা.) যখন এই নশ্বর দুনিয়া থেকে বিদায় নেন তখন সমগ্র আরব ভূমি তার অধীনে ছিল। তখনকার সময়ের সকল শাসক, সম্রাট, রাজা, উজির, আমীর সবাই তাঁর ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত থাকত। সবার অন্তরে ছিল তাঁরই প্রভাব প্রতিপত্তি। সাহাবায়ে আজমাইন (রা.) তাঁর জন্য নিজেদের জীবন, সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদ সবকিছু কোরবান করতে ছিল সদা প্রস্তুত। এত সব সত্ত্বেও তিনি যখন ইহজগত থেকে বিদায় নেন তখন তার কাছে এক দিনার বা এক দিরহাম, দাস-দাসী কিছুই রেখে যাননি। শুধুমাত্র একটি খচ্চর ছিল সাদা রঙের। আর ছিল কিছু অস্ত্রশস্ত্র, যা তিনি জিহাদের ময়দানে আত্মরক্ষা করতেন। এক টুকরো জমিন ছিল, যেটি তিনি সদকা করে দিয়েছিলেন। (সহীহ বুখারী)।

হযরতের ইন্তিকালের সময় তাঁর লৌহবর্মটি এক ইহুদির নিকট বন্ধক ছিল ৩০ সা’ যবের বিনিময়ে। (সহীহ বুখারী)। কিন্তু তাঁর কাছে এমন কিছুই ছিল না, যা দিয়ে তিনি লৌহবর্মটি ছাড়িয়ে আনতে পারেন। আর এভাবেই তিনি এই পৃথিবী থেকে চলে যান। (বায়হাকী)। অসুস্থ অবস্থায় ৪০ জন ক্রীতদাস মুক্ত করে দেন। ছয় অথবা সাত দিনার তাঁর কাছে ছিল, যা বিলিয়ে দেয়ার জন্য হযরত আয়েশা (রা.)-কে আদেশ করেন। (আস সীরাতুল হলাবিয়্যা-খ. ৩, পৃ. ৩৮১)।

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, যে সময় রাসূলে আকরাম (সা.) ইন্তেকাল করেন, সে সময় আমার ঘরে এমন কিছু ছিল না, যা জীবিত কোনো প্রাণী খেতে পারে। তবে সামান্য কিছু যব আমার তাকের ওপর রাখা ছিল। আমি এ থেকে কিছু খেয়েছি। অনেক দিন তা চলেছিল। একদিন তাও শেষ হয়ে যায়। (বুখারী : কিতাবুর রিকাক; মুসলিম : কিতাবু’য যুহদ)।

তিনি যেদিন চলে যান, সে দিনটি ছিল ভয়াবহতম ও অন্ধকার একটি দিন। সহ্য ক্ষমতার অতীত বিষাদময় পরীক্ষার একটি দিন। সমগ্র মানবজাতি ও মানবতার জন্য দিনটি ছিল বিরাট এক দুর্ঘটনা। যেমনিভাবে হযরতের আগমনের দিনটি ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল ও বরকতময় একটি দিন।

হযরত আনাস ও হযরত আবূ সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, যেদিন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় আগমন করেন, সেদিন মদীনার প্রতিটি বালুকণা তার আগমনে ধন্য, পূত-পবিত্র, আবেগাপ্লুত হয়ে উঠেছিল। আর যেদিন তিনি ইন্তেকাল করেন সেদিন সবকিছুই যেন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিল। উম্মু আয়মন কাঁদছিলেন।

লোকে তাঁর কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে জানান, আমি জানতাম আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেবেন। আমি কাঁদছি এ জন্য যে, ওহীর ধারাবাহিকতা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে আমাদের থেকে চিরতরে ছিন্ন হয়ে গেল। (আস সীরাতুন নাবাবিয়্যা, ইবনে কাসীর : খ. ৪, পৃ. ৫৪৪-৫৪৬)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন