শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

তুমি আল্লাহকে রক্ষা করো, আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করবেন

মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একদিন আমি (সওয়ারিতে) রাসূলের (সা.) পিছনে বসা ছিলাম, তিনি আমাকে বললেন: বাছা! তোমাকে কয়েকটি কথা শেখাচ্ছি; তুমি আল্লাহকে রক্ষা করো, আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করবেন। আল্লাহকে রক্ষা করো, তাকে তোমার সম্মুখে পাবে। তুমি যখন চাবে শুধু আল্লাহর কাছে চাবে, যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে শুধু আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে। জেনে রাখ, যদি গোটা জাতির সকলে মিলে তোমার কোনো উপকার করতে চায় তাহলেও এর বেশি কিছুই করতে পারবে না, যা আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। আর যদি সকলে মিলে তোমার কোনো ক্ষতি করতে চায় তাহলেও এর চেয়ে বেশি কিছু করতে পারবে না, যা আল্লাহ তোমার জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন। লেখনী তুলে ফেলা হয়েছে আর লেখা শুকিয়ে গেছে। (জামে তিরমিযী : ২৫১৬)।

বর্ণনাটি হাসান সহীহ (নির্ভরযোগ্য)। ইমাম তিরমিযী (রাহ.) হাদীসটি যে সনদে বর্ণনা করেছেন তা ছাড়া আরো বিভিন্ন সনদে তা বর্ণিত হয়েছে। তবে ইমাম তিরমিযী (রাহ.) উল্লিখিত সনদটিই সবচেয়ে শক্তিশালী। এই হাদীসে ঈমান ও ইয়াকীন শেখানো হয়েছে, যা ছোট-বড় সবার জানা দরকার এবং আপনজন প্রিয়জনদের শেখানো দরকার।

আল্লাহকে রক্ষা করো, আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করবেন। আল্লাহকে রক্ষা করা মানে কী? বান্দা কীভাবে আল্লাহকে রক্ষা করবে? আল্লাহ তো মহা পরাক্রমশালী। তিনি তো কারো মুখাপেক্ষী নন? আল্লাহকে রক্ষা করার অর্থ নিজের জীবনে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ রক্ষা করে চলা, তাঁর নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন না করা। এদেরই জন্য তাঁর প্রতিশ্রুতি, তিনি তাদের রক্ষা করবেন।

এখানে এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে, কর্তব্য-চেতনা। আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণ পেতে হলে বান্দাকে হতে হবে কর্তব্য-সচেতন। নিজ ‘কর্তব্য’ পালন না করে ‘অধিকার’ দাবি করা কিংবা ‘কর্ম’ না করে ‘প্রাপ্তির’ আশা করা অন্যায় ও নির্বুদ্ধিতা। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে এ শিক্ষা আছে। ইরশাদ হয়েছে : তোমরা আমার সাথে কৃত অঙ্গিকার পূরণ করো, আমি তোমাদের সাথে কৃত অঙ্গিকার পূরণ করব। (সূরা বাকারা : ৪০)। তোমরা আমাকে স্মরণ করো আমিও তোমাদের স্মরণ করব। (সূরা বাকারা : ১৫২)। তোমরা যদি আল্লাহর নুসরত করো তাহলে তিনি তোমাদের নুসরত করবেন। (সূরা মুহাম্মাদ : ৭)।

আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করবেন। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার বিশেষ সুরক্ষা ও কৃপাদৃষ্টি তোমার সাথে থাকবে। এই পৃথিবীতে আল্লাহর যে ব্যবস্থা তাতে জন্মের সাথে আছে মৃত্যু, লাভের সাথে ক্ষতি, সুখের সাথে দুখ, জগতের সকল মানুষ তাঁর এই নেযামের অধীন। সকলের জন্যই তিনি নির্ধারণ করে রেখেছেন আয়ু, জীবিকা ও অন্যান্য বিষয়। স্থূল দৃষ্টিতে এসব ক্ষেত্রে মুমিন-কাফিরের পার্থক্য দেখা না গেলেও বাস্তবে রয়েছে বিরাট পার্থক্য।

এ কারণে একের ক্ষেত্রে যে আয়ু হয় শাস্তি-পূর্ব অবকাশ, অন্যের ক্ষেত্রে তা চিরস্থায়ী শান্তির উপায়। একের সুখ-দুঃখ হয় পাপাচার ও নৈরাশ্যের কারণ, অন্যের ক্ষেত্রে তা হয় শোকর ও সবরের উপায়। একের জীবন কাটে মালিকের না-রাজি ও ভ্রুক্ষেপহীনতায় আর অন্য জনের তাঁর সুদৃষ্টি ও সুরক্ষায়। তো এই সুরক্ষা প্রধানত দ্বীন ও ঈমানের সুরক্ষা। আল্লাহর কাছে এরই মূল্য অধিক। বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রাহ. পাপাচারীদের সম্পর্কে বলেছেন : ওরা আল্লাহর কাছে হীন তাই তাঁর নাফরমান হতে পেরেছে। যদি তাঁর কাছে প্রিয় হতো তাহলে তিনি তাদের রক্ষা করতেন। (জামেউল উলূমি ওয়াল হিকাম, পৃ. ২৩৬)।

সুতরাং আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে এই সুরক্ষা লাভের প্রত্যাশী ও প্রয়াসী হতে হবে। নবী (সা.) এর প্রার্থনাসমূহে এ শিক্ষা রয়েছে।
সহীহ বুখারীতে হযরত আবু হুরায়রা রা.-এর সূত্রে ঘুমের সময়ের যে দুআ বর্ণিত হয়েছে তার একটি বাক্য : আপনি যদি (এই ঘুমে) আমার প্রাণ কবজ করেন তাহলে তাকে রহম করেন আর যদি ছেড়ে দেন তাহলে তাকে ঐসব বিষয়ে সুরক্ষা দান করেন, যে বিষয়ে আপনার নেককার বান্দাদের সুরক্ষা দিয়ে থাকেন। (সহীহ বুখারী : ৬৩২০)।

ওমর (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসে আছে, নবী (সা.) তাঁকে এই দুআ শিখিয়েছেন: ইয়া আল্লাহ! আমাকে ইসলামের মাধ্যমে সুরক্ষিত রাখুন যখন আমি বসা থাকি, ইসলামের মাধ্যমে সুরক্ষিত রাখুন যখন দাঁড়ানো থাকি, ইসলামের মাধ্যমে সুরক্ষিত রাখুন যখন শায়িত থাকি আর আমার সম্পর্কে কোনো দুশমন হিংসুকের প্রত্যাশা পূরণ করেন না। (সহীহ ইবনে হিব্বান : ৯৩৪)। সুতরাং আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর দৃষ্টিতে এই সুরক্ষাই বেশি প্রয়োজন ও বেশি মূল্যবান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন