শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

একের পর এক খুনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে উদ্বেগ

মাদকের টাকা ভাগাভাগি প্রত্যাবাসনের পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান : গত ৫ মাসে ২৫ মাঝিসহ ১২৪ হত্যাকাণ্ড

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিনিয়ত একের পর এক হামলা ও খুনের ঘটনায় বাড়ছে উদ্বেগ। এসবের মূল কারণ মাদকের টাকা ভাগাভাগি, প্রত্যাবাসনের পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান এবং একাধিক গ্রুপের প্রভাব বিস্তার। এসব জেরে গত মাসে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন ৯ রোহিঙ্গা । গত ৫ মাসে খুন হয়েছে ২৫ মাঝি । আর এপর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সর্বমোট খুন হয়েছে ১২৪ জন রোহিঙ্গা। এসব খুনের ঘটনায় চরম আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে সাধারণ রোহিঙ্গারা।

নিহতদের স্বজন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য মতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক, অপহরণ-মুক্তিপণ আদায়কারি অপরাধীদের ধরতে সহযোগিতা বা কোন মামলার স্বাক্ষী হলেই মুখোশধারীদের টার্গেট হয়ে এসব খুন সংঘটিত হচ্ছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ভোরে কুতুপালং ১৭ নম্বার ক্যাম্পের ২ রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহতরা হলেন, সি ব্লকের কেফায়েত উল্লাহর পুত্র আয়াত উল্লাহ ও মোহাম্মদ কাসিমের পুত্র ইয়াছিন।

১৪ এপিবিএন এর অধিনায়ক সৈয়দ হারুনুর রশিদ জানান, ভোরে ১৫ থেকে ২০ জনের একদল সন্ত্রাসী ১৭ নাম্বার ক্যাম্পের সি ব্লকে হামলা চালায় এসময় সন্ত্রাসীরা আয়াত উল্লাহ এবং ইয়াছিনকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে এসে গুলি করে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ইয়াছিনের মৃত্যু হয় এবং আয়াত উল্লাহকে এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত আয়াত উল্লাহ›র ভাই সালামত উল্লাহ জানান, তার ভাই ক্যাম্পে চাকরি করে। দুর্বৃত্তরা সবাই মুখোশধারী, কাউকে চেনা যায়নি। সবার হাতে অস্ত্র ছিল। দুর্বৃত্তরা তার ঘরের চারদিকে ঘিরে দরজা কেটে এবং বেঁড়া ভেঙে রাত সাড়ে ৩টার দিকে গুলি করে ভাইকে হত্যা করেছে। তিনি জানান, তার ভাই অপরাধিদের নানা তৎপরতার বিরুদ্ধে কথা বলতো, বিভিন্ন সময় প্রশাসনকে সহযোগিতা করতেন। তাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২৪ টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে গত ৫ মাসে ২৫ টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। আর এসব খুনের শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের বেশিভাগ ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতা ও স্বেচ্ছায় পাহারারত স্বেচ্ছাসেবক। যার মধ্যে গত মাসে ৯ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে গত বুধবার ক্যাম্প ১০ এ খুন হন মোহাম্মদ জসিম, একই দিন মো. সালাম নামের এক রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হন। গত ১৮ অক্টোবর ১৯ নম্বর ক্যাম্পে এ খুন হন সৈয়দ হোসেন। এর আগে তার পিতা জামাল হোসেন গত ১০ অক্টোবর খুন হয়। এ মামলার বাদি এবং আসামীদের ধরতে তৎপর থাকায় সৈয়দ হোসেনকে খুন করা হয় বলে জানান ৮ এপিবিএন এর সহকারি পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমদ।

১৫ অক্টোবর ক্যাম্প ১৩ এর মাঝি মোহাম্মদ আনোয়ার ও সাব মাঝি মোহাম্মদ ইউনুছকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১২ অক্টোবর হত্যা করা হয় ৯ এর সাব মাঝি মোহাম্মদ হোসেনকে। ৪ অক্টোবর এবিপিএনর সাথে সন্ত্রাসীদের গোলাগুলিতে নিহত হন তাসদিয়া আকতার নামের এক শিশু। এর আগে ৪ মাসে খুন হন ১৬ জন। এর মধ্যে ২২ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ। এরশাদ নামের একজন স্বেচ্ছাসেবক খুন হন। ২১ সেপ্টেম্বর খুন হন মোহাম্মদ জাফর নামের এক নেতা।

এছাড়া ১৮ সেপ্টেম্বর খুন হন আরেক স্বেচ্ছাসেবক মোহাম্মদ ইলিয়াস। ৯ আগস্ট দুই রোহিঙ্গা নেতা, ৮ আগস্ট টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক স্বেচ্ছাসেবক খুন হন। ১ আগস্ট একই ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক নেতার মৃত্যু হয় । গত ২২ জুন কথিত একটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের নেতা মোহাম্মদ শাহ এবং ১৫ জুন একই গ্রুপের সদস্য মো. সেলিম সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। ১৬ জুন রাতে উখিয়া ক্যাম্পে ২ স্বেচ্ছাসেবক, ১০ জুন কুতুপালংয়ের চার নম্বর ক্যাম্পের আরেক স্বেচ্ছাসেবক, ৯ জুন এক রোহিঙ্গা নেতা, ১ জুন খুন হন রোহিঙ্গা নেতা সানা উল্লাহ ও সোনা আলী।

৮ এপিবিএন এর সহকারি পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমদ জানান, ক্যাম্পে মাদক সহ অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বিরোধ সহ নানা কারণে খুনের ঘটনা হয়। এর পাশাপাশি অপরাধিদের তথ্য প্রদান বা বাধা প্রদান করলে প্রতিপক্ষ হিসেবে টার্গেট করেও খুন সহ হামলার ঘটনা ঘটে। উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী ইনকিলাবকে জানান, ক্যাম্পে প্রতিটি খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এপিবিএন ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতারে তৎপর রয়েছে। একই সঙ্গে মামলার তদন্তও চলছে।

এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুনসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে, গত শুক্রবার দিবাগত রাতে সমন্বিত অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। এতে একাধিক অ্যাডিশনাল এসপি, এএসপি ও পুলিশ পরিদর্শক নিয়োজিত ছিলেন বলে জানান ৮ এপিবিএনের সহকারি পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমদ। এসময় ক্যাম্পে বিভিন্ন স্থানে চিরুনি অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ড, মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৪১ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন