এই সময়ে ভাল সিনেমা নির্মিত হলেও সিনেমার গান দর্শকদের মনে তেমন দাগ কাটতে পারছে না। অথচ আমাদের দেশে গানই হচ্ছে, সিনেমার অন্যতম উপাদান। একটি গানই একটি সিনেমাকে দর্শকপ্রিয় করে তোলে। ষাট, সত্তর, আশি, নব্বই কিংবা নব্বই পরবর্তী সিনেমার অসংখ্য গান এখনো দর্শক মনে দাগ কেটে আছে। সেসব গান শুনলে তারা নস্টালজিক হয়ে পড়েন। গুনগুন করে গাইতে থাকেন। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ভাল গল্পের সিনেমা মুক্তি পেলেও বেশিরভাগের গান দর্শকের মনে দাগ কাটতে পারেনি। শুধু ‘হাওয়া’ সিনেমার ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি দর্শকের মধ্যে কিছুটা আলোড়ন তুলেছিল। এছাড়া অন্য সিনেমায় গান থাকলেও সেগুলো আলোড়ন তুলতে পারেনি।
অথচ দর্শক এখনো সিনেমার সোনালী সময়ের গানগুলো খুঁজেফিরে। কিছু উদাহরণ দিলে পাঠক একমত হবেন, এসব গান কালজয়ী হয়ে রয়েছে। ১৯৬৮ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার পরিচালনায় ‘এতোটুকু আশা’ সিনেমার ‘শুধু একবার বলে যাও আমি যে তোমার কতো প্রিয়’ গানটি আজও দর্শকের মনে গেঁথে আছে। এছাড়া ‘অনেক সাধের ময়না আমার বাঁধন ছিড়ে যায়’ ‘প্রেমের নাম বেদনা সে কথা বুঝিনি আগে’, ‘আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন’, ‘যদি বউ সাজোগো’, ‘অশ্রæ দিয়ে লেখা এ গান’, ‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা’, ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ইশারায় শিষ দিয়ে’, ‘আরে ও প্রাণের রাজা’, ‘অমন করে যেও নাকো তুমি’, ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনি’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘এমনও তো প্রেম হয়’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’, ‘বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে’, ‘আমার বুকের মধ্যখানে’, ‘তুমি আমার জীবন, আমি তোমার জীবন’, এমন আরও অসংখ্য গান রয়েছে যা দর্শক মনে এখনো আলোড়ন সৃষ্টি করে। এসব গানের সাফল্যের পেছনে শুধু কন্ঠশিল্পী, গীতিকার ও সুরকারদেরই অবদান রয়েছে তা কিন্তু নয়, গানগুলোতে যেসব নায়ক-নায়িকারা অভিনয় করেছেন তাদের অবদানও অসামান্য। বলা বাহুল্য, অনেক সময় দেখা গেছে, একটি গান সিনেমাকে ব্যবসা সফল করে তুলেছে। শুধু আমাদের দেশে নয়, বলিউড কিংবা তামিল অনেক সিনেমা গানের কারণে জনপ্রিয় হয়েছে। বর্তমানে আমাদের যেসব সিনেমা নির্মিত হচ্ছে, সেগুলোর গান দর্শকের মনে ধরছে না। বিশ্লেষকদের মতে, একটি সিনেমার প্রাণই হচ্ছে গান। একটি গানের জন্যই অনেক সময় একটি সিনেমা হিট হয়। একটা সময় সিনেমার গানের প্রতি বিশেষ নজর দিতেন নির্মাতারা। সিনেমার গল্পের সাথে মিল রেখে গীতিকার লিখতেন, সুরকার সুর করতেন, গায়ক গাইতেন। ৭০-৯০ দশকের সিনেমার গানগুলোর কথার গাঁথুনি ছিল শক্ত ও সাবলীল, যা সহজেই দর্শককে বিমোহিত করতে পারত। সহজ ভাষায় গানগুলো হতো, যা সব শ্রেণীর দর্শকের কাছে পৌঁছে যেত। বর্তমান সময়ে সিনেমার গানের কথার গভীরতা বলতে কিছু নেই। অনেক সময় গানের কথা এতটাই নি¤œমানের যে, সেগুলো রুচিশীল দর্শকের জন্য বিব্রতকর হয়ে দাঁড়ায়। এর কারণ সম্পর্কে বিশ্লেষকরা বলছেন, ভিনদেশী সংস্কৃতিকে অনুসরণ করে এগোতে গিয়ে সিনেমার গানকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। ফলে সিনেমা অনেকটা নিষ্প্রাণ হয়ে যাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন