ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আমেরিকা ও ইউরোপ। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মস্কো থেকে তেল ও গ্যাস আমদানির ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা। এতে যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে নজিরবিহীন মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি অক্টোবরে রেকর্ড ১১ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। দেশটিতে এমনকি চা, দুধ এবং চিনির মতো মৌলিক জিনিসের দামও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। দোকানে পণ্যের সামগ্রিক দাম এখন গত বছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এটি একটি রেকর্ড। তাজা খাবারের দাম এখন গত অক্টোবরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি, সেপ্টেম্বরে ১২ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছেছে। ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়ামের (বিআরসি)-এর প্রধান নির্বাহী হেলেন ডিকিনসন বলেছেন, ‘এটি ভোক্তাদের জন্য একটি কঠিন মাস ছিল যারা কেবল তাদের জ্বালানির বিল বৃদ্ধির সম্মুখীন হয়নি, বরং আরও ব্যয়বহুল শপিং বাস্কেটের সম্মুখীন হয়েছে।
ট্রাসেল ট্রাস্টের নীতি ও গবেষণার প্রধান রাচেল বুল বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্য জুড়ে মানুষ জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের ওপর মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবের সাথে লড়াই করছে, তবে কোনো সন্দেহ নেই যে, সর্বনিম্ন আয়ের লোকেরা সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো খাদ্য ব্যাঙ্কগুলো আমাদের বলছে যে জরুরি খাদ্যের প্রয়োজন খাদ্য পার্সেলের জন্য অনুদানকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে কারণ জীবনযাত্রার সঙ্ককটের ব্যয় সমর্থনের জন্য দাতব্য প্রতিষ্ঠানের দিকে যেতে বাধ্য হওয়া লোকের সংখ্যা তীব্রহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
রেডিও ফ্রান্স জানিয়েছে, ফ্রেঞ্চ কনফেডারেশন অব স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজের (সিপিএমই) গবেষণায় দেখা গেছে, এসব সংস্থার মধ্যে মাত্র এক তৃতীয়াংশ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সরকারের সহায়তার প্রতিশ্রুতির আগে শতকরা মাত্র ৯ ভাগ কোম্পানির পরিচালক কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। শুধু বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে অক্ষমতার কারণে তা বন্ধ করার চিন্তা করেন তারা। সূত্র : দ্য ইন্ডিপেন্ডেট।
ক্ষুধার চেয়েও বড় আতঙ্ক শীত : এদিকে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ব্রিটিশদের কাছে ক্ষুধার চেয়েও বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে শীত। গ্যাস ও জ্বালানি সঙ্কটের দেশে আসন্ন শীতে কী বেছে নেবেন ব্রিটিশরা- খাদ্য নাকি উষ্ণতা - এ নিয়েও রয়েছে বড় সংশয়। চলমান সঙ্কটে বিনামূল্যে খাদ্য সংগ্রহ করতে পারায় দরিদ্র-মধ্যবিত্তরা এখন ‘ফুডব্যাংক’-কে ‘জীবন রক্ষাকারী’ বলেও অভিহিত করছেন।
চলমান খাদ্য সঙ্কটের মধ্যেই চমকে ওঠার মতো তথ্য প্রকাশ করল ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম কোম্পানি (বিপি)। ২৮ অক্টোবর এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, আর মাত্র ৯ দিনের গ্যাস মজুত আছে ব্রিটেনে। সে হিসাবে আজ থেকে আর মাত্র ৩দিন চলার মতো গ্যাস আছে ব্রিটেনে। বিপি জানিয়েছিল, ব্রিটেনের গ্যাসের মজুত একেবারে শেষের দিকে। এভাবে গ্যাসের মজুদ কমে যাওয়ায় তা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় তারা বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘রাফ’ নামক একটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে পুরোপুরি সফল হলে গ্যাস মজুত ৫০ শতাংশ বাড়বে। তবে এতেও শীতকালে গ্যাস সঙ্কট পুরোপুরি নিরসন হবে না। ইউরোপের অন্যান্য দেশের অবস্থাও তেমন সুবিধাজনক নয়। জার্মানিতে ৮০ দিনের জন্য গ্যাস মজুত রয়েছে। এছাড়া ফ্রান্সের ৯৭ দিনের এবং নেদারল্যান্ডসের রয়েছে ১১৮ দিনের গ্যাস। এ অবস্থায় আগামী শীত নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে ইউরোপের প্রায় সব দেশ। ব্রিটেনের ন্যাশনাল গ্রিড ইলেকট্রিসিটি সিস্টেম অপারেটর (ইএসও) আগেই জানিয়েছে, এ শীতে গ্যাসের ঘাটতির কারণে দেশজুড়ে তিন ঘণ্টার লোডশেডিং দেওয়া হতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন